ইলিশে সয়লাব কক্সবাজারের ফিশারি ঘাট

প্রকাশ | ২৭ জানুয়ারি ২০২২, ১২:৫৯ | আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০২২, ১৩:৫৬

ছৈয়দ আলম, কক্সবাজার

বঙ্গোপসাগরে মহাসমারোহে চলছে মাছ ধরা। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর জেলেদের জালে ধরা পড়েছে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। ফিশিং ট্রলারভর্তি ইলিশ নিয়ে কূলে ফিরছেন জেলেরা। ইলিশের পাশাপাশি ধরা পড়েছে রূপচাঁদাসহ নানা প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ। দামও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। সাগরে প্রচুর পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়ায় ব্যবসায়ী ও জেলেদের মুখে হাসি ফুটেছে। আড়তগুলোতে ফিরে এসেছে কর্মচাঞ্চল্য।

কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে উৎসবের আমেজ। টানা ৩-৪ মাস পর কোলাহল না থাকা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে। বৈরী আবহাওয়া ও ২২ দিন নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে গেলেও ইলিশের দেখা পাননি জেলেরা। এতে অনেকটা হতাশায় ছিলেন জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা। কিন্তু গত সপ্তাহ ধরে পাল্টে গেছে এখানকার চিত্র। সাগর থেকে মণ মণ ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফিরছে শত শত ফিশিং ট্রলার। ঘাট থেকে ডিঙি নৌকায় ঝুড়ি নিয়ে মোকামে তোলা হচ্ছে ছোট-বড় ইলিশ।

ব্যবসায়ীদের হাঁকডাক ও বেচাবিক্রিতে সরগরম হয়ে উঠে ফিশারি ঘাট নামে পরিচিত এই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটি। এখানে কারো যেন দম ফেলার ফুসরত নেই। কেউ বরফ ভাঙছেন, কেউবা ইলিশের সন্নিবেশ করতে ব্যস্ত। অনেক ব্যবসায়ী কাঙ্ক্ষিত দাম পেয়ে ট্রাকে ট্রাকে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছেন ইলিশের চালান।

ফিশারি ঘাটে কথা হয় ফিশিং ট্রলারের জেলে আবছার, রহিম, ইরফানসহ কয়েকজনের সাথে। তারা বলেন, অনেক দিন মৎস্য শিকার বন্ধ ও মাছ না পাওয়ায় অনেক কষ্টে দিন গেছে। তার ওপর করোনার দুর্যোগ তো আছেই। সবমিলিয়ে অনেক দুঃখ কষ্টে পরিবার পরিজন নিয়ে দিন কাটাতে হয়েছে তাদের। এবার সাগরে প্রচুর পরিমাণ ইলিশ মাছ ধরা পড়ায় হয়তো সেই দুঃখকষ্ট ঘুচবে।

ফিশারি ঘাটে দেখা গেছে, এক কেজি বা তার চেয়ে বেশি ওজনের ইলিশ কেজিতে ৬০০/৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ট্রলার আরও ফিরলে দাম আরও কমবে বলে ধারণা ব্যবসায়ী শাহেদের।

ব্যবসায়ী শাহেদ আরো জানান, ফিশারি ঘাটে চলছে এখন উৎসবের আমেজ। টানা কয়েক মাস পর জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে ওই এলাকা। সাগর থেকে শত শত ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফিরছে একের পর এক ট্রলার। ঘাট থেকে ডিঙি নৌকায় বা ঝুড়িতে করে মোকামে তোলা হচ্ছে নানা সাইজের ইলিশ। এক পোটলা মাছ উঠে এলেই ব্যবসায়ীদের তোড়জোড় শুরু হচ্ছে। ফলে সরগরম হয়ে উঠছে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র।

অপর মৎস্য ব্যবসায়ী আবছার বলেন, অনেক দিন মাছ শিকার বন্ধ থাকায় এ সেক্টরের সঙ্গে থাকা মানুষগুলোর কষ্টে দিন গেছে। তার উপর করোনার দুর্যোগ চলছে। এখন আল্লাহর রহমতে সাগরে ইলিশসহ সামুদ্রিক নানা মাছ প্রচুর পরিমাণে ধরা পড়ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে সংশ্লিষ্টদের কষ্ট দূর হবে বলে আশা করছি।

ফিশিরি ঘাটে মাছ কিনতে আসা শাহ আলম জানান, পুরো এলাকাজুড়ে ইলিশের বাজার দেখে অনেক খুশি লাগছে। সারিসারি করে পুরো অবতরণ কেন্দ্রে নিয়ে আসছে জেলেরা। সেখান থেকে একদম তাজা চাহিদামতো বড় বড় সাইজের ১০ কেজি মাছ নিয়েছি ৪০০ টাকা করে।

ট্রলার মালিক নুরুল হুদা জানান, প্রচুর মাছ নিয়ে ফিরছে জেলেরা এতে আমরাও অনেক খুশি। কারণ অনেকদিন এতো মাছ পাওয়া যায়নি। এখন দামও পাওয়া যাচ্ছে ভালো।

কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জানে আলম পুতু বলেন, ইলিশের ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফিশারি ঘাটের ৫০০ ফিশিং ট্রলার গত এক সপ্তাহ ধরে সাগর প্রচুর ইলিশ মাছ নিয়ে ফিরছে। করোনা, নিষেধাজ্ঞার সময়ে যে ক্ষতি হয়েছে আশা করি তা পুষিয়ে নিয়ে লাভের মুখ দেখবে ব্যবসায়ী ও ফিশিং ট্রলার মালিকেরা।

কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম খালেকুজ্জামান বলেন, ২২ দিন ইলিশ ধরা বন্ধে এখন প্রচুর মাছ ধরা পড়ছে। এবছর ডিমও ছেড়েছে অনেক। বন্ধের সময় থাকায় ইলিশের প্রজনন ও আকৃতি বেড়েছে অনেকগুণ। এখন প্রতিদিন যা মাছ আসছে প্রায় বড় সাইজের। সেন্টমার্টিন ও কুতুবদিয়ার উত্তর পশ্চিম মোহনায় সাগরের পরিবেশ শান্ত রয়েছে। উপকূলে অনুকূল পরিবেশ থাকায় নির্ভয়ে জেলেরা নৌকাভর্তি মাছ নিয়ে খুশিতে কুলে ফিরতে পারছে।

তিনি আশা করছেন, এবার ইলিশ আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করবে জেলেরা।

(ঢাকাটাইমস/২৭জানুয়ারি/এলএ/এসএ)