নীলফামারীতে ট্রেনের ধাক্কায় ৪ নারী শ্রমিক নিহত

নীলফামারী প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৬ জানুয়ারি ২০২২, ১৬:০৮

কর্মক্ষেত্রে না গিয়ে লাশ হয়ে বাড়ি ফিরতে হলো চারজন নারী শ্রমিককে। বুধবার সকালে নীলফামারীতে ট্রেনের ধাক্কায় তারা প্রাণ হারিয়েছেন। নিহতরা হলেন সেফালী বেগম, সাহেরা বেগম, রোমানা বেগম ও মিনা পারভীন। তারা নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডের একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক ছিলেন।

এ ঘটনায় আহত আরও চারজনের মধ্যে দুজন নীলফামারী জেনারেল হাসপাতাল ও দুজন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

বুধবার সকাল ৭টার দিকে খুলনা থেকে ছেড়ে আসা সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনটি চিলাহাটীর দিকে যাচ্ছিল। এ সময় চারদিক ছিল ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন। ঠিক এই সময় একটি অটোবাইক আটজন যাত্রী নিয়ে নীলফামারী দারোয়ানী রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন একটি অরক্ষিত রেল ক্রসিং পার হচ্ছিল। এতে ট্রেনের ধাক্কায় অটোবাইকটি বেশ কিছুদূর হিঁচড়ে যাওয়ার পরে যাত্রী নিয়ে রেল লাইন থেকে প্রায় ২০ ফুট দূরে ছিটকে পড়ে।

এ দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন সোনারায় ধনীপাড়া এলাকার আশরাফ আলীর স্ত্রী সেফালী বেগম (৪২), একই এলাকার মোশারফ আলীর স্ত্রী রোমানা বেগম(২৫), আলতাফ হোসেনের স্ত্রী মিনা পারভীন (২২) ও বেলাল হোসেনের স্ত্রী সাহেরা বেগম (৩২। এদের মধ্যে সেফালী ঘটনাস্থলেই মারা যান।

নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. কাজী আব্দুল মোমিন জানান, হাসপাতালে আসা সাতজন রোগীদের মধ্যে সাহেরা বেগম, রোমানা বেগম মারা যান। ভর্তি পাঁচজনের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তিনজনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তাদের মধ্যেও মিনা পারভীন মারা যান।

এছাড়া নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন সোনারায় এলাকার ইয়াকুব আলীর ছেলে অহিদুল ইসলাম(২৮), নজরুল ইসলামের স্ত্রী রওশন আরা(২৭) এবং রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন সায়েদ আলীর স্ত্রী কুলসুমা বেগম(৩০) ও গোলাম মোস্তফার স্ত্রী নাসরীন আক্তার (৩৫)।

নীলফামারী ফায়ার স্টেশন ইনচার্জ মো. নিয়ারাজ হোসেন বলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহমান বিশ্বাস বলেন, এ দুর্ঘটনার ব্যাপারে সৈয়দপুর রেলওয়ের পি ডাব্লিউ সুলতান আহমেদ বাদী হয়ে রেল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করেছেন। নিহতদের স্বজনদের আবেদনের ভিত্তিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

নীলফামারীর সোনারায় ধনীপাড়ার দুর্ঘটনায় নিহত সেফালী বেগমের স্বামী আশরাফ আলী বলেন, আমি গরীব পরিবারের সন্তান। আমার স্ত্রী উত্তরা ইপিজেডের একটি কোম্পানিতে চাকরি করে যা পায় তা দিয়ে চলে সংসার। সে মারা যাওয়ায় আমার পরিবারটি পথে বসলো।

একই এলাকার মৃত মিনা পারভীনের স্বামী আলতাফ হোসেন বলেন, আমাদের সংশারে একটি মাত্র ছেলে সন্তান। তার বয়স মাত্র সাড়ে তিন বছর। বউতো দুর্ঘটনায় মারা গেল। আমার সংসারের আয়ের সব পথ বন্ধ হয়ে গেল। এই সন্তানকে নিয়ে আমি কী করবো। অবুজ ছেলে সারাক্ষণ মা মা করে কান্নাকাটি করছে। তাকে থামানো যাচ্ছে না। আমি এখন চোখে অন্ধকার দেখছি।

মৃত সাহেরা বেগমের স্বামী বেলাল হোসেন বলেন, দারোয়ানী স্টেশন সংলগ্ন এই রেলক্রসিংয়ে গেট ও গেটম্যান দেয়ার জন্য অনেক দাবি জানাইছি। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ কোনো কথাই শুনেনি। তাদের অবহেলার জন্য আজ এই দুর্ঘটনা ঘটল।

(ঢাকাটাইমস/২৬জানুয়ারি/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :