বন্য হাতির তাণ্ডবে তছনছ মাল্টা-তুলার বাগান

প্রকাশ | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২০:৩৯

সুজন সেন, শেরপুর

বন্য হাতির হামলায় আমাদের ঘর ও মালামালসহ প্রায় সাত লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। অনেক কষ্ট করে পরিকল্পিতভাবে তুলা আর মাল্টার চাষ করেছি। কিন্তু সব পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছে হাতির দল। কথাগুলো বলছিলেন, শেরপুরের ঝিনাইগাতীর গারো পাহাড়ের ছোট গজনী গ্রামে প্রায় ১৬ বিঘা জমিতে তুলা আর মাল্টার চাষ করা তরুণ উদ্যোক্তা আব্দুল আওয়াল।

তিনি বলেন, আমাদের আরো অনেক পরিকল্পনা আছে। কিন্তু হাতি যেভাবে ক্ষতি করেছে। এটা পুষিয়ে নেওয়া আমাদের পক্ষে এখন অসম্ভব।

তার আরেক বন্ধু তরুণ উদ্যোক্তা মেহেদী হাসান বলেন, আমরা শহরে পড়ালেখা করে এই পাহাড়ি এলাকায় এসেছি। এখানে আট বন্ধু মিলে কার্পাস তুলা আর মাল্টার চাষ করেছি। চার হাজার মাল্টার গাছ ছিল।

এই ক্ষেত পাহারা দেওয়ার জন্য অনেক টাকা ব্যয় করে একটি ঘর ও সোলার লাগিয়েছি। এখানে দুজন পাহারাদারসহ ছয়জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করেন। গেল মঙ্গলবার রাতে খাদ্যের সন্ধানে গহীণ অরণ্য থেকে নেমে আসা ২০-২৫টি বন্য হাতির একটি দল হামলা করে ক্ষেতের পাহারা দেওয়া ঘরসহ সোলার প্যানেল ভেঙে তছনছ করেছে। ক্ষেত থেকে তুলে জমানো কার্পাস তুলার বস্তাগুলো মাটির সাথে মিশিয়ে ফেলেছে। ক্ষেতের তুলা আর মাল্টার সব গাছ খেয়েছে। বন্য হাতির হামলায় আমাদের সব ভেঙে চুরমার।

এ জন্য সরকারের কাছে বন্য হাতির হামলা থেকে রক্ষা পেতে এবং নতুন করে চাষাবাদে আর্থিক সহায়তার চান এই উদ্যোক্তারা।

শুধু এখানেই  শেষ নয়, চলতি মাসে স্থানীয় চারটি গ্রামে কমপক্ষে অর্ধশত বাড়িঘর আর ফসলি জমিতে হামলা চালিয়েছে বন্য হাতি। এ সময় একটি বন্য হাতি মারাও গেছে। প্রতি রাতেই চামলা চালাচ্ছে বন্য হাতি।

বুধবার সরেজমিনে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তুলে ধরেন বন্য হাতির তাণ্ডবের নানা চিত্র।

স্থানীয়রা জানায়, ঝিনাইগাতী উপজেলার সীমান্তঘেঁষা গারো পাহাড়। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পোড়াকাশিয়া এলাকা থেকে নেমে আসা ২০-২৫টি বন্য হাতির একটি দল চলতি মাসেই এই পাহাড়ের ছোট গজনী, বড় গজনী, নওকোচি ও হালচাটি গ্রামে প্রবেশ করে অন্তত অর্ধশত বসতবাড়ি, ফসলের ক্ষেত, ড্রাগন  ও আনারসের বাগানে হামলা করেছে। এতে প্রায় ৩০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা।

অন্যদিকে মারা গেছে একটি বন্য হাতি। প্রতিদিন বিকাল হলেই লোকালয়ে নেমে আসছে বন্য হাতির দল। হাতির আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে গ্রামবাসী দলবদ্ধভাবে লাঠিসোঁঠা, লাইট, মশাল ও ঢাকঢোল পিটিয়ে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করছে। তবে কিছুই কাজে আসছে না। বরং ক্রমেই বাড়ছে বন্য হাতির হামলা। এতে আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে পাহাড়ের গ্রামবাসী। 

বন বিভাগের সহায়তায় গঠিত বন্য হাতি তাড়ানোর ইআরটি নামে একটি সংগঠনের স্থানীয় টিম লিডার আব্রাহাম সাংমা বলেন, আমরা বন বিভাগ থেকে হাতি তাড়ানো জন্য প্রশিক্ষণ পেয়েছি। কিন্তু তেমন কোনো সরঞ্জাম পাই নাই। তাছাড়া আমাদের লোকবলও কম। এটা দিয়ে হাতি তাড়ানো আমাদের পক্ষে সম্ভব না। এ জন্য প্রয়োজন প্রত্যেককে একটি করে জগ লাইট, মশাল জ্বালানো প্রয়োজনীয় কেরোসিন ও লোকবলসহ আর্থিক সহায়তা।

স্থানীয় ইউপি সদস্য গোলাপ হোসেন বলেন, রাত হলে পাহাড়ের ঝোপ-জঙ্গল থেকে ক্ষুধার্ত বন্য হাতির দল বেঁধে নেমে আসছে লোকালয়ে। হামলা চালাচ্ছে বাড়িঘরে। খেয়ে সাবাড় করছে গাছপালা। বাধা দিতে গেলে শুরু হয় হাতি ও মানুষের যুদ্ধ। ঢাকঢোল পিটিয়ে আর মশাল জ্বালিয়ে ঠেকানো যাচ্ছে না হাতির তাণ্ডব। এখন আমাদের এই চারটি গ্রামের তিন-চার হাজার মানুষ হাতি আতঙ্কে দিন পার করছে।

রাংটিয়া রেঞ্জ অফিসার মকরুল ইসলাম আকন্দ বলেন, বন্য হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে সরকারিভাবে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। তবে বন্য হাতি তাড়ানোর জন্য বন বিভাগ ও স্থানীয় ইআরটি নামের একটি সংগঠনের লোকজন চেষ্টা করছে।

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় বন্য হাতি হামলা চালাচ্ছে। এ জন্য প্রয়োজন হাতির কবল থেকে গারো পাহাড়ের বাসিন্দাদের জানমাল ও ফসল রক্ষা করা।

অন্যদিকে হাতি রক্ষায়ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দাসহ সচেতন মানুষেরা।

(ঢাকাটাইমস/২৩ফেব্রুয়ারি/এলএ)