স্বপ্নরা ডানা মেলুক লড়াকু হেলালের চোখে

নাজমুল হুদা
| আপডেট : ২৬ জানুয়ারি ২০২২, ১৬:৪৯ | প্রকাশিত : ২৬ জানুয়ারি ২০২২, ১৬:৩৯

চোখে স্বপ্ন আঁকেন হেলাল উদ্দিন। দুই হাতের মুঠোয় ধরতে চান সফলতার হাল। সেই স্বপ্নের করুণ নির্যাস তাকে প্রতিনিয়ত পোড়ায়। কেননা, জন্ম থেকেই যে দুই হাতে কোন শক্তি পান না হেলাল। তাই স্বপ্নকে ডানা মেলাতে নানা চড়াই-উতরাই পাড়ি দিতে হচ্ছে কৃষক পুত্রকে।

অন্যদের মত হেলালের হাতের ১০টি আঙুল নেই। দুইটি হাতও সমান নয়। ডান হাতের দৈর্ঘ্য মাত্র এক ফুট। বাম হাতের দৈর্ঘ্য ৫০ সেন্টিমিটার। তার কব্জির নিচের অংশও নেই বললেই চলে। তবুও তার স্বপ্ন ছোঁয়ার প্রয়াস থেমে নেই।

ছোট বেলায় বড় ভাই আব্দুর রহমান সবুজের হাত ধরে হাঁটা শিখেছে হেলাল। পাঁচ বছর পর্যন্ত শরীরের ভারসাম্য রাখতে পারতেন না তিনি। অন্য শিশুরা যখন ছোটাছুটি করতো তখনও হেলাল হাঁটতে গিয়ে বার বার হোঁচট খেয়েছে।

সাত বছর বয়সে বাবা লিকলুর রহমানের (৫০) কোলে প্রথম স্কুলে যান হেলাল। এরপর থেকেই স্বপ্ন বুনতে শুরু করেন। যশোরের কেরালখালী পারিয়ারঘোপ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক লেখাপড়া করেন তিনি। তখন প্রায় ৩-৪ কিলোমিটার পথ হেটে প্রতিদিন স্কুলে যেতে হত তাকে।

হেলাল বলেন, আমার বাসা থেকে স্কুল ৩-৪ কিলোমিটার দূরে। বন্ধুরা সাইকেলে স্কুলে যেত। আমারও অনেক ইচ্ছা হত সাইকেল চালানোর৷ কিন্তু আমি পারতাম না। হেটে হেটে স্কুলে যেতাম।

'মাঝেমধ্যে বন্ধুরা পথ থেকে সাইকেলের পেছনে উঠিয়ে নিত। আমাকে অনেক বন্ধুরাই পড়ালেখার জন্য সাহায্য করতো। উৎসাহ দিত।' বলেন হেলাল।

স্কুল-কলেজে পরীক্ষার মধ্যেও হেলালকে কঠিন এক পরীক্ষা দিতে হত। তিনি চাইলেও অন্যদের মত দ্রুত লিখতে পারতেন না। সময়ের মধ্যে সবগুলো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারতেন না। হেলাল জানায়, স্কুল-কলেজে অনেক শিক্ষকের কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়েছেন তিনি। অনেকে তার জন্য অতিরিক্ত সময় দিয়েছে।

‘আবার কেউ কেউ বলতো, যা লিখেছো তুমি তাতেই পাশ করবে। আর লিখতে হবে না। খাতা জমা দিয়ে দেও!’ বলেন হেলাল।

নানা বাঁধার পরেও হেলালের এই ছুটে চলা দমে যায়নি। প্রতিনিয়তই তিনি উদ্যমী হয়েছেন। শৈশব থেকেই জীবনের সঙ্গে সংগ্রাম করেছেন। তবুও স্বপ্নকে লালন করে চেষ্টা চালাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।

হেলাল ইতিমধ্যে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করেছেন। ২০২০ সালে সরকারি বীরশ্রেষ্ঠ নুর মোহাম্মদ ডিগ্রি কলেজ থেকে জিপিএ ৩.৪২ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। সম্প্রতি ঢাকার সরকারি বাঙলা কলেজে সমাজকর্ম বিভাগে চান্স পেয়ে উচ্ছ্বসিত তিনি। তাই ঢাকায় থেকেই লেখাপড়া শেষ করতে চান।

হেলালের এই সফলতা আর উদ্যম প্রশংসা কুড়িয়েছে কলেজটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে। তার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে পাশে থাকতে চান তারা। পরিবার ও ছোট বেলার বন্ধুরাও হেলালকে উৎসাহ জোগান।

হাতে শক্তি না পাওয়ায় তিনি বাবাকে কৃষিকাজে কখনো সাহায্য করতে পারেনি। সেই আক্ষেপ তার চোখে প্রতিনিয়ত ভেসে উঠে।

তিনি জানান, বড় হয়ে শিক্ষক হবেন। কৃষক বাবার কষ্ট লাঘব করবেন। নিজের উপার্জনে বাবার সাথে দুমুঠো ভাত খাবেন।

শিক্ষার্থীদের নৈতিক শিক্ষা দিতেই শিক্ষক হতে চান হেলাল। তাদের জন্য নিজে অনুপ্রেরণা হতে চান। এছাড়াও বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের নিয়ে কাজ করতে চান তিনি।

হেলাল বলেন, 'আমার মত যারা প্রতিবন্ধী তাদের পাশে থাকতে চাই৷ উৎসাহ দিতে চাই।'

হেলালের এই স্বপ্নের পেছনে রয়েছে শত শত বাঁধা। এসব বাঁধা পেরিয়েও স্বপ্নরা ডানা মেলবে লড়াকু হেলালের চোখে সেই প্রত্যাশা সবার।

(ঢাকাটাইমস/২৬জানুয়ারি/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :