পাবিপ্রবির ভিসির বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন

নিজস্ব প্রতিবেদক, পাবনা
 | প্রকাশিত : ২৭ জানুয়ারি ২০২২, ২১:৫৮

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এম রোস্তম আলীর বিরুদ্ধে গণিত বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে অস্বচ্ছতা, অনিয়ম ও একই বিভাগের চেয়ারম্যানকে লাঞ্ছিতের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগীরা।

বৃহস্পতিবার বিকালে পাবনা প্রেসক্লাবের ভিআইপি সেমিনার হলরুমে পাবিপ্রবির গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ এই সংবাদ সম্মেলন করেন।

সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে প্রফেসর ড. হারুন- অর-রশিদ বলেন, বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে ২ জন শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়। নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আমাকে সদস্য হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু সকালে নিয়োগ বোর্ডে উপস্থিত হতে গেলে ভাইস চ্যান্সেলরের ইশারায় তার পেটুয়া কর্মকর্তা ও কর্মচারী বাহিনী আমাকে নিয়োগ বোর্ডের কক্ষে প্রবেশে বাধা প্রদান করেন এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে ওই বিল্ডিং থেকে বের করে দেয়া হয়।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ভিসি স্যারের মেয়াদ একেবারেই শেষ পর্যায়ে। যাওয়ার সময়ে নানা ধরণের অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতিসহ বিশ্ববিদ্যালয়টিকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করে যাচ্ছেন। নিজের খেয়াল খুশিমত ইচ্ছে মাফিক অনিয়ম ও অনৈতিক সুবিধা নিয়ে অযোগ্য, অদক্ষ জনবল নিয়োগ, স্বেচ্ছাচারিতাসহ বিভিন্ন অপকর্ম করছেন। এ সকল কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করলেই তার ওপর নেমে আসে দুর্বিসহ স্বেচ্ছাচারী আচরণ, দুর্ব্যবহারের পাশাপাশি নানাভাবে চাপ প্রয়োগ।

সেকশন অফিসার পদে নিয়োগপ্রার্থী আতিকুল ইসলাম জানান, গত বছরের ১৬ জুন নিয়োগ বোর্ডে মেধা যাচাই ও যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীদের না নিয়ে নিয়োগ বোর্ডের সভাপতির দায়িত্বে থেকে ভিসি স্যার তার ভাতিজি কানিজ ফাতেমাকে প্রথম শ্রেণির সেকশন অফিসার পদে নিয়োগ দিয়েছেন। একই পদে আরও চারজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে শুধুমাত্র অর্থের বিনিময়ে। অথচ লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের নামে নাটক সাজিয়ে সেই পরীক্ষার কোন রোস্টার টাঙানো হয়নি।

তিনি বলেন, পুরোপুরি নাটক সাজিয়ে বেশ কয়েকটি নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন অনিয়ম ও দুর্নীতি করে ভিসি প্রফেসর ড. এম রোস্তম আলী।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ভিসি প্রফেসর ড. এম রোস্তম আলী বলেন, অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে সংবাদ করবেন।

আপন বড় ভাইয়ের মেয়েকে নিয়োগ দেয়ার বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, কানিজ ফাতেমার নিয়োগ পরীক্ষার মৌখিক পরীক্ষার সময়ে আমি ঢাকায় ছিলাম। তাই এ নিয়োগে কোন অস্বচ্ছতার বিষয় সঠিক নয়।

নিজস্ব পেটুয়া বাহিনী দিয়ে গণিত বিভাগের চেয়ারম্যানকে লাঞ্ছিতের বিষয়ে তিনি বলেন, নিয়োগ বোর্ডের সদস্য হলেও তার স্ত্রী চাকরি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করায় তাকে বিধি মোতাবেক নিয়োগ বোর্ডে রাখা সম্ভব হয়নি। যে কারণে অফিস স্টাফরা তাকে নিয়োগ বোর্ডে ঢুকতে না দিয়ে চলে যেতে বলেছেন।

সংশ্লিষ্ট অভিযোগে প্রেক্ষিতে গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ তার স্ত্রী পরীক্ষার্থী স্বীকার করে বলেন, যেহেতু লিখিত পরীক্ষায় আমার স্ত্রী উত্তীর্ণ হননি। সেহেতু মৌখিক পরীক্ষায় উপস্থিত থাকার অধিকার আমার আছে।

তিনি বলেন, আমার বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ হবে আর আমি সেখানে থাকতে পারব না- এটা কোন বিধি নেই।

তিনি বলেন, আগে থেকেই শিক্ষক নিয়োগে অস্বচ্ছতা, অনৈতিক লেনদেন এবং মেধার বাইরে অযোগ্য প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়া হবে এমন আঁচ করতে পেরেই আমি বিধি অনুসারে লিখিত জানিয়েছিলাম ভিসি স্যারকে। কিন্তু তিনি আমার পরপর দুটি আবেদনের কোন সাড়া দেননি। উল্টো অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক্সপার্ট নিয়ে এসে তড়িঘড়ি করে এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছেন।

লাঞ্ছিতের বিষয়ে ড. হারুন আরও বলেন, শিক্ষক পরিষদ কৌশলে ভেঙে দিয়ে আর অনুমোদন করেননি ভিসি স্যার। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের দিনে আমি আমার সহকর্মীদের পাশে পাচ্ছি না। তবে এ ঘটনায় আমি থানায় মামলা করব। পাশাপাশি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি বরাবর অভিযোগ করব।

এ বিষয়ে ভিসি প্রফেসর ড. এম রোস্তম আলী বলেন, অস্বচ্ছ, অনিয়ম, আর্থিক লেনদেন করে অনৈতিক পন্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় এমন কোন কাজ করা হয়নি। যে বা যারাই অভিযোগ করেছেন। তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে পারেননি বা আমাকে ভিন্নভাবে ম্যানেজ করার চেষ্টায় ব্যর্থ হওয়ায় একের পর এক উল্টোপাল্টা ও মিথ্যা মনগড়া অভিযোগ তুলে পরিবেশ নষ্ট করার পাঁয়তারা করছেন।

উল্লেখ্য, ইতোপূর্বে ভিসি প্রফেসর এম রোস্তম আলীর বিরুদ্ধে ১০১টি দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা অভিযোগের তদন্ত ও বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্ত থেকে উদ্ধারের দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে একক প্রতীকি অনশন করেন পাবিপ্রবির বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. এম আবদুল আলীম। এছাড়াও একই দাবিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা, শিক্ষার্থীরাও বিভিন্ন ধরণের কর্মসূচি গ্রহণ করে। ইতোমধ্যে ভিসির বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলোর মধ্যে বেশকিছুর সত্যতা পেয়েছে ইউজিসি ও তদন্ত কমিটি।

(ঢাকাটাইমস/২৭জানুয়ারি/এলএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

শিক্ষা বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিক্ষা এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :