বিদ্যুতের গতিতে এমপি হলেন গোলাম রাব্বানী, এরপর হারিয়ে গেলেন!

হাবিবুল্লাহ ফাহাদ, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৬ জানুয়ারি ২০২২, ১৮:১৩ | প্রকাশিত : ২৬ জানুয়ারি ২০২২, ১৭:৪২

বিদ্যুৎ নিয়ে চাপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের কানসাটের সেই আন্দোলনের কথা মনে আছে? মনে আছে গোলাম রাব্বানীর কথা? বিদ্যুৎ নিয়ে আন্দোলন করে পেয়েছিলেন বীরের সম্মান। জননেতার খ্যাতিও যুক্ত হয়েছিল নামের পাশে।যোগ দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগে। নৌকা প্রতীক পেয়ে সংসদ সদস্যও হয়েছিলেন তিনি। সেই গোলাম রাব্বানী এখন কোথায়? তিনি কি হারিয়ে গেলেন!

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কানসাটের গোলাম রাব্বানীর রাজনীতিতে আগমন যেমন হয়েছিল বিদ্যুৎ গতিতে। তেমনি বিস্মৃত হলেন সন্তর্পনে। ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার পর ধীরে ধীরে নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন কানসাটের এই নেতা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গোলাম রাব্বানী ধীরে ধীরে রাজনীতি থেকে একরকম নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। এখন তিনি পারিবারিক আমবাগান আর ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকছেন।

তার ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা টাইমসের। জানা যায়, রাজনীতিতে এখন আর মন নেই গোলাম রাব্বানীর। দলের কোনো পদ-পদবীতেও নেই। নতুন করে রাজনীতিতে আসার পরিকল্পনাও নেই সাবেক এই সংসদ সদস্যের।

২০০৫-২০০৬ সালে কৃষকদের জরিমানা করা, মিটার ভাড়া, বিদ্যুতের প্রকট সমস্যা, ইত্যাদি বেশ কিছু বিষয় নিয়ে ‘পল্লীবিদ্যুৎ উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদ’-এর ব্যানারে আন্দোলন করেন গোলাম রাব্বানী। ওই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে প্রাণও হারান বেশ কয়েকজন। মূলত ওই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই দেশব্যাপী পরিচিত হন গোলাম রাব্বানী।

২০০৫ সালে আন্দোলনকারীরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, মিটার ভাড়াসহ ন্যূনতম চার্জ প্রত্যাহার, চুরি যাওয়া বা ক্ষতিগ্রস্ত ট্রান্সফরমারের জরিমানা আদায় বন্ধসহ পাঁচ দফা দাবি ঘোষণা করেন। দাবি না মানলে ২০০৬ সালের ৪ জানুয়ারি বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের সময় পুলিশের সঙ্গে কৃষক-জনতার সংঘর্ষ হয়। ওই সময় পুলিশ গুলি করলে দুই ব্যক্তি মারা যান।

পরে অবশ্য তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকারের উচ্চ পর্যায়ের মধ্যস্থতায় আন্দোলনকারীদের দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়া হয়। ১৪ দফা সমঝোতা চুক্তির স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে আন্দোলনের শেষ হয়।

২০১৩ সালের ১০ নভেম্বর গোলাম রাব্বানী আওয়ামী লীগে যোগ দেন। ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন।

একসময় শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন গোলাম রাব্বানী। কিন্তু দলীয় পদে থেকেও ২০১৫ সালে শিবগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থীর হয়ে তিনি কাজ করেছিলেন বলে অভিযোগ আছে। সেই থেকে ধীরে ধীরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে তার সম্পর্কের বাঁধন আলগা হয়।

আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা বলছেন, গোলাম রাব্বানীর রাজনৈতিক কোনো ভিত্তি ছিল না। কানসাট আন্দোলনেই তার কপাল খোলে। আওয়ামী লীগ তাকে দলে টেনে নেয়। মনোনয়নও দেয়।

কিন্তু তাকে যে মর্যাদা বা সম্মান দেওয়া হয়েছিল পরবর্তীতে নানা বিতর্কে তিনি তা খুইয়েছেন। রাজনীতিতে টিকে থাকতে যে ‘দীর্ঘ দৌড়ের ঘোড়া’ হতে হয়, গোলাম রাব্বানীর সেই দক্ষতায় খামতি আছে। তাই স্বাভাবিক নিয়মেই তিনি ছিঁটকে পড়েছেন।

২০০৩ সালের ২ মার্চের কথা। কানসাট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি এলাকা নম্বর ২-এ পরিচালক নির্বাচিত হন কানসাটের গোলাম রাব্বানী। পরে সমিতির পরিচালকদের ভোটে চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হন। বিদ্যুতের প্রকট সমস্যা, সেই সঙ্গে মিটার ভাড়া ও কৃষকদের জরিমানা আদায়সহ বেশ কিছু বিষয় নিয়ে সমিতির সঙ্গে মতবিরোধ দেখা দেয়।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে ‘পল্লী বিদ্যুৎ উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদ’-এর ব্যানারে ২০০৫ সালের ডিসেম্বরে কানসাট সোলায়মান মিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে কৃষক সমাবেশের ডাক দেন তিনি। সমবেত হয় হাজার হাজার মানুষ।

কানসাটের ওই সমাবেশ থেকে ঘোষণা করা হয় আন্দোলন-কর্মসূচি। সেই আন্দোলনের ধাপে ধাপে নিহত হন বেশ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা। আহতও হন অনেকে। কিন্তু আন্দোলন থেকে তারা পিছু হটেনি। পরে তৎকালীন বিএনপি-জামায়ত সরকার গোলাম রাব্বানীর নেতৃত্বে আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়।

(ঢাকাটাইমস/২৬জানুয়ারি/এইচএফ/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :