ঢাবিতে অসুস্থ শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিজয় একাত্তর হলে গেস্টরুমে ডেকে নিয়ে অসুস্থ এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের ছয় কর্মীর বিরুদ্ধে। অসুস্থ ওই শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
বুধবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আখতার হোসেন অসুস্থতার কারণে নির্দিষ্ট সময়ে ‘গেস্টরুমে’ না থাকায় তাকে ডেকে নির্যাতন করা হয় বলে জানা গেছে।
নির্যাতনে অভিযুক্তরা হলেন-সমাজবিজ্ঞান বিভাগের কামরুজ্জামান রাজু, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাইফুল ইসলাম, লোকপ্রশাসন বিভাগের সাইফুল ইসলাম রোহান, ইতিহাস বিভাগের হৃদয় আহমেদ কাজল, সমাজকল্যাণ বিভাগের ইয়ামিন ইসলাম, মনোবিজ্ঞানের ওমর ফারুক শুভ। তারা সবাই ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী।
হল সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্তরা হল ছাত্রলীগের পদ প্রত্যাশী আবু ইউনুস ও রবিউল ইসলাম রানার অনুসারী। ইউনুস ও রানা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী।
ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে জানা যায়, বুধবার রাত ১০টার দিকে অন্যরা গেস্টরুমে গেলেও অসুস্থতার কারণে আখতার যাননি। এতে রাজু, কাজল, ইয়ামিন, সাইফুল, রোহান ও শুভ তাকে ডেকে গেস্টরুমে না যাওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি অসুস্থতার কথা জানান। এসময় তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করা হয় এবং জ্বালিয়ে রাখা লাইটের দিকে ৩০ মিনিট তাকিয়ে থাকতে বলা হয়। ১০ মিনিট তাকিয়ে থাকার পর অসুস্থ হয়ে পড়লে আখতার হোসেনকে ব্যাচমেটের সাহায্যে গণরুমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এরপর আখতার অজ্ঞান হয়ে গেলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ডাক্তার তার ইসিজি, কোভিড টেস্ট ও প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হলে পাঠান।
নির্যাতনের শিকার আখতার জানান, তার বাবা সাতদিন আগে স্ট্রোক করেছেন। ছোট ভাই দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। যার কারণে তিনি আগে থেকেই মানসিক ট্রমার ভেতরে ছিলেন।
এদিকে নির্যাতনের ঘটনা যেন কাউকে না জানানো হয় সেজন্য আখতারকে হুমকি দেওয়া হয়।
নির্যাতনের বিষয়ে নিরাপত্তাহীনতার কথা উল্লেখ করে হল প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন আখতার। অভিযোগের ভিত্তিতে একাত্তর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুল বাছির রাতে আখতারকে দেখতে যান। তিনি সার্বিক নিরাপত্তার আশ্বাস দেন।
এ ঘটনায় একাত্তর হলের আবাসিক শিক্ষক ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাহিদুল ইসলাম সাহাকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন দিনের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এরপর যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে ঢাকাটাইমসকে জানিয়েছেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আবদুল বাছির।
আবদুল বাছির বলেন, গেস্টরুমে শিক্ষার্থী নির্যাতন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতির মধ্যে পড়ে না। ছাত্রলীগসহ যারা শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করছে তারা এ কাজ থেকে বেরিয়ে এলে আমাদের জন্য বিষয়গুলো সহজ হয়। এছাড়াও যেহেতু প্রতিটা হলেই নিয়মিত শিক্ষার্থীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তাই আমরা প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটিতে আলোচনা সাপেক্ষে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।
ছাত্রলীগ নেতাদের ইতিবাচক ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে একাত্তর হলের প্রাধ্যক্ষ বলেন, এত রাতে বিজয় একাত্তর হলে আসতে হয়েছে, বিষয়টা খুবই দুঃখজনক।
নির্যাতনে জড়িত ছাত্রলীগ কর্মীদের বিষয়ে পদপ্রত্যাশী আবু ইউনুস বলেন, যারা গেস্টরুম নিয়েছে তারা ছাত্রলীগের কর্মী না। আমাদের সাংগঠনিক কাঠামোতে তারা পড়ে না। হল প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ঘটনাটি আমরা খতিয়ে দেখব। কেউ যদি ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে শিক্ষার্থী নির্যাতন করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রক্টর অধ্যাপক ড এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ঘটনাটি সম্পর্কে আমি অবহিত। এটি হলের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এ ঘটনায় হল প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
(ঢাকাটাইমস/২৭জানুয়ারি/আরএল/এফএ/এমআর)