মাদকের ট্রানজিট ভৈরব!

রাজীবুল হাসান, ভৈরব
 | প্রকাশিত : ২২ জানুয়ারি ২০২২, ১৬:০০

মাদক চালান সরবরাহের ট্রানজিট রোড হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে কিশোরগঞ্জের ভৈরব এলাকা। ভৈরবে গত দুই বছরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে প্রায় ২০০ মাদকের গাড়ি জব্দ হয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ভৈরব থানা ও র‌্যাব ক্যাম্পের মাঠে এখনও পড়ে আছে শতাধিক মাদকের গাড়ি। এসব গাড়ির মধ্যে রয়েছে প্রাইভেটকার, পিকআপ ভ্যান, ট্রাক, সিএনজি অটোরিকশা, কন্টেইনটর, মটরসাইকেল ইত্যাদি। আটক গাড়িগুলোর বেশির ভাগই রেজিস্ট্রেশন নেই। রেজিস্ট্রেশন থাকা গাড়ির মালিকরা আদালতের অনুমতি নিয়ে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।

ভৈরবের আইনশৃঙ্খলা, মাদক, নারী নির্যাতন, বাল্য বিয়ে, ইভটিজিং নিয়ে ভৈরবের বিভিন্ন সভায় সাংবাদিক, সরকারি দলের নেতা, পৌর কাউন্সিলরসহ সুশীল সমাজের নেতারা মাদকের ভয়াবহতার কথা তুলে ধরেন।

বিভিন্ন মাদকদ্রব্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কসবা, আখাউড়া, বিজয়নগর, হবিগঞ্জ সিলেটের সীমান্ত দিয়ে ভৈরব হয়ে প্রতিদিন বানের পানির মতো মাদক পাচার হয় ঢাকায়। সড়কপথ, রেলপথ ও নৌপথ তিনপথেই মাদক পাচার হয় এমন অভিযোগ এলাকাবাসী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। তবে সংশ্লিষ্টদের মতে মাদকের কিছু অংশ পাচারের সময় ভৈরবে ধরা পড়লেও বেশির ভাগ মাদকের গাড়ি নিরাপদে চলে যায় রাজধানী শহর ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদীসহ দেশের বড় শহরগুলোতে। তবে মাদকের কিছু অংশ ভৈরবে আমদানি হয়, যা স্থানীয় নেশাখোরদের চাহিদা মেটায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভৈরব মাদকের ট্রানজিট রোড হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার সুবিধা গড়ে উঠেছে মাদক কারবার। এসব ব্যবসা পৌর শহরের বিভিন্ন জায়গাসহ বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে বিস্তার করছে। এর মধ্যে বেশি বিস্তার হয়েছে উপজেলার শ্রীনগর গ্রামে মাদকের পাইকারী বেচাকেনার বড় হাট। প্রতিদিন এই গ্রামে লাখ লাখ টাকার মাদক কেনাবেচার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া কালিকাপ্রসাদ, শিমুলকান্দি গ্রামেও পাইকারী মাদক বেচা হয় বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।

এ ছাড়া পৌর শহরের পঞ্চবটি, কমলপুর, জগনাথপুর, লক্ষীপুর, শম্ভুপুর, গাছতলাঘাট, আমলাপাড়া, চন্ডিবের এলাকাসহ বিভিন্ন স্পটে শতাধিক বিক্রয় কেন্দ্রে খুচরা মাদক বেচাকেনার অভিযোগ রয়েছে। এসব মাদকদ্রব্যের মধ্যে রয়েছে ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাঁজা ও বিয়ার। তবে এসব বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নেই কোনো অভিযান তৎপরতা।

তবে ট্রানজিট পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের মাধ্যমে মাদক চালানের গাড়িসহ মাদক উদ্ধার করে। এসব অভিযানে ভৈরব থানায় প্রতি মাসে কমপক্ষে ৫০-৬০টি মাদকের মামলা হয় এবং মাদক কারবারি গ্রেপ্তার হয় শতাধিক। গাড়ি আটক হয় পাঁচ-সাতটি।

এ বিষয়ে ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, এই থানায় যোগদান করেছি মাত্র দেড়মাস হলো। এরই মধ্যে প্রতিদিন মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি। শহরে মাদক বেচাকেনা কমে গেছে বলে তিনি দাবি করেন। তবে ভৈরব মাদকের ট্রানজিট রোড হিসেবে ব্যবহারের বিষয়টি আমি জেনেছি। এরপর সড়ক পথে মাদক কারবারিরা যাতে মাদক পাচার করতে না পারে সেই চেষ্টা করছি। মাদক চালান ধরতে সড়ক, রেল, নৌপথে নিয়মতি অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

ভৈরব র‌্যাব ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিউদ্দিন মোহাম্মদ যোবায়ের বলেন, ভৈরবে মাদক নিয়ন্ত্রণে প্রতিনিয়ত সড়কে অভিযান পরিচালনা করে মাদক চালানসহ গাড়ি আটক করা হয়। মাদক কারবারিরা সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে মাদক সংগ্রহ করে সড়কপথ, রেলপথ ও নৌপথে ভৈরবের উপর দিয়ে নিয়মিত মাদক চালান করে থাকে।

র‌্যাব কর্মকর্তা যোবায়ের বলেন, মাদক কারবারিরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রোডে মাদক পাচার করে। বিশেষ করে সড়ক পথগুলো রাতে নিরাপদ মনে করে রাতেই বেশি পাচার হয় বলে তিনি জানান।

(ঢাকাটাইমস/২২জানুয়ারি/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :