বাসে যত খুশি তত যাত্রী, উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি

নাজমুল হুদা, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৪ জানুয়ারি ২০২২, ২০:০৩

দেশে করোনা পরিস্থিতি আবার উদ্বেগজনক আকার ধারণ করায় সম্প্রতি বেশ কিছু বিধিনিষেধ জারি করেছে সরকার। এর মধ্যে গণপরিবহনে যত সিট তত যাত্রী নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সরকারি এই বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে যত খুশি তত যাত্রী নিয়ে সড়কে চলছে বাস।

রাজধানীর প্রায় সব রুটের বাসে উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। নির্ধারিত সিটের চেয়ে অন্তত ১৫-২৫ জন অতিরিক্ত যাত্রী দাঁড়িয়ে নেওয়া হচ্ছে। বাসের চালক, সহকারীসহ যাত্রীদের অনেকেই মুখে মাস্ক পরছেন না। বিভিন্ন রুটের প্রায় ৩০-৩৫টি বাস ঘুরে দেখা গেছে একই চিত্র। কোনোটিতেই হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবহার চোখে পড়েনি। এছাড়া করোনার টিকাও নেননি বেশির ভাগ চালক-সহকারী।

সোমবার (২৪ জানুয়ারি) রাজধানীর বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, খিলগাঁও, বাসাবো, মালিবাগ, রামপুরাসহ বিভিন্ন এলাকায় এমন চিত্র দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, গণপরিবহনে সকালে ও রাতে যাত্রীদের ভিড় বেশি থাকে। এ সময় অতিরিক্ত যাত্রী উঠানো হয়। নির্দিষ্ট আসন ছাড়াও দাঁড়িয়ে ও বাদুরঝোলা হয়েও অনেকে যাতায়াত করেন। অতিরিক্ত যাত্রী উঠানো নিয়ে চালকের সহকারীর সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন অনেকে।

তবে যাত্রীদের অনেকেই জানান, সকালে চাহিদা অনুযায়ী সড়কে গণপরিবহনের সংকট থাকে। অফিস থাকার কারণে বাধ্য হয়ে তাদের দাঁড়িয়ে যেতে হয়। অন্যথায় নির্দিষ্ট সময়ে অফিসে পৌঁছাতে পারবেন না তারা।

নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড থেকে বাসাবো, ফার্মগেট ও গাবতলী হয়ে সাভার যাতায়াত করে এস এম লাভলি পরিবহনের বাস। এই রুটের প্রতিটি বাসে প্রায় একই রকম উপচেপড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। লাভলী পরিবহনের বাসের সহকারী ইমরান হোসেন বলেন, ‘গাড়িতে সিট না থাকলে আমরা যাত্রী নিই না। কিন্তু যাত্রীরা জোর করে গাড়িতে উঠে। গেটের দরজা না খুললে লাথি মারে। আমি কী করমু। আমি নিরূপায়।’ তবে বাসে হ্যান্ড স্যানিটাইজার আছে কি না জিজ্ঞেস করলে এই প্রশ্ন এড়িয়ে যান ইমরান।

ইমরানের মতো একই কথা বলছেন বিভিন্ন রুটের বেশির ভাগ বাসের চালকের সহকারী। রাইদা বাসের সহকারী রাজু বলেন, ‘সকালে অফিস টাইম থাকে। তাই যাত্রীদের না নিয়ে যাওয়া যায় না। রাস্তায় অসংখ্য যাত্রী দাঁড়িয়ে থাকে। সিট না পেলেও তারা দাঁড়িয়ে যায়।’

ইতিমধ্যে ঢাকায় গণপরিবহনের শ্রমিকদের করোনার টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। শুধু জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধন থাকলেই টিকা নিতে পারছেন তারা। অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখন পর্যন্ত বেশির ভাগ বাস চালক-সহকারীই টিকা নেননি। যদিও সরকার থেকে বলা হয়েছে, সবধরনের যানের চালক ও সহকারীদের আবশ্যিকভাবে করোনার টিকা সনদধারী হতে হবে।

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন ঠেকাতে সম্প্রতি গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের নির্দেশনা দেয় সরকার। পরে অবশ্য মালিক-শ্রমিকদের আপত্তির কারণে তা থেকে সরে এসে যত সিট তত যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলাচলের নির্দেশনা দেওয়া হয়। তবে সেই নির্দেশনাও অমান্য হচ্ছে গণপরিবহনে।

ঢাকায় চাইলেও স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হচ্ছে না জানিয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সকালে রাজধানীর প্রায় সব অফিস একই সময়ে শুরু হয়। তাই এসময় যাত্রীদের চাপ বেশি থাকে। কিন্তু সে অনুযায়ী গণপরিবহন নেই। তাই যাত্রীরা জোর করে গাড়িতে উঠে দাঁড়িয়ে যায়। তবে দূরপাল্লায় গাড়িতে যত সিট তত যাত্রীই নেওয়া হচ্ছে।’

বাস শ্রমিকদের টিকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শ্রমিকদের টিকা দেওয়ার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আমরা সবাইকে দ্রুত টিকা নেওয়ার জন্য জানিয়ে দিয়েছি।’

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘কোনো আদেশ কাগজে-কলমে দিলে তার বাস্তবায়ন হবে না। মাঠ পর্যায়ে তা প্রয়োগ করতে হবে। গণপরিবহনে যারা স্বাস্থ্যবিধি মানতে চায় না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। অধিকাংশ যাত্রীরাই স্বাস্থ্যবিধি মানার চেষ্টা করে। সীমিতসংখ্যক যারা মানছে না তারা যদি শাস্তির আওতায় আসে সেক্ষেত্রে অন্যরাও সচেতন হবে। তারা মানতে বাধ্য হবে।’

মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘গণপরিবহনের সংকট নিরসনের দায়িত্ব সরকারের। আমরা মনে করি সরকারের এক্ষেত্রে বিআরটিসি বাস বাড়িয়ে অথবা অন্য কোনো উপায়ে এই সংকট নিরসনে উদ্যোগ নেওয়া দরকার। জনগণের জীবন বাঁচানো ও জীবিকা সচল রাখার স্বার্থে যা যা করার দরকার তা সরকারকে ভাবতে হবে, করতে হবে।’

(ঢাকাটাইমস/২৪জানুয়ারি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :