কুয়াশায় পথহারা বাংলাদেশি ৩২ জেলে ভারতে আটক
প্রকাশ | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৯:৩৪ | আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২১:৪৫
বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে কুয়াশায় পথ ভুলে ভারতীয় জলসীমানার ভেতরে ঢুকে পড়ে ট্রলার। এতে ভারতীয় কোস্ট গার্ড চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ৩২ জেলেকে আটক করেছে। এদিকে প্রশাসনের কাছে আটক জেলেদের মুক্তির আকুতি জানিয়েছেন তাদের স্বজনরা।
ট্রলার মালিক ও জেলে পরিবার সুত্রে জানা যায়, গত ৮ ফেব্রুয়ারি বাঁশখালীর শীলকূপ ঘাট থেকে এফভি সোনার মদিনা ট্রলারটি বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে যায়। ৫দিন পর (১৩ ফেব্রুয়ারি) সাগরের ঘন কুয়াশায় পথ হারিয়ে ভারতীয় জলসীমানার ভেতরে ঢুকে পড়ে ট্রলারটি।
এদিকে আটককৃত ৩২ জেলে বর্তমানে ভারতের দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফ্রেজারগঞ্জ কোস্টাল থানা ও নামখানা জেলহাজতে বন্দী আছেন বলে জানায় ট্রলার মালিক ও জেলেদের স্বজনরা। এ ব্যাপারে ভারতের ঐ দুই থানা থেকে ট্রলার মালিক ও জেলে পরিবারের কাছে বেশ কয়েকবার ফোন আসে বলে জানায় তারা।
আটককৃতরা জেলেরা হলেন- বাঁশখালীর শীলকূপ ইউনিয়নের মনকিচর এলাকার ওমর মিয়ার ছেলে শাহ আলম, ওমর কাজীর ছেলে মো. ছাবের, আলী আকবরের ছেলে ছৈয়দুল আলম, ওমর কাজীর ছেলে হাবিবুর রহমান, মোস্তফা আলীর ছেলে কামাল হোসেন, হাবিব উল্লাহর ছেলে জিয়াউর রহমান, কামাল উদ্দীনের ছেলে দিদারুল আলম ও জয়নাল আবেদিন, মুহাম্মদ আলীর ছেলে নুর হোসেন, মুহাম্মদ আলীর ছেলে আজগর হোসেন, সিকান্দার আলীর ছেলে আলী আহমদ, মোস্তফা আলীর ছেলে জাফর আহমদ, মো. ইউসুফের ছেলে আকতার হোসেন, মুহাম্মদ হানিফের ছেলে কবির হোসেন, হাসান আলীর ছেলে আবুল হোসেন, আহছান আলীর ছেলে নুরুল ইসলাম, ওমর কাজীর ছেলে জয়নাল উদ্দীন, আবুল কাশেমের ছেলে মাহমুদুল ইসলাম ও ওবাইদুল হক, আলী আহমদের ছেলে মো. আবদুল্লাহ, হারুনুর রশিদের ছেলে শামসুল আলম, নবী হোসেনের ছেলে সাদ্দাম হোসেন, শাহ আলমের ছেলে মো. ফারুক, আবদুল আজিজের ছেলে মো. জোনাইদ, লাল মিয়ার ছেলে আবদুল আজিজ, নুরুচ্ছফার ছেলে আহমদ নুর, ছৈয়দ নুরের ছেলে আরিফ উল্লাহ, আবদুস সালামের ছেলে হোসেন আহমদ, মোস্তফা আলীর ছেলে নুরুল আলম, নজির আহমদের ছেলে জসীম উদ্দীন এবং আমির আমজার ছেলে মো. ইয়াছিন।
এফভি সোনার মদিনা ফিশিং ট্রলারের মালিক নুরুল আবছার বলেন, ১৩ ফেব্রুয়ারি রাতে আমার মোবাইলে একটি কল আসে। ওই ফোন কলে আমাকে জানায় যে আমার ট্রলারটি অবৈধভাবে ভারতের জলসীমায় প্রবেশ করেছে এবং অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করার দায়ে ভারতীয় কোস্ট গার্ড ট্রলারে থাকা ৩২ জেলেসহ আমার ট্রলারটি আটক করে। এ বিষয়ে আমি বাঁশখালী থানায় ১৬ ফেব্রুয়ারি একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছি। এসময় তিনি ৩২ জেলেসহ ট্রলার ফেরত পেতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।
এদিকে আটক হওয়া জেলে হাবিবুর রহমানের পিতা ওমর কাজী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি আমার ৩ ছেলেকে ফেরত চাই। তাদের আর কোনোদিন সাগরে পাঠাব না। আমি প্রশাসনের কাছে আমার ছেলেদের ফেরত চাই। আমার ছেলেরা ত ভুল করে ওখানে গেছে। এটা ত তাদের দোষ নই। এ সময় তিনি অতি কান্নারস্বরে ছেলেদের ফিরে ফেতে প্রশাসনের কাছে আকুতি জানায়।
আটক এক জেলের মা হাছিনা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার বুকের ধন, আমার কলিজার ছেলেটা ভুলে ভারতের জলসীমায় ঢুকে পড়েছে। এতে আমার ছেলের কোন দোষ নাই। ঘরে আমার ছেলের দুইটা ছোট বাচ্চা বাবার জন্য কান্না করতেছে। বৌ টাও কান্না করতে করতে মরে যাচ্ছে। আমি সরকারের কাছে আমার ছেলেটা ফিরিয়ে আনার সহযোগিতা কামনা করি।
এ ব্যাপারে শিলকূপ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ মহসিন বলেন, আমার ইউনিয়নের এফভি সোনার মদিনা ট্রলারটি কুয়াশায় পথ হারিয়ে ভুল করে ভারতের জলসীমায় ডুকে পড়লে অনুপ্রবেশের দায়ে ৩২ জন জেলেসহ ট্রলারটি আটক করে ভারতীয় কোস্ট গার্ড। আটককৃত ৩২ জন আমার ইউনিয়নের নিববন্ধিত জেলে। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রীয়ভাবে জেলেদের ফিরিয়ে আনতে আমরা উপজেলা প্রশাসনের কাছে জেলেদের পুর্নাঙ্গ তালিকা জমা দিয়েছি।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী (ইউএনও) কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান চৌধুরী জানান, ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে আটক জেলেদের তালিকা সংগ্রহ করতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ তালিকা হাতে পেলে জেলেদের ফিরিয়ে আনতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
কোস্ট গার্ড পূর্ব জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা আব্দুর রউফ বলেন, আমরা এ বিষয়ে কোনো তথ্য পাইনি। আমরা খোঁজ নিচ্ছি।
ঢাকাটাইমস/ এআর