বৃক্ষ নিধনের বিরুদ্ধে অভিনব প্রতিবাদ

পটুয়াখালী প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৩ জানুয়ারি ২০২২, ২১:২০

শহরের সৌন্দর্যবর্ধন ও রাস্তা-ঘাট উন্নয়নের প্রয়োজনে কেটে ফেলা হয়েছে পটুয়াখালী শহরের বিনোদনের প্রাণকেন্দ্র ঝাউতলার ‘ঝাউগাছ’।

সরজমিনে দেখা যায়, পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের বাস ভবনের সামনের সড়কে নগর উন্নয়নের নামে পৌরসভা কর্তৃক নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন চলছে। অর্ধশতাধিক ঝাউ গাছ কেটে ফেলেছে পটুয়াখালী পৌরসভা।

পটুয়াখালী সার্কিট হাউস এলাকার ঝাউবনের এই ঝাউগাছ কাটায় আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণের মাধ্যমে ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিবাদ করেছে পটুয়াখালীর সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ভিন্নধর্মী এ প্রতিবাদে অংশ নিয়েছে পটুয়াখালীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

ঝাউবনে আর গাছ নাই, আনন্দের আর সীমা নাই। উন্নয়নের রাস্তায়, গাছ কাঁটো সস্তায়। বৃক্ষহীন এই শহরে অক্সিজেন খুঁজবে সিলিন্ডারে| এমন সব স্লোগান নিয়ে রবিবার সকালে পটুয়াখালী সরকারি কলেজ থেকে প্রতিবাদী এ আনন্দ মিছিলটি শুরু হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ঝাউবন এলাকায় গিয়ে শেষ হয়। মিছিল শেষে বেলা ১১টায় ঝাউবন এলাকায় মানববন্ধন করেন।

এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, ঝাউবনের গাছ কাটার কারণ হচ্ছে লাইট পোস্টের আলো যাতে সরাসরি রাস্তায় পরে। এতে আমরা খুব খুশি। শীতের সময় কতো মানুষ কষ্ট করে। গাছ কেটে আমরা পৃথিবীর উষ্ণতা বাড়িয়ে সবার শীতের কষ্ট লাঘব করতে পারি। কবিতার মধ্যে আছে কানা বগির ছা। এই বগি গাছে বাস করত, তাই কানা হয়ে গেছে। গাছ কেটে সেখানে লাইট পোস্ট বসালে তবে আর বগি কানা থাকত না। লাইট পোস্টের নিচে বসে কতো মানুষ বিদ্যান হয়েছে। কিন্তু গাছ তলায় কেউ বিদ্যান হতে পারেনি। তাই বেশি করে গাছ কেটে উন্নয়ন করতে হবে। আর এই ঝাউবনের নাম এখন থেকে ঝাউকাটা বন বা কাটা বন।

শিক্ষার্থীরা আরো জানান, শহরের প্রাণ কেন্দ্র জেলা প্রশাসকের বাস ভবনের সামনের সড়কে কোনো আইনের তোয়াক্কা না করে পৌর কর্তৃপক্ষ নগর উন্নয়নের নামে নির্বিচারে গাছ কেটে ফেলছে। কী কারণে গাছ কাটা হচ্ছে তার কোনো সদুত্তর দিতে পারছে না সেখানে কর্মরত শ্রমিকরা। গত কয়েকদিন ধরে দিন দুপুরে শহরের প্রাণ কেন্দ্রে প্রায় শতাধিক গাছ কাটা হয়েছে।

প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীরা জানান, গাছ কাটা বন্ধ, দোষীদের শাস্তি এবং আরও বৃক্ষ রোপণের দাবিতে এ কর্মসূচি পালন করেছেন তারা।

এ বিষয়ে পটুয়াখালী পৌর মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার বাসভবন থেকে জানানো হয় তিনি ব্যক্তিগত সফরে দেশের বাইরে রয়েছেন।

এ বিষয়ে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী জসিমউদদীন আরজু জানান, এ গাছগুলো বন বিভাগ থেকে মার্কিং করে তারপর কাটা হচ্ছে। এ গাছগুলো কাটা হলেও আরো অনেক বেশি গাছ একই জায়গায় লাগানোর প্রক্রিয়া চলছে। শহরকে সুন্দর করতে আরো নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, পৌর কর্তৃপক্ষের অনুরোধের প্রেক্ষিতে বনবিভাগ গাছগুলোর বিষয়ে নতুন সুপারিশ দিয়েছে। প্রথমে ১৬৩টি গাছ কাটার কথা থাকলেও একটি কমিটি গঠনের পর ৬৩টি গাছ কাটার সুপারিশ করা হয়েছে।

সম্প্রতি হঠাৎ পটুয়াখালী সার্কিট হাউস এলাকায় সৌন্দর্যবর্ধন করার জন্যে এভাবে ঝাউগাছ কেঁটে ফেলা মেনে নিতে পারেনি পটুয়াখালীর ৯৫ শতাংশ মানুষ। গাছ কর্তনের সময় থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শুরু হয়ে যায় তোলপাড়। সবাই যার যার মতো প্রতিবাদ করে। তারই ধারাবাহিকতায় রবিবার ২৩ জানুয়ারি সকালে পটুয়াখালীর সব শিক্ষার্থীর এই আনন্দ মিছিল, মিষ্টি বিতরণ, মানববন্ধন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

(ঢাকাটাইমস/২৩জানুয়ারি/আইএইচ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :