‘নারীদের মানুষ হিসেবে দেখলেই সব ক্ষেত্রে এগিয়ে যাবে’

প্রকাশ | ০৮ মার্চ ২০২২, ০৯:৪৫ | আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২২, ১০:১৩

নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ বলেছেন, ‘সমাজে  নারী-পুরুষ হিসেবে  নয়, মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখলেই সকল ক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে যাবে।’

৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। লিঙ্গ সমতার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই দিনটি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে পালন করে। এই দিবস উপলক্ষে বৈষম্য দূরীকরণ, নারীটক্ষমতায়ন ও নারীদেরকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে ঢাকা টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন ড. শাম্মী আহমেদ।  

তিনি বর্তমানে আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকেরর দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে ইন্টারন্যাশনাল রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ছিলেন। তার বাবা মহিউদ্দিন আহমেদ বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকেই তার রাজনীতিতে হাতেখড়ি হয়েছিল। তিনি একজন নারী হয়ে এখন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। এতো পথ এগিয়ে আসতে বহু চড়াই উৎরাই পেরুতে হয়েছে তার। 

শাম্মী আহমেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার লক্ষ্যে নারীদেরও ভূমিকা অপরিহার্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেমন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত, শোষণ-বঞ্চনা ও দুর্নীতিমুক্ত একটি উন্নত-সমৃদ্ধ-আধুনিক রাষ্ট্র গাড়ে তুলে কাজ করে যাচ্ছেন সেখানেও নারীরা তাদের কর্মদক্ষাতার স্বাক্ষর রেখে যাচ্ছেন। সকল ক্ষেত্রেই নারীরা। তবে, নারীদের আরও এগিয়ে যাওয়া জন্য কর্মক্ষেত্রে কোটা রাখতে হবে।’ 

স্বাধীনতার ৫০ বছরে দেশের রাজনীতিতে নারীর ক্ষমতায়ন কতটা বেড়েছে এবং নারীদের অংশগ্রহণের পথ কতটা মসৃণ বলে মনে করেন- এ প্রশ্নের জবাবে ড.শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশের নারীরা রাজনীতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন কর্ম ক্ষেত্রে অবশ্যই এগিয়েছে। বাংলাদেশের সাংবিধানিক অধিকারের ক্ষেত্রে নারীরা আইন প্রশাসন, রাজনীতিবিদ, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রেই তাদের বিচরণ বিদ্যমান। তবে নারীদের পথচলা এখনো তেমন মসৃণ নয়। কারণ নারীদের এগিয়ে যেতে অনেক বাধা বিঘ্ন অতিক্রম করতে হয়। যতদিন পর্যন্ত আমাদের সমাজ নারীদের মানুষ হিসেবেই দেখতে না পারবে, ততদিন পর্যন্ত নরীদের পথ মসৃণ হবে না। এজন্য আমাদের সমাজের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে। নারীকে নারী হিসেবে না দেখে, মানুষ হিসেবে দেখলেই সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় সমাজের এ দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হবে। তখনই নারীদের পথচলা আরো মসৃণ হবে।’

‘আপনাদের সময় রাজনীতিতে আসা মেয়েদের জন্য যতটা চ্যালেঞ্জ ছিল এখনো কি তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে?’ এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমার রাজনৈতিক হাতেখড়ি ছাত্রজীবন থেকেই। ছাত্রজীবনে রাজনীতিতে আসা যতটা চ্যালেঞ্জ ছিল এখনো যে তা নেই, সেটা বলা যাবে না। আমার দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে থাকে। আমাকে তারা সহকর্মী না ভেবে তাদের বোন ভেবে কাজ করেন। মেয়েদের শুধু পারিবারিক বা সামাজিক প্রতিবন্ধকতা থাকে তা নয়, তাদের জীবনে বায়োলজিক্যাল কিছু সমস্যাও থাকে, সেগুলোকেও ওভারকাম করতে হয়। আমি বলব, মেয়েরাও নিজেদের জায়গা থেকে নিজেরা অনেক পিছিয়ে আছে। একটা মেয়েকে এগিয়ে আসতে হলে অবশ্যই পুরুষদের তুলনায় সাহসী ও দক্ষ হতে হবে।’

ড. শাম্মি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নারী, জাতীয় সংসদের স্পিকার নারী, আইনজীবী, ক্রিকেটার, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার সকল কর্মক্ষেত্রেই নারীরা আছে। সেই ক্ষেত্রে নারীরা তাদের কাঙ্ক্ষিত পথের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে পুরুষদের সঙ্গে নারীদের প্রতিযোগিতা নয়, নারীরা সাহসিকতা যোগ্যতার ভিত্তিতেই এগিয়ে যাচ্ছে। তবে আমি যদি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বলি, পুরুষের চেয়ে সকল ক্ষেত্রে নারীদের একটু কাজ বেশি করতে হয়। এখনো আমাদের সমাজ অমনভাবে সৃষ্টি না হওয়ায়, ঘরে এবং বাইরে দু'জায়গাতেই নারীদের কাজ করতে হয়। যার যার সমাজস্বীকৃত কিছু রুল আছে, সে অনুযায়ী কাজ করতে হয়। পুরুষদের সঙ্গে কোনো প্রতিযোগিতা নয়,নিজের কাজ নিজে করতে হয়। প্রতিযোগিতা শুধু নারী-পুরুষে নয়, পুরুষে পুরুষেও প্রতিযোগিতা হয়। সব কর্মক্ষেত্রেই প্রতিযোগিতা আছে এবং সেটা যদি পজিটিভ আকারে হয় তাহলে সমৃদ্ধশালী হওয়া যায়। এ পজিটিভ প্রতিযোগিতা ছাড়া মানুষ তার কাঙ্খিত জায়গায় পৌঁছতে পারেনা।’

যেহেতু আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী একজন নারী এবং দেশ উন্নয়নের ক্ষেত্রে নারীদেরকেও এগিয়ে আসতে হবে। তাই নারীদের আরও বেশি ক্ষমতায়নের সুযোগ রয়েছে বলে কি মনে করেন?  এ প্রশ্নে আওয়ামী লীগের এই আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক বলেন, ‘শুধু নারী নয়, প্রতিটা মানুষেরই ক্ষমতায়ন প্রয়োজন। কর্মক্ষেত্রে ক্ষমতায়ন না হলে কাজ করে এগিয়ে যাওয়া যায় না। নারী বান্ধব কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি করার জন্য শুধু সরকার নয়, সরকারি-বেসরকারি সকল উদ্যোক্তাই এগিয়ে আসতে হবে। একটা দেশকে এগিয়ে নিতে হলে, দেশ ও জনগণের চাহিদা মোতাবেক নারীদের জন্য সবকিছুতেই সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। এই বিষয়গুলো জেনে কাজ করলে নারীর ক্ষমতায়নের অনেক সুযোগ আছে। যেহেতু নারীরা তাদের যোগ্যতার প্রমাণ দেখিয়েছে। তারপরেও সমাজে নারীরা পিছিয়ে, তাই নারীদের জন্য একটি কোটা রাখতে হবে। সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানকে নারী উন্নয়নের জন্য একত্রিত হয়ে কাজ করতে হবে।’ 

একজন নারীর এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সমাজ ও তার পরিবার যথাযথ ভূমিকা পালন করছে বলে মনে করেন কি- এ প্রশ্নের জবাবে ড. শাম্মী আহমেদ বলেন, ‘পরিবারের ভূমিকা তো নেই। কিন্তু একজন নারী কিভাবে তৈরি হবে সেটা পরিবার থেকেই শিখে। একজন ব্যক্তি যখন নিজেকে রিপ্রেজেন্ট করে তখন শুধু নিজেকেই রিপ্রেজেন্ট করে না, তার পরিবারের শিক্ষা, পুঁথিগত শিক্ষা, সমাজ, সংস্কৃতি সবকিছু রিপ্রেজেন্ট করে। এই পরিবার থেকেই মেয়েদের একটা বৈষম্যের দিকে নিয়ে যায়। পরিবারের ঐতিহ্য ও সামাজিকতা- এসবের চিন্তাভাবনা থেকে বৈষম্যের সৃষ্টি। ছোটবেলা থেকেই যদি আমরা ছেলে-মেয়েকে  বৈষম্যহীনভাবে একসাথে তৈরি করতে পারি তাহলে বৈষম্য থাকেনা।’

এজন্য একটি পরিবারের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তারপরে প্রাতিষ্ঠানিক, সামাজিক, সংস্কৃতি, সংগঠন, শিক্ষাজীবন থেকে শুরু করে একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ হওয়ার আগ পর্যন্ত যে সব ধাপ পার হয় সেগুলোর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে সবার প্রথমে বাবা-মা, দাদা-দাদী, আত্মীয়-স্বজন, তাদের ভূমিকা বেশি। আগে এসব লোকদের বুঝতে হবে, প্রত্যেকটা মানুষই একজন মানুষ, নারী-পুরুষের কোনো ভেদাভেদ নেই, কাজে কোনো ভেদাভেদ নেই। সেজন্য সমাজের কালচারাল, শিষ্টাচার, নিয়ম-নীতির সামাজিকতা, সংস্কৃতি-ঐতিহ্য সবকিছুতে বৈষম্যহীনভাবে ছেলে মেয়েকে গড়ে তুলতে হবে। যাতে এই মানুষটি দেশ ও সমাজের জন্য মুখ্য ভূমিকা রাখে।’

(ঢাকাটাইমস/০৮মার্চ/এফএ)