প্রোটিনের খনি সয়াবিন বীজ

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৩ জানুয়ারি ২০২২, ১০:৩২

পুষ্টিকর এবং প্রোটিন জাতীয় খাদ্য অনেকখানি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। বিশেষত করোনা অতিমারি সংকটকালে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলা সবার প্রয়োজন। তাই প্রোটিন জাতীয় খাবার গ্রহণ এবং পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়া সুস্বাস্থ্যের পক্ষে উপযোগী।

প্রাণিজ প্রোটিন এর প্রয়োজনীয়তা যেমন রয়েছে তেমনি উদ্ভিজ্জ প্রোটিন এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। প্রাণিজ প্রোটিন আর্থিক মূল্য এতটাই বেশি যে সবার পক্ষে কেনা সম্ভব হয়ে ওঠে না। আবার এর কতগুলো সমস্যা ও হানিকর দিক আছে। কিন্তু উদ্ভিজ্জ প্রোটিন খাদ্য দ্রব্য ছোট-বড়,বৃদ্ধ-বৃদ্ধা যেকোনো বয়সে তা সহজেই গ্রহণ করতে পারে। এইরকম এক ক্যালরি যুক্ত উচ্চ প্রোটিন ও পুষ্টিকর খাদ্য হল সয়াবিন জাতীয় খাবার। যেমন সয়া দুধ, পনির, ছানা, দই ইত্যাদি।

শরীরের পেশি গঠনে যে ৯টি অত্যাবশ্যকীয় অ্যামিনো অ্যাসিড প্রয়োজন হয়, এর সব কটিই আছে দারুণ পুষ্টিকর সয়াবিনে। সয়াবিন পৃথিবীর একটি অন্যতম প্রধান ফসল। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, বিশেষ করে চীনে উদ্ভূত হয়েছে। এটা তারপর ধীরে ধীরে জাপান এবং বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে, সয়াবিন সব জায়গায় চাষ করা হচ্ছে। বাংলাদেশে সয়াবিন ফসল হিসেবে এখনও জনপ্রিয় হয়ে ওঠেনি কিন্তু সয়াবিন তেল ভোজ্যতেল হিসেবে খুবই জনপ্রিয়।

সয়াবিন ভোজ্য বীজ যা শুঁটি জাতির অন্তর্গত। যার বৈজ্ঞানিক নাম গ্লিসাইন ম্যাক্স। সয়াবিন গাছে এগুলো উৎপন্ন হয় যার ক্ষুদ্র আবরণ (খোসা) আছে যার মধ্যে এই বীজগুলো থাকে। এই বীজগুলো আকারে গোলাকার এবং যখন কাঁচা থাকে সেগুলোর রং সবুজ এবং যখন সেগুলো শুকিয়ে যায় তখন হলুদ এবং বাদামী রঙে পরিবর্তিত হয়।

ভিটামিন ও প্রোটিনে ভরপুর এই খাবার আদতে সুস্বাস্থ্যের চাবিকাঠি। আজকাল ডায়াবেটিকদেরও নিশ্চিন্তে সয়াবিন খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। আসলে এক বাটি ডালের চেয়েও বেশি প্রোটিন রয়েছে এক বাটি সয়াবিনে। যে কোনও প্রাণিজ প্রোটিনের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে সয়াবিন। তাই নিরামিষাশীদের ডায়েটে এই খাদ্য রাখার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।

যদিও বলা হয় সয়াবিনের আদি জন্ম পূর্ব এশিয়ায়। তবে এখন দক্ষিণ ও উত্তর আমেরিকাতেও জন্মায়। মজার বিষয় হলো, সয়াবিন খাওয়ার ধরন কিন্তু একেক দেশে একেক ধরন। এশিয়ায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সয়াবিন আস্ত খাওয়া হয়। কিন্তু বাইরের দেশগুলোতে সয়া অনেক বেশি প্রসেস করেই খাওয়ার প্রচলন দেখা যায়। সয়াবিনের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো এটি থেকে শুধু এক ধরনের পণ্য হয় না। বরং ময়দা, সয়া প্রোটিন, টফু, সয়া দুধ, সয়া সস, সয়াবিন তেলসহ আরও অনেক রকম পণ্য উৎপন্ন হয়।

সয়াবিন হয় তিন রকম, যা ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে অনেকে খেয়ে থাকেন। সবুজ রঙের সয়াবিন সেদ্ধ করে শুধু খাওয়া যায়। আবার সালাদ, তরকারি বা স্যুপে দিয়েও অনেকে খেতে পছন্দ করেন। হলুদ সয়াবিন থকে সয়া দুধ, টফু বা বেকিংয়ের জন্য ময়দা তৈরি করা হয়ে থাকে। আর একধরনের সয়াবিন হয় কালো রঙের। এটি এশিয়ায় ট্র্যাডিশনাল খাবারে ব্যবহার করা হয়।

নিরামিষাশীদের জন্য সয়াবিন কিন্তু প্রোটিন। তার মানে সয়া থেকে মাছ, মাংস ও ডিমের প্রোটিন পাওয়া যায়। এ ছাড়া সয়াবিনে থাকে ৯ ধরনের অ্যামিনো অ্যাসিড, যা পেশি ও হাড়ের শক্তি বাড়ায়। আমাদের শরীর নিজ থেকেই এই উপাদানগুলো তৈরি করতে পারে না। তাই যারা আমিষাশী তারা মাছ, মাংস ও ডিম থেকে এই চাহিদা পূরণ করে থাকেন। এছাড়া শরীরের পেশি গঠনে যে ৯টি অত্যাবশ্যকীয় অ্যামিনো অ্যাসিড প্রয়োজন হয় এর সব কটিই আছে সয়াবিনে।

সয়াবিন বীজে প্রায় সমস্ত প্রকার ভিটামিন কম বেশি পাওয়া যায় তাছাড়া ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাসের মতো খনিজ পাওয়া যায়। সয়াবিন জাতীয় খাদ্যের মধ্যে কার্বোহাইড্রেট প্রায় ৩০%, ফ্যাট প্রায় ২০%, প্রোটিন প্রায় ৩৫%,জলীয় উপাদান প্রায় ৮% এবং অন্যান্য উপাদানগুলি রয়েছে। একদিকে প্রোটিন জাতীয় পুষ্টিকর খাদ্য অন্যদিকে মাঝারি থেকে উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাদ্য যা শিশুদের বৃদ্ধিতে যথেষ্ট প্রয়োজনীতা আছে। দুই কাপ সয়াবিন বীজ থেকে প্রায় ৩৬০ ক্যালরি শক্তি থাকে যা প্রতিদিন এক থেকে দুই'বার নেওয়া যেতে পারে।

সয়াবিনে থাকা মোট ফ্যাটের শুধু ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ফ্যাট স্যাচুরেটেড। অন্যদিকে গরু বা খাসির মাংসে এই মাত্রা অনেক বেশি; যা হার্টের অনেক বেশি ক্ষতি করে থাকে। তাই বলা যায় সয়াবিনের তৈরি টফু মাংসের বিভিন্ন খাবার থেকে হার্টের জন্য অনেক বেশি উপকারী।

অন্য যেকোনো সবজির মতো সয়াবিনও প্রাকৃতিকভাবে কোলেস্টেরলমুক্ত। নানা গবেষণায় দেখা গেছে, সয়াবিন শরীরের ৪ থেকে ৬ শতাংশ খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। তাই বোঝাই যাচ্ছে সয়াবিন হতে পারে একটি স্বাস্থ্যকর পছন্দ।

এক কাপ সয়াবিনে ১০ গ্রাম ফাইবার আছে। যেখানে সমপরিমাণ মাছ, মাংস ও ডিম ফাইবারের পরিমাণ খুবই কম। এ ছাড়া সয়াবিন আরও যে উপকার করে তা হলো অন্য খাবার থেকে যে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল পাই, তা কমাতে সাহায্য করে।

এক কাপ সয়াবিনে থাকে ৮৮৬ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম। একটি মাঝারি আকারের কলার তুলনায় এই পরিমাণটি দ্বিগুণ। এ ছাড়া শরীরের সারা দিনের চাহিদার এক-তৃতীয়াংশ পূরণ করতে পারে এই এক কাপ সয়াবিন।

ব্লাডপ্রেশার কমাতে আপনার প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় যুক্ত করা যেতে পারে সয়াবিন; যা স্ট্রোকের আশঙ্কা ১৪ শতাংশ কমায়।

পুরুষদের থেকে নারীরা হাড়ের সমস্যায় ভোগেন অনেক বেশি। চিকিৎসকেরা হাড়ের চিকিৎসায় সয়া দিয়ে তৈরি খাবারগুলো খেতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এমনকি অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের শরীরের হাড় মজবুত করতে দারুণভাবে কাজ করে সয়াবিন।

শিশু বয়সে বা টিনএজার থাকতে অনেক বেশি সয়াবিন খেলে তা নারীদের ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় প্রায় অর্ধেক। এমনকি প্রাপ্তবয়স্করাও যদি প্রচুর পরিমাণে সয়াবিন খান তাদের ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি কমবে। বিজ্ঞানীরা বলেন, সয়াতে থাকা ইসোফ্লাভন ও ফিটনউট্রিয়েন্ট ক্যানসার টিউমার কমাতে সাহায্য করে।

সারা পৃথিবীতে দ্বিতীয় সাধারণ একটি ক্যানসার হলো প্রোস্টেট ক্যানসার। এশিয়ার যে দেশগুলোতে বেশি সয়াবিন খাওয়া হয় তারা এই ক্যানসারে কম ভোগেন। বিজ্ঞানীরা বলেন, সয়াবিনের উপকারী উপাদান টিউমার গ্রোথ কমাতে সাহায্য করে।

সয়াবিনের বীজ থেকে যেভাবে দুধ বানাবেন

১ কিলোগ্রাম শুকনো সয়াবিন বীজ অথবা দানা তিন থেকে চার ঘণ্টা জলে ভিজিয়ে রেখে তারপর জল থেকে তুলে হালকা শুকনো করে নিতে হবে। এরপর ও'ই ভেজানো বীজ মিক্সার গ্রাইন্ডার মেশিনে'র সাহায্যে অথবা শিলনোড়া'র মাধ্যমে পেস্ট বা মেখে নিয়ে জল মিশিয়ে ছেঁকে দুধ বের করে নিতে হবে, যা থেকে ৫ থেকে ৬ লিটার দুধ উৎপন্ন হবে। ৬ লিটার দুধ'কে তিন ভাগে ভাগ করে নিতে হবে। একভাগ দই ,একভাগ ছানা বা পনির ও আরেক ভাগ পানীয় দুধের জন্য। দই তৈরী র জন্য লিটার অনুপাতে ১০০গ্রাম গুড়ো দুধ মিশিয়ে চার থেকে পাঁচটি এলাচ দানা দিয়ে এবং প্রয়োজনমতো চিনি দিয়ে ফুটিয়ে দইয়ের সাজা দিয়ে মাটির ভাঁড়ে অথবা যে কোন পাত্রে প্রস্তুত করা যাবে।

অন্যদিকে গরম সোয়াদুধে লেবু অথবা ক্যালসিয়াম ল্যাকটেট পাউডার মিশিয়ে ছানা প্রস্তুত করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে প্রতি লিটার সোয়াদুধ থেকে ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম ছানা উৎপন্ন হয়। অর্থাৎ দু'লিটার থেকে প্রায় ৮০০গ্রাম থেকে এক কিলোগ্রাম ছানা বা পনির প্রস্তুত করা যাবে। ছানার বা পনির 'কে সুস্বাদু করার জন্য সামান্য এলাচ ও অল্প চিনি মিশিয়ে তা খাওয়া যেতে পারে।

(ঢাকাটাইমস/২৩জানুয়ারি/আরজেড/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :