পরীমনির জীবন যেন সিনেমার গল্পকেও হার মানায়

প্রকাশ | ২৬ জানুয়ারি ২০২২, ০৯:৫৮ | আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২২, ১১:১৯

বিনোদন প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

১৯৯২ সালে খুলনার সাতক্ষীরায় জন্ম আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনির। জন্মনাম শামসুন্নাহার স্মৃতি। ছোট্ট পরীকে নিয়ে বাবা মনিরুল ইসলাম ও মা সালমা সুলতানার ছিল সুখের সংসার। কিন্তু সেই সুখ বেশি দিন সয়নি পরীর কপালে। নায়িকার বয়স যখন মাত্র তিন বছর, তখন আগুনে দগ্ধ হয়ে তার মায়ের মৃত্যু হয়। মা হারা পরীকে রেখে আসা হয় নানাবাড়ি পিরোজপুরে। সেখানে নানা শামসুল হক গাজীর তত্ত্বাবধানে কাটে ছোটবেলা।

নানাবাড়িতে থেকেই পরীমনি মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ২০১১ সালে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজে বাংলা বিভাগে বিএ (সম্মান) পড়াকালীন তিনি চলে আসেন ঢাকায়। নাচ শিখতে শুরু করেন বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে (বাফা)। সে সময় পরীমনি তার বাবাকে নিয়ে সাভারের ব্যাংক টাউনে বাসা ভাড়া করে থাকতেন। স্ত্রী বিয়োগের পর শুধু পরীর কথা ভেবেই আর বিয়ে করেননি বাবা মনিরুল ইসলাম।

কিন্তু ২০১২ সালে বাবার ভালোবাসাও হারাতে হয় পরীমনিকে। ওই বছরের ২১ জানুয়ারি সিলেটে তার বাবার গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়। তিনি রিকন্ডিশন গাড়ির ব্যবসা চালাতেন। গুঞ্জন রয়েছে, এই ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের কারণেই প্রতিপক্ষের হাতে খুন হয়েছিলেন পরীমনির বাবা মনিরুল ইসলাম। যদিও নায়িকার বাবার সেই হত্যা-রহস্য কখনো উদঘাটিত হয়নি।

বাবার মৃত্যুর পর সম্পূর্ণ একা হয়ে পড়েন পরীমনি। এরপর নায়িকা সাভারে তার এক খালার বাসায় থাকতে শুরু করেন এবং মিডিয়ায় কাজ করার চেষ্টা চালান। সেই চেষ্টার প্রথম সাফল্য হিসেবে ২০১৪ সালে তিনি একটি নাটকে অভিনয়ের সুযোগ পান, যেটি সে সময় এসএ টিভিতে প্রচার হয়। এরপর ২০১৫ সালে ‘ভালোবাসা সীমাহীন’ নামে সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রেও অভিষেক করেন।

সেই পরীমনি এখন ইন্ডাস্ট্রির মস্তবড় নায়িকা। এক নামে তাকে সারা দেশের মানুষ চেনেন। মা-বাবা হারিয়ে ছোট থেকেই শুরু যার জীবনযুদ্ধ, কর্মক্ষেত্রেও নিজেকে প্রমাণ করতে তাকে কম যুদ্ধ করতে হয়নি। ব্যক্তিগত জীবনে এসেছে নানা বিতর্কের ঝড়। সেই বিতর্কের মধ্যে একটি হল একাধিক বিয়ে। নায়িকা হওয়ার আগে তিনি দুটি বিয়ে করেন। নায়িকা হওয়ার পর করেছেন আরও দুটি। আর একটি গিয়েছিল আংটিবদল পর্যন্ত।

এই নায়িকার নাম জড়িয়েছে মাদক-কাণ্ডেও। জেলেও দিন গুজরান করতে হয়েছে। ভরা আদালতে কেঁদে ফেলেছেন, কিন্তু হার মানেননি। সেই আদালতই তাকে জামিন দিয়েছে, ফিরিয়ে দিয়েছে বাজেয়াপ্ত করা জিনিসপত্র। তারপর আবার তিনি শুটিং ফ্লোরে ফিরে নিজের প্রাপ্য সম্মান ফিরিয়ে আনার যুদ্ধ শুরু করেছেন। জীবনে এত চড়াই উতরাই, এত আলোচনা-সমালোচনা, বিতর্ক বাংলাদেশি আর কোনো নায়িকারই নেই।

তবে সব যুদ্ধের শেষেই শান্তি অপেক্ষা করে, ভালোবাসা অপেক্ষা করে। সেই ভালোবাসা আচমকাই কড়া নেড়েছে নায়িকার দরজায় আর বদলে দিয়েছে তার জীবন। পরীমনির জীবনে এসেছেন অভিনেতা শরিফুল রাজ। রাজ-পরীর প্রেমের গল্পও সিনেমার মতো। জীবনের খারাপ সময়ে সিনেমার সেটে তাদের পরিচয়।। প্রথম দেখা থেকে বেশি সময় নেননি তারা একে অপরকে বুঝতে।

অভিনেতা রাজের সঙ্গে মিশে প্রথম থেকেই পরী বুঝে গিয়েছিলেন, রাজই সেই জীবনসঙ্গী যার সঙ্গে তিনি সারাজীবন কাটাতে পারেন। অক্টোবরে গিয়াসউদ্দিন সেলিমের ছবি ‘গুনিন’ ছবির সেটে দেখা হয় তাদের। সেখান থেকেই শুরু প্রেম। মাত্র সাত দিনের মাথায় দুই পরিবারকে জানিয়ে রাজের বাড়িতে ১৭ অক্টোবর বিয়ে করেন রাজ ও পরী।

কিন্তু ওই বিয়ের কথা স্বয়ং পরিচালক গিয়াসউদ্দিন সেলিমও নাকি জানতেন না। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে পরীমনি সুখবরটি জানান। এও জানান, তিনি মা হতে চলেছেন। এই সন্তানের বাবা শরিফুল রাজ। এরপর গত ২২ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ফের পরীর বনানীর বাড়িতে হয়েছে তার এবং রাজের বিয়ের অনুষ্ঠান।

পরীমনি জানিয়েছেন, রাজ আসার পর কতটা বদলে গেছে তার জীবন। নায়িকার কথায়, ‘জীবনটা এখন দুটি প্রাণের মাঝে ভাগ হয়ে গেছে, একটা রাজ আর একটা আমাদের সন্তান, যে আসছে। রাজ একটা ম্যাজিক। জীবনের সব থেকে সুন্দর উপহার সে আমাকে দিয়েছে। তাকে পেয়ে মনে হয়, আমি সত্যিই অনেক ভাগ্যবতী। বাবা হিসাবে সে ভালো বাবার কাতারেই থাকবে।’

নায়িকার কথা থেকেই বোঝা যায়, জীবনের সেরা সময় উপভোগ করছেন পরীমনি। নায়িকার ছোটবেলা থেকে এখন পর্যন্ত পুরোটা সময়ই যেহেতু নানা ঘটনা ও নাটকীয়তায় মোড়া, তাই তার জীবনী নিয়ে সিনেমা বানাতে চেয়েছিলেন প্রযোজক খোরশেদ আলম খসরু। গত বছরের আগস্টে এই ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি। পরীমনি তখন মাদক-কাণ্ডে গ্রেপ্তার হয়ে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে বন্দি।

ওই সময় প্রযোজক খসরু বলেছিলেন, ‘পরীমনি রাজি থাকলে তার জীবনী নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করতে চাই। এছাড়া আমি চাই, নায়িকা হিসেবে সেই সিনেমায় পরীমনিই অভিনয় করুক। কিন্তু সে ছবির আর কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। কারণ, নিজের জীবন কাহিনি নিয়ে এখনই সিনেমা হোক, তা চান না পরীমনি। তবে হবে হয়তো কোনো একদিন। সেই দিনের অপেক্ষায় নায়িকার ভক্তরা।

ঢাকাটাইমস/২৬জানুয়ারি/এএইচ