লালমনিরহাটে বৈরী আবহাওয়ায় আলু ক্ষেতে পচন, বিপাকে চাষিরা

মাজহারুল ইসলাম বিপু, লালমনিরহাট
 | প্রকাশিত : ০২ মার্চ ২০২২, ১৮:৪৭

লালমনিরহাটে বৃষ্টি, শৈত্য প্রবাহ ও ঘন কুয়াশার কারণে আলু ক্ষেতে ছত্রাক, লেট ব্রাইড, পাতা পচনসহ বিভিন্ন রোগ বালাই ছড়িয়ে পড়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চাষিরা। জেলার ৫টি উপজেলায় বিস্তীর্ণ আলু ক্ষেতে এসব রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। সরকারি পর্যায়ে আলু বিদেশে রপ্তানি, মূল্য নির্ধারণসহ কৃষি বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে ভুক্তভোগীরা। লালমনিরহটের মাটি আলুসহ বিভিন্ন জাতের সবজি চাষের উপযোগী হওয়ায় এখানকার চাষিরা প্রতিবছর আলু চাষ করে জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। চলতি মৌসুমে জেলার ৫টি উপজেলায় ৫ হাজার ৭২৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

আলু চাষে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলেও ভরা মৌসুমে আলুর দরপতন ও বৃষ্টি, শৈত্য প্রবাহ ও ঘন কুয়াশার কারণে চলতি মৌসুমে আলু চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার আশংকা রয়েছে। রোগ বালাইয়ে আক্রান্ত ফলনে প্রায় ৩ হেক্টর আলুর ক্ষেতে কোনো ধরনের ওষুধ স্প্রে করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। কিন্তু বেসরকারি পর্যায়ে এর ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণ অনেক বেশি। গত বছর এ সময়ে যেখানে প্রতি মণ আলু বিক্রি হয়েছে ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায়। এখন সেই আলু বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায়। এতে বিঘাপ্রতি চাষিদের লোকসান হচ্ছে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা। এখন যতই দিন যাচ্ছে ততই দাম কমছে আলুর। আলুর চাষ করে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় লোকসান দেখতে হচ্ছে আলু চাষিদের।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার হারাটি ইউনিয়নের মোকসেদ আলী জানান, আমি আলু লাগাইছি ৫০ শতক মাটিত আমার খরচ হইছে ৪০ হাজার। এখন ওষুধ স্প্রে করি ১০-১২ বার। তবু ওষুধে কোনো কাজ করে না। এখন আমি যে পয়সা খরচ করছি এ পয়সা আমার উঠবে না। সরকারের কাছে দাবি, সরকার তো আলু নেবে না, আমরা এখন এই আলুগুলা কী করবো।

সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের আজগার আলী জানান, ‘এমনিতেই ব্লাড, ছত্রাক বিভিন্ন রোগে এই বৃষ্টিটা হওয়ার পর থেকে আলু সব নষ্ট হওয়া শুরু করছে। কোনো ওষুধে কাজ করে না। ৬০ শতক জমি আবাদ করছি। কয়েক দিন আগে আলু উঠায়ছি সেটা ৭ টাকা দরে বিক্রি করছি জমিতে তাতে আমার ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা ক্ষতি। আমি বিনীত অনুরোধ করবো সরকারের কাছে যদি এই আলুটা যদি বিদেশে নেওয়ার ব্যবস্থা করতো তাহলে কৃষক উপকৃত হইতো।’

একই এলাকার এনামুল হক জানান, ‘বৃষ্টি আর কুয়াশা এতে আলু ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। এক একর জমি আবাদ করছি তাতে লাখ খানেক টাকা খরচ হয়ে গেছে। ওষুধ যে দিচ্ছি তাতে প্রচুর টাকা খরচ হয়ে গেছে। সে অনুযায়ী আমাদের লস ছাড়া আয় হবার লাগছে না। আলুর নাই দাম। এখন জনগণ যদি আলুর দাম না পায় তাহলে কৃষকরা ক্ষতি হয়ে যাইবে।’

সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের আনোয়ার আলী জানান, ‘আমরা যে আলু আবাদ করি বর্তমানে আবহাওয়ার কারণে বৃষ্টি বাদল হয় শৈত্য প্রবাহ হয় এতে আলুর খুব ক্ষতি হয়। কৃষকও এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমি ৫০ শতক জমি করছি তাতে ৪০ হাজার টাকার মত খরচ। মাত্র ২০-২৫ হাজার ওপর উঠবে না। আবাদ পচন ধরছে পানি আসছে বাজার কম এই আমরা ক্ষতিগ্রস্ত এ ব্যাপারে কৃষি বিভাগ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এটার পদক্ষেপ সরকার যদি নিত তাহলে আমরা এক ক্ষতিগ্রস্ত হতাম না।

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শামীম আশরাফ জানান, চলতি মৌসুমে লালমনিরহাট জেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৭২৫ হেক্টর। তার বিপরীতে আমাদের ৬ হাজার ১১০ হেক্টর জমির আবাদ অর্জন হয়। এই জেলায় বৃষ্টিপাতের কারণে এবং ক্রমাগতভাবে বেশ কিছু দিন যাবত শৈত্য প্রবাহ থাকার কারণে এবং নিম্ন তাপমাত্রা থাকারণে দেখা গেল অনেক যাওয়াতে ছত্রাক, লেট ব্রাইট,পাতা পচন, নানা রোগসহ বিভিন্ন রোগ বালাই ছড়িয়ে পড়েছে এতে ৩. ২ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়। এই ৩. ২ হেক্টর জমি আমরা দমন করে ফেলি বিভিন্ন ধরনের ছত্রাক নাশক ব্যবহার করা হয়। ছত্রাক নাশক ব্যবহার করে দমন করে ফেলি রোগ বালাই দমনে কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ২২ টন আমাদের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে তার বিপরীতে দেখা যাবে অধিক ফলন আসবে।

(ঢাকাটাইমস/২মার্চ/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :