একুশের চেতনা ধরে আছে আবুল বরকত স্মৃতি জাদুঘর ও সংগ্রহশালা

অনলাইন ডেস্ক
| আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৪:২৫ | প্রকাশিত : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৪:০৪

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ভেতরে স্থাপিত ‘ভাষা শহীদ আবুল বরকত স্মৃতি যাদুঘর ও সংগ্রহশালা’ বর্তমান প্রজন্মের মাঝে একুশের চেতনাকে ছড়িয়ে দিচ্ছে।

ভাষা আন্দোলনে আত্মোৎসর্গকারী শহীদ ও মহৎ প্রাণদেরকে আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে এবং ভাষা আন্দোলনের প্রকৃত ইতিহাস সংরক্ষণে রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের পাশে শহীদ আবুল বরকত স্মৃতি জাদুঘর ও সংগ্রহশালা স্থাপন করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র আবুল বরকতের নামে গড়া এই স্মৃতি জাদুঘর ও সংগ্রহশালা ২০১২ সালের ১২ মার্চ উদ্বোধন করেন ভাষাসৈনিক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি হাবিবুর রহমান।

দোতলাবিশিষ্ট জাদুঘরটি খুব বড় না হলেও একেবারেই ছোট নয়। এতে স্থান পেয়েছে বিভিন্ন সময়ের ভাষা আন্দোলনের বেশ কিছু দুর্লভ আলোকচিত্র, ভাষাশহীদ আবুল বরকতের যৌবনের আলোকচিত্র, তাঁর মা হাসিনা বিবি, বড় বোন শামসুন্নাহার, ছোট ভাই আবুল হাসনাত, মেজ বোন নুরুন্নাহারসহ পারিবারিক কিছু আলোকচিত্র। এতে স্থান পেয়েছে ১৯৪৮ সালের ২ সেপ্টেম্বর ও ১৯৪৯ সালের ২ জুলাই বাবাকে লেখা দুটি চিঠি। এছাড়াও বরকতের ব্যবহৃত তিনটি কাপ ও ছোট বেলার একটি খেলনা রয়েছে। রয়েছে আবুল ররকতের মরণোত্তর একুশে পদক, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রীর সনদ ও মার্কস শিট।

জাদুঘরে প্রবেশের পরেই বাঁ দিকের দেওয়ালে সাঁটানো আছে ভাষা আন্দোলন কেন্দ্রিক বিভিন্ন পত্রিকার অংশবিশেষ, বিভিন্ন সময়ের আন্দোলন ভিত্তিক বিভিন্ন আলোকচিত্র।

জাদুঘরটির উল্লেখযোগ্য আরেকটি দিক হচ্ছে গ্রন্থাগার। এই গ্রন্থাগারে শুধু ভাষা আন্দোলনের ওপর রচিত পাঁচ শতাধিক গ্রন্থ রয়েছে। সেই সাথে মুক্তিযুদ্ধের দলিলের খণ্ডসমূহ, মুক্তিযুদ্ধের ওপর রচিত বিভিন্ন দুর্লভ ও গুরুত্বপূর্ণ বই।

এই জাদুঘরটি সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার মোট পাঁচ দিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। দুপুর ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত দুপুরের খাবারের জন্য বন্ধ থাকে।

একুশের চেতনা ধারণকারী জাদুঘরটিতে নেই কোনো দর্শকের চাপ। বছরের অন্য মাসগুলোতে তেমন দর্শকের আগমন একেবারেই না থাকলেও ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতে কিছুটা দর্শকের আগমন ঘটে।

এ বিষয়ে জাদুঘরের অফিস সহকারী এনামুল হক বলেন, ‘এখানে দর্শকের আগমন খুবই কম। সারাদিন এমনিতেই বসে থাকতে হয়। তবে মাঝেমধ্যে স্কুল বা কলেজের শিক্ষকরা একটা ক্লাসের সবাইকে নিয়ে এখানে আসেন। তবে এটা খুবই কম।’

আবুল বরকত স্মৃতি জাদুঘরের পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ দেলোয়ার বলেন, ‘ভাষা আন্দোলনের ওপর একমাত্র বিশেষায়িত জাদুঘর এটি। ভাষাশহীদ বরকতের দুর্লভ চিঠিপত্র, বরকতের রক্তমাখা জামা-কাপড় ও ভাষাশহীদদের ছবি এখানে সংরক্ষণ করা হয়েছে। পাশাপাশি এখানে ভাষা আন্দোলনের ওপর বইয়ের একটি ভালো সংগ্রহ আছে। চার শতাধিক বই পাওয়া যাবে এখানে।’

অধ্যাপক দেলোয়ার আরও বলেন, ‘নতুন প্রজন্মকে মাতৃভাষা দিবস ও ভাষার জন্য জীবন উৎসৎর্গকৃত শহীদদের আত্মত্যাগ সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণার দেওয়ার জন্যই মূলত এটা চালু করা হয়েছে। শহীদ বরকত বাদে অন্য শহীদদের তেমন কোনো উপকরণ পাওয়া যায়নি বলে স্বল্প পরিসরে ভাষা আন্দোলন ও ভাষাসৈনিকদের ইতিহাসকে ধরে রাখতে এটির কার্যক্রম চালু আছে। এখানে মাঝে মাঝে ভাষা আন্দোলনের ওপর ডকুমেন্টারিও দেখানো হয়।’

জাদুঘরের বাইরের একটি নামফলক থেকে জানা যায়, ভাষাশহীদ আবুল বরকত ১৯২৭ সালে মুর্শিদাবাদ জেলার ভরতপুর থানার বাবলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ডাক নাম আবাই। তিনি ১৯৪৫ সালে তালিবপুর হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৪৭ সালে বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। দেশ বিভাগের পর ১৯৪৮ সালে তিনি ঢাকায় আসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৫১ সালে তিনি একই বিভাগ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি লাভ করেন। বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে বিক্ষোভরত ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশ গুলিবর্ষণ করে। আবুল বরকত গুলিবিদ্ধ হয়ে ঐ রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের অপারেশন থিয়েটারে শাহাদত বরণ করেন। তাঁকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়। মাতৃভাষা বাংলার জন্য আত্মোৎসর্গের স্বীকৃতি স্বরূপ তাকে ২০০০ সালে একুশে পদকে (মরণোত্তর) ভূষিত করা হয়।

(ঢাকাটাইমস/২০ ফেব্রুয়ারি/আরএল/এফএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিবেদন বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :