তবে কি ড. কামালের উচ্চাকাঙ্ক্ষাই আ.লীগ ছাড়ার কারণ?

হাবিবুল্লাহ ফাহাদ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০২২, ২১:০৮ | প্রকাশিত : ২৩ জানুয়ারি ২০২২, ২১:০৩

ড. কামাল হোসেন। দেশের রাজনীতিতে অতি পরিচিত এক মুখ। স্বাধীন দেশের প্রথম সংবিধানের প্রসঙ্গ এলেই আসে কামাল হোসেনের নাম। ছিলেন বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য। রাজনীতিতে তার যাত্রা হয়েছিল মহানায়কের হাত ধরেই। বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সদস্যও ছিলেন। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলী পদে ছিলেন প্রবীণ এই আইনজ্ঞ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন নৌকার। কিন্তু হেরে যান রাজধানীর মিরপুরের একটি আসনে লড়ে। এরপর নানা ঘটন-অঘটনের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে যান আওয়ামী লীগ থেকে। গড়েন নতুন দল।

একদিকে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য, বঙ্গবন্ধু-কন্যা শেখ হাসিনাও তাকে মান্য করতেন। তাহলে কেন আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন ড. কামাল হোসেন? তবে কি রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাই আওয়ামী লীগ ছাড়ার কারণ? কী ছিল তা? দলীয় প্রধান হয়ে বড় ক্ষমতার স্বপ্ন কি দেখতেন তিনি? তারই বহিঃপ্রকাশ কি দেখিয়েছিলেন ১৭ বছর পর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনে? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কথায় ঘুরে-ফিরে উঁকি দেয় নানা প্রশ্ন।

১৯৭০ সালে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন ড. কামাল। ১৯৭২ সালে আইনমন্ত্রী এবং ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচন হন।

সব ঠিকঠাকই চলছিল। বিরোধ বাঁধে ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর। ওই নির্বাচনে দলীয়ভাবে পরাজিত হয় আওয়ামী লীগ্। দলের প্রধান নির্বাচনে সূক্ষ্ম কারচুপির অভিযোগ তোলেন। কিন্তু বিস্ময়করভাবে এই অভিযোগের বিপরীতে বক্তব্য দেন ড. কামাল। অথচ তিনিও ওই নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে লড়েন এবং হেরে যান। ওই বক্তব্যের পরই বিপাকে পড়েন তিনি। নিজ দলের নেতাকর্মীদের রোষানলে পড়েন। শিকার হন হামলারও। তখন থেকেই দূরত্ব তৈরি হয় দলীয় প্রধানের সঙ্গে। পরে দলীয় কাউন্সিলে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পদ হারান ড. কামাল। তাকে রাখা হয় উপদেষ্টা পরিষদে। কিন্তু আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তিনি আর সক্রিয় হননি। বরং গড়ে তোলেন ‘অরাজনৈতিক সংগঠন’ গণতান্ত্রিক ফোরাম। ১৯৯৩ সালের ২৯ আগস্ট আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দেন। ওই দিনই গণতান্ত্রিক ফোরামের ‘তান্ত্রিক’ শব্দ ফেলে দিয়ে গণফোরাম নামে ঘোষিত দলের প্রধান হন ড. কামাল হোসেন।

আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে আসার পর সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারবিরোধী সবচেয়ে বড় জোটেরও নেতৃত্ব দেন ড. কামাল। বিএনপি, জেএসডি, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, নাগরিক ঐক্যসহ বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে গঠন করেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। কথা ছিল এই ঐক্যফ্রন্ট ক্ষমতায় গেলে সরকার গঠনে বড় ভূমিকা থাকবে তার। সরকারপ্রধান হওয়ার স্বপ্নও ছিল এর পেছনে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যে উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্য তিনি আওয়ামী লীগ ছেড়ে এসেছেন, দীর্ঘপথ হেঁটে সেই লক্ষ্যেই যেন পৌঁছেতে চেয়েছিলেন তিনি।

কী ঘটেছিল ৯১-এর নির্বাচনের পরে

১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি ১৪০টি আসনে বিজয়ী হয়। অপরপক্ষে আওয়ামী লীগ পায় ৮৮টি আসন। পরে বিএনপি সরকার গঠন করে জামায়াতের সমর্থন নিয়ে। আওয়ামী লীগ হয় বিরোধী দল। ওই নির্বাচনে ড. কামাল হোসেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন। হেরে যান তিনি। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা 'সূক্ষ্ম কারচুপির' অভিযোগ আনেন। কিন্তু শেখ হাসিনার ওই বক্তব্যের সঙ্গে একমত ছিলেন না ড. কামাল। তিনি মন্তব্য করেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে।

তার এ বক্তব্য থেকেই মূলত দলীয় প্রধানের সঙ্গে দূরত্বের শুরু। ওই বক্তব্যের পর কামাল হোসেনের গাড়িতে হামলা করা হয়েছিল।

দলীয় প্রধানকে চিঠি লিখেছিলেন ড. কামাল

একানব্বইয়ের নির্বাচনের পর ড. কামাল হোসেন শেখ হাসিনাকে একটি চিঠি লিখেছিলেন। দলীয় পরাজয়ের কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস। ওই চিঠির পর দুজনের মধ্যে দূরত্ব প্রকাশ্যে আসতে থাকে।

পরে আওয়ামী লীগ-প্রধান শেখ হাসিনা দলের বর্ধিত সভাকে কেন্দ্র করে আকস্মিকভাবে সব জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে চিঠি দেন। শেখ হাসিনা সে চিঠিতে লেখেন, ‘একটি মুখোশধারী চক্র দলে ফাটল ধরাবার চেষ্টা করছে।... নানা কৌশলে, সস্তা, সেন্টিমেন্টমূলক বক্তব্য দিয়ে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে আজ আমার ও আওয়ামী লীগের ইমেজকে খাটো করা হচ্ছে।’

শেখ হাসিনার ওই চিঠিতে নির্দিষ্ট করে কারো নাম উল্লেখ না করা হলেও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা ধরে নিয়েছিলেন যে ড. কামাল হোসেন সে চিঠির লক্ষ্যবস্তু। ১৯৯২ সালে ওই বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন ড. কামাল হোসেন। তার পরের বছরই দলীয় কাউন্সিলে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যপদ হারান তিনি। করা হয় উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য। তাতে তিনি অসন্তুষ্ট হন। তাই বেরিয়ে গিয়ে গঠন করেন নতুন রাজনৈতিক দল গণফোরাম। এখনো গণফোরামের প্রধান হয়েই আছেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/২৩জানুয়ারি/এইচএফ/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

সাকিবের বিএনএমে যোগ দেওয়ার বিষয়ে কিছু জানি না: ওবায়দুল কাদের

বিএনপির কেন্দ্রীয় তিন নেতার পদোন্নতি

দুর্নীতি ও ভোটাধিকার হরণ ছাড়া আ.লীগের আর কোনো অর্জন নেই : এবি পার্টি

‘দেশে ইসলামবিদ্বেষী অপতৎপরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে’

ক্ষমতাসীনদের কেউ ভালো নেই: গয়েশ্বর

সিন্ডিকেটকে কোলে বসিয়ে বিরোধীদলের ওপর দায় চাপাচ্ছে সরকার: গণতন্ত্র মঞ্চ

ইফতার পার্টিতে আল্লাহ-রাসুলের নাম না নিয়ে আ.লীগের গিবত গায়: প্রধানমন্ত্রী

বাংলার মাটি থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার সাধ্য কারো নেই: ওবায়দুল কাদের

দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বন্ধু রাষ্ট্রের সহযোগিতা চাইলেন মঈন খান

বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী: আ.লীগের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :