এই মৌসুমী সেই মৌসুমী

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০২২, ১১:০৭ | প্রকাশিত : ২২ জানুয়ারি ২০২২, ১১:০০

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ২০২২-২০২৪ মেয়াদের নির্বাচনের অন্যতম আলোচিত নাম চিত্রনায়িকা মৌসুমী। যিনি এবার মিশা সওদাগর ও জায়েদ খানদের প্যানেল থেকে কার্যনির্বাহী সদস্য পদে লড়ছেন। তাদের সঙ্গে কাধে কাধ মিলিয়ে, হাতে হাত রেখে ভোটের প্রচারও করে বেড়াচ্ছেন। অথচ গত ২০১৯-২০২১ মেয়াদের নির্বাচনে এই মিশা-জায়েদ প্যানেলের সঙ্গে মৌসুমীর ছিল দা-কুমড়া সম্পর্ক।

সেবার স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে সভাপতি পদে নির্বাচন করেছিলেন একাধিক জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই নায়িকা। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন মিশা সওদাগর। সে সময় ভোটের আগে মিশা-জায়েদ প্যানেলকে নানা ভাবে ধুয়ে দিয়েছিলেন মৌসুমী। করেছিলেন একঝুঁড়ি অভিযোগ। চলচ্চিত্রের যে সকল শিল্পী ইতোপূর্বে ভোটাধিকার হারিয়েছেন, তাদের মধ্যে মৌসুমীর ছোটবোন ইরিন জামান একজন।

এ নিয়ে সে সময় মিশা-জায়েদদের তোপ দেঁগেছিলেন মৌসুমী। করেছিলেন প্রতিবাদ ও নিন্দা। শালী ইরিন জামানের হয়ে প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলেন চিত্রনায়ক ওমর সানীও। তিনিও ধুয়ে দিয়েছিলেন মিশা-জায়েদদের। কিন্তু সেবার এত কিছু করেও ভাগ্যদেবী সহায় হয়নি মৌসুমীর জন্য। সভাপতি পদে তিনি হেরে যান খল অভিনেতা মিশা সওদাগরের কাছে।

ভোটে হারার পরও নানা সময়ে মিশা-জায়েদদের বিষদগার করতে দেখা গেছে মৌসুমী ও তার স্বামী ওমর সানীকে। কিন্তু হঠাৎই বদলে গেছে চিত্র। যারা ছিলেন এতদিন চোখের বালি, তাদের প্যানেল থেকেই এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন মৌসুমী। তাতে পূর্ণ সমর্থন রয়েছে ওমর সানীর। কিন্তু হঠাৎ কী এমন ঘটল? যার কারণে মিশা-জায়েদ প্যানেলের হয়ে ভোটের মাঠে মৌসুমী?

এ প্রসঙ্গে নায়িকা বলেন, একজন অভিনেতার অনুরোধে তিনি মিশা-জায়েদ প্যানেলের হয়ে নির্বাচন করছেন। সেই ব্যক্তিটি হলেন একসময়ের ভয়ঙ্কর খল অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল, যিনি এবার মিশা-জায়েদ প্যানেল থেকে সহসভাপতি পদে লড়ছেন। গতবারও তিনি একই প্যানেল থেকে একই পদে নির্বাচন করে জয়ী হয়েছিলেন। তার অনুরোধেই নাকি এই প্যানেলে যুক্ত হয়েছেন মৌসুমী।

অভিনেত্রীর কথায়, ‘ডিপজল ভাই আর আমি একসঙ্গে বেশকিছু ছবিতে অভিনয় করেছি। নির্বাচনের আগে মাঝেমধ্যে তিনি আমার বাসায় আসতেন। আমাকে প্রার্থী হওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। আমি তার অনুরোধেই নির্বাচনে এসেছি।’

এছাড়া একসময় যে মিশা-জায়েদ ছিল দুচোখের বিষ, তাদেরও ভূয়সী প্রশংসা করেন নায়িকা। বলেন, ‘করোনার মধ্যে মিশা ও জায়েদ অনেক ভালো কাজ করেছেন। আমি তাদের কর্মকাণ্ড দেখেছি। তারা ভালো কাজ করেছেন বলেই তাদের প্যানেলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি।’

মৌসুমীর সুরে কথা বলেছেন তার স্বামী ওমর সানীও। অভিনেতা বলেন, ‘আমি আর মৌসুমী সম্প্রতি ‘সোনার চর’ নামে একটি ছবিতে কাজ করি। সেখানেও জাযেদ খানও অভিনয় করে। শুটিং করতে গিয়ে তার সঙ্গে অনেক কথা হয় এবং তাকে আমরা সঠিকভাবে বুঝতে পারি। তাছাড়া করোনার মধ্যে মিশা-জায়েদরা যে কাজ করেছে, তা প্রশংসার যোগ্য। সেগুলো বিচার করেই মৌসুমী তাদের সঙ্গে নির্বাচন করছে।’

ওমর সানী আরও বলেন, ‘২০১৯-২১ মেয়াদে ফেরদৌস, রিয়াজ, সায়মন, পপিদের নিয়ে মৌসুমীর প্যানেল হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা পরে যার যার মতো করে চলে গেছে। এবার, অর্থাৎ ২০২২-২০২৪ মেয়াদে যখন তারাই আবার প্যানেল করেছে, তখন মৌসুমীর সঙ্গে তারা কথা বলতে আসেনি। মিশা-জায়েদ প্যানেল থেকে যেহেতু তাকে অনুরোধ করেছে, তাই তাদের প্রার্থী হয়েছে।’

তবে মৌসুমীর এভাবে ভোল বদলে খুশি নন তার অনুরাগীরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই এর সমালোচনা করেছেন। অভিনেত্রীর এমন পরিবর্তনে অবাক হয়েছেন তার সহকর্মী শিল্পীরা, এমনকী, বেশ কয়েকজন পরিচালকও। তাদের মধ্যে অন্যতম নির্মাতা মালেক আফসারী। সম্প্রতি তিনি ফেসবুকের একটি লাইভে মৌসুমীকে নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

একটি ঘটনার উল্লেখ করে মালেক আফসারী জানান, গত নির্বাচনে অভিনেতা ড্যানিরাজ মৌসুমীকে শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত করেছিলেন বলে অভিযোগ তুলেছিলেন স্বয়ং নায়িকাই। তিনি এর বিচারও চেয়েছিলেন। সেবার মিশা-জায়েদ প্যানেল থেকেই কার্যনির্বাহী পদে নির্বাচন করেছিলেন ড্যানিরাজ। অভিযোগ ওঠে, একটি বিষয় নিয়ে তর্কাতর্কির জেরে এই খল অভিনেতা নাকি মৌসুমীর গায়ে পর্যন্ত হাত তুলেছিলেন।

মালেক আফসারি প্রশ্ন তোলেন, সেই প্যানেলের হয়েই কীভাবে নির্বাচন করে মৌসুমী? কথায় কথায় নির্মাতা মৌসুমীর ছোটবোন ইরিন জামানের ভোটাধিকার হারানোর প্রসঙ্গও টেনে আনেন। বলেন, ‘ইরিন আমার ‘উল্টাপাল্টা’ ছবির নায়িকা। ও ভোটাধিকার হারানোর পর মৌসুমী আন্দোলন করেছিল। ওমর সানীও প্রতিবাদ করেছিল। মিশা-জায়েদদের দিকে আঙুল তুলেছিল। অথচ এবার তাদের হয়েই নির্বাচন করছে।’

মালেক আফসারী জানান, কিছুদিন আগে ‘সোনার চর’ নামে একটি ছবিতে জায়েদ খানের সঙ্গে অভিনয় করেন মৌসুমী। সেই ছবির শুটিং স্পটের একটি স্থিরচিত্রে দেখা যায়, মৌসুমী এবং জায়েদ খান একে অন্যকে মিষ্টি খাইয়ে দিচ্ছেন। যেটা শুটিংয়ের কোনো অংশ নয়। নির্মাতা বলেন, ‘তখনই বুঝেছিলাম এবার উল্টাপাল্টা কিছু হতে চলেছে। নির্বাচনের আগে দেখলামও তাই।’

মালেক আফসারী সমালোচনা করেন মৌসুমীর পদ নিয়েও। তার মতো এত বড় একজন তারকা কীভাবে কার্যনর্বিাহী পদে লড়ছেন, এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন বহু হিট ছবির এই নির্মাতা। বলেন, নির্বাচনের আগে শুনেছিলাম, মিশা সওদাগর এবার নির্বাচন করবেন না। ভেবেছিলাম, মৌসুমী হয়তো জায়েদদের প্যানেল থেকে সভাপদি পদে দাঁড়াবে। কিন্তু পরে তো দেখলাম ঘটনা অন্যকিছু।’

যদিও কে কী মনে করছেন, তা নিয়ে বিচলিত নন মৌসুমী। আপাতত তিনি নির্বাচনী প্রচার নিয়ে ব্যস্ত। প্রতিদিনই নিয়ম করে এফডিসিতে যাচ্ছেন, ভোটারদের সঙ্গে দেখা করছেন, কথা বলছেন, নানা প্রতিশ্রুতিও দিচ্ছেন। মৌসমীর সঙ্গে ভোটের প্রচারে নেমেছেন স্বামী ওমর সানী, ছেলে স্বাধীন এবং পুত্রবধূ আয়েশাও। বলতে গেলে এবার কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন ‘প্রিয়দর্শিনী’।

এবারের নির্বাচনে মৌসমী ছাড়াও মিশা-জায়েদদের প্যানেলে রয়েছেন একঝাঁক তারকা। তারা হলেন- চিত্রনায়ক রুবেল, সুব্রত, আলেক জান্ডার বো, জয় চৌধুরী, জ্যাকি আলমগীর, জাকির হোসেন, ফরহাদ হোসেন, রোজিনা, অঞ্জনা, সুচরিতা, অরুণা বিশ্বাস, আলীরাজ, আসিফ ইকবাল, বাপ্পারাজ, নাদের খান, চুন্নু ও হাসান জাহাঙ্গীর।

এদিকে, ইলিয়াস কাঞ্চনকে সভাপতি করে শক্তিশালী একটি প্যানেল গড়েছেন চিত্রনায়িকা নিপুণ। তাদের সঙ্গেও রয়েছেন চিত্রনায়ক রিয়াজ, ডি এ তায়েব, সায়মন সাদিক, শাহনূর, নিরব হোসেন, ইমন, অমিত হাসান, ফেরদৌস, শাকিল খান, নানা শাহ, আফজাল শরীফ, জেসমীন, কেয়া ও পরীমনির মতো তারকারা। কাজেই এবার জমপেশ লড়াই হবে বলে মত চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের।

ঢাকাটাইমস/২২জানুয়ারি/এএইচ

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিনোদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :