বিলুপ্তির পথে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য গরুর গাড়ি

প্রকাশ | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৩:২৭

চন্দন ভট্টাচার্য্য, রূপসা (খুলনা)

একসময় আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী বাহন হিসেবে গরুর গাড়ির প্রচলন ছিল। গ্রামবাংলায় গরুর গাড়িই ছিল যোগাযোগের একমাত্র বাহন। খুলনার রুপসা উপজেলায় কালের পরিক্রমায় আধুনিকতার স্পর্শে ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ি এখন শুধুই অতীতের স্মৃতি। গ্রামগঞ্জে আঁকাবাঁকা মেঠো পথে ধীরে ধীরে বয়ে চলা গরুর গাড়ি এখন আর চোখে পড়ে না।

গরুর গাড়ির ইতিহাস সুপ্রাচীন। নব্যপ্রস্তর যুগের সময় থেকেই মানুষ এই বাহনটি ব্যবহার করে আসছে। হরপ্পা সভ্যতাতেও যে গরুর গাড়ির অস্তিত্ব ছিল তার সপক্ষে প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ পাওয়া যায়। সেখানেও নানা অঞ্চল থেকে এক অক্ষ বিশিষ্ট চাকাওলা নানা খেলনা পাওয়া গেছে।

এগুলো থেকে বিশেষজ্ঞদের অনুমান, খ্রিস্টজন্মের ১৬০০ থেকে ১৫০০ বছর আগেই সিন্ধু অববাহিকা ও ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে গরুর গাড়ির প্রচলন ছিল। যা সেখান থেকে ক্রমে ক্রমে দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়ে
‘তোমার গরুর গাড়িতে বউ সাজিয়ে’ গান শুনলে অগোচরেই চোখে ভাসে মেঠো পথের ধারে ভাওয়াইয়া সুরে গাড়িয়াল ভাইয়ের গরুর গাড়ি। যদিও আজ আর চোখে পড়ে না গরুর গাড়ি। গ্রামগঞ্জে বিবাহের বর কনে আসা-যাওয়া করতো গরুর গাড়িতে। রাত-দুপুরে, ঘন অন্ধকারে বা জ্যোস্নার আলোয় আঁকাবাঁকা মেঠো পথে গাড়িয়াল গরুর গাড়ি করে বাড়ি পৌঁছে দিতো। একদিকে গাড়িয়ালের গানের সুর আর অপরদিকে কনের কান্নার সুর মিলেমিশে একাকার হয়ে যেত। 
বরযাত্রী থেকে শুরু করে কনে আনা চলতো এ গাড়ি দিয়ে। জমি থেকে ধান আনা, মালামাল পরিবহন ও যানবাহন হিসেবে  গরুর গাড়ি ছিল  অপরিহার্য। এখন গরু-মহিষের গাড়ি প্রায় দেখা যায় না বললেই চলে। আজকাল শহরের সঙ্গে গ্রামেও লেগেছে আধুনিকতার ছোয়া।
আধুনিক সবাই যানবাহনের ভিড়ে  ঐতিহ্যবাহী যানবাহনটি আজ বিলুপ্তির পথে। 

রুপসা উপজেলার নৈহাটির বাসিন্দা তারাপদ দে  বলেন, ‘আমার একটা গরুর গাড়ি ছিল। ধান, কুটা, কুড়া, খৈলসহ মালামাল আনা নেওয়ার জন্য। তবে আজ প্রায় ১৫ বছর এটি বন্ধ। আধুনিক সকল যানবাহন আসায় এটি এখন আর চলে না।’

(ঢাকাটাইমস/১১ফেব্রুয়ারি/এসএ)