নারীর ক্ষমতায়নে বড় ভূমিকাটা পরিবারের: ইউএনও লিজা

প্রকাশ | ০৮ মার্চ ২০২২, ০৭:৪৬ | আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২২, ১২:০৫

কৌশিক রায়, ঢাকাটাইমস

‘নারীর বুদ্ধিতে সংসার চালালে ধ্বংস নেমে আসবে’ বলে সমাজের কারও কারও বদ্ধমূল দৃষ্টিভঙ্গি নারীর ক্ষমতায়নে অন্তরায় হিসেবে দেখেন ইউএনও কানিজ ফাতেমা লিজা।

লিজা বলছেন, দৈনন্দিন জীবনে নানা সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর মতামতকে গুরুত্ব দিতে হবে। নারী মানেই দুর্বল চিত্তের হবে এমন ধারণাকে বিদায় দিতে হবে।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস ঘিরে ঢাকা টাইমসের সঙ্গে আলাপচারিতায় বর্তমানে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাংলাদেশের সামাজিক বাস্তবতায় নারী উন্নয়নের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন।

বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ৩৩তম ব্যাচের কর্মকর্তা লিজা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের বেশিরভাগ পরিবারগুলোতে মেয়েদের ছোট করে দেখার প্রবণতা আছে। অনেকক্ষেত্রে দেখা যায়, পরিবারের অন্য নারীরাই আন্ডার এস্টিমেট করেন।’

ইউএনও লিজা মনে করেন, সমাজে রাতারাতি কোনো ধারণা বা দৃষ্টিভঙ্গির বদল হয় না। পরিবর্তনটা শুরু করতে হবে পরিবার দিয়েই। তাহলেই সামগ্রিক একটা পরিবর্তন সাধন হবে।

‘এখন অবশ্য আগের থেকে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণের হার বেড়েছে। চাকরি বা অন্যান্য কর্মক্ষেত্রেও নারী এখন ভূমিকা পালন করছে। অর্থাৎ নারীর অর্থনৈতিক সক্ষমতা বেড়েছে। তবে মতের স্বাধীনতায় মেয়েরা এখনো ঠিকভাবে গুরুত্ব পাচ্ছে না, সেটা বৃদ্ধি করতে হবে’—যোগ করেন উপজেলা প্রশাসনের গুরুদায়িত্ব পালনকারী এই প্রশাসন কর্মকর্তা।
এই ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলের বিষয়ে লিজা বলেন, ‘আমাদের বয়ঃজ্যেষ্ঠ যারা আছেন, তাদেরকে বুঝাতে হবে- সংসারে একজন ছেলে যতখানি উপকারী একটি মেয়েও ততখানি উপকারীর ভূমিকা রাখতে পারে। এজন্য উদাহরণ টেনে পরিবারে বয়ঃজ্যেষ্ঠদের কাউন্সেলিং করানো যেতে পারে।’

উপজেলার প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন এবং কাজের চাপের বিষয়ে কানিজ ফাতেমা লিজা ঢাকা টাইমসকে বলেন, একজন ইউএনও হিসেবে একটি চাপ থাকে। আমাদের কাজগুলো নারী-পুরুষ নির্বিশেষে নির্ধারণ করা হয়। যে কারণে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নারী হওয়ায় একটা বাড়তি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা লাগে।’

লিজা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা টেনে বলেন, ‘কাজ করার ক্ষেত্রে একজন পুরুষ যে চাপটা কম অনুভব করেন, একজন নারীও সেটি কিন্তু অনুভব করেন। যেমন তার মধ্যে একটা চাপ থাকেই যে তাকে সফল হতে হবে। ব্যর্থ হলে মেয়ে বলে পারোনি এমন একটা কথা তাকে শুনতে হয়।’

পরিবার ও সমাজের দায়িত্ব পালনে সমন্বয় করা একজন কর্মজীবী নারীর জন্য আরেকটা বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু পারিবারিক সাপোর্ট যদি থাকে তাহলে বিষয়টা সহজ হয়ে যায়। তিনি নিজে সংসার ও চাকরি সামলাতে গিয়ে পরিবার থেকে সেই সাপোর্ট পান বলে জানালেন এই ইউএনও।

লিজা বলেন, ‘পরিবারের শতভাগ অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতা নিয়েই কিন্তু আমি এ পর্যন্ত উঠে এসেছি। মা-বাবার পাশাপাশি আমার শ্বশুরবাড়ি থেকেও সম্পূর্ণ সাপোর্ট পেয়েছি।’

সিরাজগঞ্জের মেয়ে কানিজ ফাতেমা লিজার পড়াশোনা ইংরেজি সাহিত্যে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করার পর বিসিএসে বসেন তিনি। ৩৩তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দেওয়া লিজা ২০২০ সালের ৬ ডিসেম্বর শৈলকুপা উপজেলার ইউএনওর দায়িত্ব নেন।

(ঢাকাটাইমস/০৮মার্চ/ডিএম)