নারীকে মানুষ ভেবেই সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে: এসপি জয়িতা

প্রকাশ | ০৮ মার্চ ২০২২, ১১:০৮

আবদুল হামিদ, ঢাকাটাইমস

নারীর সফলতার পেছনে পরিবারের ভূমিকাকে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখছেন র্যা ব-৪-এর উপ-পরিচালক পুলিশ সুপার জয়িতা শিল্পী। এইক্ষেত্রে পরিবারের পুরুষ সদস্যদের ইতিবাচক মনোভাব সবচেয়ে কার্যুকরি বলেই তার অভিমত।

আন্তর্জাতিক নারী দিবসের দিনে ঢাকা টাইমসের সঙ্গে আলাপাচারিতায় পুলিশে কৃতিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসা এই কর্মকর্তা এসব কথা বলেন। আলাপে তিনি নারী হিসেবে কর্মজীবনের নানান অভিজ্ঞতাও তুলে ধরেন।

জয়িতা শিল্পীর বাড়ি পিরোজপুরে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অর্নাস-মার্স্টাস শেষ করে ২৭তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারে যোগদান করেন তিনি। ২০১০ সালে মাগুরা জেলায় সহকারি পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে যোগ দিয়ে কর্মজীবন শুরু তার। পরে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের স্টাফ অফিসার টু কমিশনার পদে দায়িত্ব পালন করেন।

এছাড়া জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশন ডিআর কঙ্গোতে সফল্যতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। মিশন শেষে দেশে ফিরে যোগ দেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগে সহকারী কমিশনার (এডমিন শাখায়)।
পরে ডিএমপি সদর দপ্তরের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (লিগ্যাল এ্যাফেয়ার্স) হন। এছাড়া ময়মনসিংহ জেলার ডিএসবি, ক্রাইম ও প্রশাসন শাখায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা। গত বছরের ১৮ মে র্যা পিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নে (র্যা ব) আসেন তিনি। একই বছর ১৭ আগস্ট র্যা ব-৪ এর উপ-পরিচালক হন জয়িতা শিল্পী।

প্রশাসনের বিভিন্ন শাখায় গত এক যুগ ধরে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্বে পালনের সময় অর্জন করেছেন ২০১৯ সালে আইজি ব্যাজ। এছাড়া অর্জন করেছেন জাতিসংঘ পদক।

জয়িতা শিল্পী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘একজন নারীকে শুধু নারী মনে করে নয়, বরং মানুষ মনে করে সুবিধা দেওয়া উচিত। নারীর বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন প্রয়োজন। নারীরা পুরুষের তুলনায় বাইরের জগৎ সম্পর্কে কম জানে। তাদেরকে ঘরের বাইরে আনতে হবে। নারীকে উপযুক্ত কর্মপরিবেশ দেওয়া প্রয়োজন। নারী যেন কোনো ভাবে বৈষম্যের শিকার না হয়। নারীকে উপযুক্ত কর্মপরিবেশ দিলে নারীরা অবশ্যই ভালো করবে।’
এসপি জয়িতা শিল্পী বলেন, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের সঙ্গে নারীদের নিজেদের মন-মানসিকতাও পরিবর্তন করে এগিয়ে আসতে হবে। কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা জরুরি। নারীকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলতে হবে। রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে নারী নেতৃত্ব বৃদ্ধি করতে হবে। এসব ক্ষেত্রে যত বেশি সংখ্যক নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যাবে, তত বেশি নারী নেতৃত্ব তৈরি হবে।’

তিনি বর্তমানে র‌্যাবে কাজ করার বিষয়টি টেনে ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘র‌্যাব পুলিশের একটি এলিট ফোর্স। এখানে সবার জন্য একইরকম কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে। এছাড়া বৈষম্যহীন পরিবেশে নারীরা স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পায়। এটি নারী নেতৃত্ব বিকাশের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

নারীর নিরাপত্তায় র‌্যাবের সক্রিয়তার বিষয়টি উল্লেখ করে এসপি জয়িতা শিল্পী বলেন, ‘র‌্যাবে নারী ভিকটিমদের জন্য পৃথক ব্যবস্থা না থাকলেও যেকোনো স্পর্শকাতর বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে কুইক রেসপন্স করা হয়। নারীদের যেকোনো স্পর্শকাতর বিষয়ে র‌্যাব দ্রুত গতিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। এজন্য র‌্যাব সাধারণ মানুষের আস্থাও অর্জন করেছে।’

একজন নারীর সফলতার পেছনে পরিবারের সকলের সুন্দর মানসিকতা লালন করা জরুরি বলে মনে করেন এসপি জয়িতা শিল্পী। তিনি বলেন, ‘এছাড়া নিজের কর্মের প্রতি ভালোবাসা, নিষ্ঠা ও একাগ্রতা থাকতে হবে। আমি নিজে যে কাজটি করি সেটা সর্বোচ্চ ভালো করার চেষ্টা করি। নিজের চেষ্টায় অটল থাকি। প্রতিবন্ধকতা থাকবেই, সেগুলোকে ডিঙিয়ে এগিয়ে যেতে হয়। আর সেটাই সফলতা।

কর্মব্যস্ততার অবসরে জয়িতা শিল্পী বই পড়ে গান করে সময় কাটাতে ভালোবাসেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আবৃত্তি চর্চার অভ্যাস এখনো জারি রাখার পাশাপাশি নিজে লেখালেখিও করেন র‌্যাবে কর্মরত এই পুলিশ কর্মকর্তা।

র‌্যাবের এই চৌকস কর্মকর্তা বাহিনীর কাজের মধ্যেই সীমাবন্ধ থাকেননি। সংগ্রহ করেছেন দেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, তুলে এনেছেন দেশের বিভিন্ন আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবহেলায় পড়ে থাকা বীরাঙ্গনাদের কথা।

পুলিশ নিয়ে লেখা ‘রাজারবাগে প্রজার পুলিশ’ প্রবন্ধগ্রন্থ দিয়ে লেখালেখি শুরু করা জয়িতা শিল্পীর নতুন একটি বইও প্রকাশ হয়েছে। ‘১৯৭১: সম্ভ্রমের স্বাধীনতা’ নামের বইটি এবার মেলায় এনেছে পারিজাত প্রকাশনী।
(ঢাকাটাইমস/০৮মার্চ/ডিএম)