টেকসই আগামীর জন্য আজকের লিঙ্গ সমতা

অনলাইন ডেস্ক
| আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২২, ১৪:১৩ | প্রকাশিত : ০৮ মার্চ ২০২২, ১৪:০৯

“বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর,

অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর

এই উক্তির মাধ্যমে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে নারী পুরুষের সমতার কথা।কিন্তু আদৌ কি আমাদের সমাজে তার প্রতিফলন দেখা যায়?

২০২২ সালের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হলো,‘টেকসই আগামীর জন্য আজকের লিঙ্গ সমতা।’

বলশেভিক আন্দোলনের নেতা ভ্লাদিমির লেলিনের মতে,‘নারীর সাহায্যে তার চিন্তাশীলতা ও সচেতনতায় নব সমাজের নির্মাণ সুদৃঢ় হতে পারে।’

একটি শিশুর বিকাশ শুরু হয় তার পরিবার থেকে এবং যার প্রধান ভিত্তি গড়েন মা। একটি ক্ষুধা, দারিদ্রমুক্ত ও সুন্দর পৃথিবী বিনিমার্ণে নারী পুরুষ উভয়েরই যৌথ প্রচেষ্টা।

নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত ‘মতিচূর’ প্রবন্ধে লিখেছেন,‘যে শকটের এক চক্র বড় (পতি) এবং এক চক্র ছোট (পত্নী) হয়, সে শকট অধিক দূরে অগ্রসর হইতে পারে না; সে কেবল একই স্থানে (গৃহকোণেই) ঘুরিতে থাকিবে। তাই ভারতবাসী উন্নতির পথে অগ্রসর হইতে পারিতেছে না।’

লিঙ্গ সমতা মানে এই নয় যে নারী পুরুষের সদৃশ হওয়া। লিঙ্গ সমতা বলতে এখানে নারীদের অধিকার, সম্মান এবং প্রাপ্যকে বোঝানো হয়েছে। লিঙ্গ সমতা প্রতিষ্ঠায় নিচের ৩টি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

#বদলাতে হবে চিন্তা ভাবনা

#দিতে হবে উৎসাহ

#গড়তে হবে আত্মবিশ্বাস

উপরের তিনটি বিষয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই ভবিষ্যতের টেকসই সমাজ বিনির্মাণের পথ সুগম হবে।

অতীতের তুলনায় নারীরা বহুদূর অগ্রসর হলেও সমাজে নারীরা নিরাপত্তার শঙ্কায় ভুগে। কারণ একটি ছেলে অনায়াসে যেকোনো স্থানে নিরাপদে চলাফেরা করতে পারে। এর জন্য সামাজিকভাবে তাকে কোনো প্রতিবন্ধকতার শিকার হতে হয় না। কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে চিত্রটা ভিন্ন। কারণ কোন মেয়ে রাতে ঘরের বাইরে চলাফেরা করতে পারে না। যদি সে কোনো বিপদের সম্মুখীন হয়, তাহলে সমাজ ভুক্তভোগী নারীর দিকেই আঙুল তোলে। সে রাতে কেন ঘরের বাইরে ঘুরতে গেছে সেটা নিয়ে শুরুতেই প্রশ্ন তোলে। ফলে নির্যাতনকারীর তুলনায় ভুক্তভোগী বেশি অপরাধী হয়ে যায়।

আমাদের চিন্তাভাবনা এর পিছনে মূল কারণ। এ কারণে আমাদের চিন্তা ভাবনার পরিবর্তন দরকার।

আমরা যেকোনো কিছুতে উদার হলেও নারীর উন্নতিতে প্রশংসা ও উৎসাহ দিতে বড়ই কৃপণ। উৎসাহ প্রদানে নারীরা পুরুষের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে যায় কিনা আবার! কিন্তু একটু উৎসাহে পরিবর্তন হতে পারে বহু নারীর জীবন, তারা পেতে পারে বেঁচে থাকার শক্তি, জাগতে পারে আশার আলো!

যেমনটা নজরুল বলেছেন,

জাগো নারী জাগো বহ্নি-শিখা।

জাগো স্বাহা সীমন্তে রক্ত-টিকা’

একজন নারীর জীবন সংগ্রামে তার নিজের আত্মবিশ্বাস অনেক জরুরি। আত্মবিশ্বাস ব্যতীত কেউ সামনে এগিয়ে যেতে পারে না। এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক বিষয়। সমাজের মানুষের সামান্য কথায় দমে গেলে নারীরা পরাজিত হয় তাদের আত্মবিশ্বাসের কাছে। তাই আত্মবিশ্বাস তৈরী করে সমাজে নিজের অবস্থান প্রতিষ্ঠা করাই হলো একজন সাহসী নারীর কাজ। সেই সঙ্গে দরকার সমাজে নারীর গ্রহণযোগ্যতা।

আমরা শুধু একতরফাভাবে সমাজকে দোষারোপ করতে পারি না কারণ নারীর নিজের আত্মবিশ্বাসটাও ওতঃপ্রোতভাবে জড়িত। পুরুষের সাথে সমান তালে নারীদের এগিয়ে যেতে হলে এই আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে হবে যে,‘আমরা নারী এবং আমরাও পারি’।

বর্তমান যুগে নারীরা আজ বিশ্ব দরবারে মাথা উচুঁ করে কাজ করছে। একশ বছর আগেও নারীরা ঘরে বসে বালিশ কভারের দৈর্ঘ্য প্রস্থ মেপেছে, আজ সেই নারীরা বিমান চালানো থেকে শুরু করে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হচ্ছে। তাই বলে তাদের ঘরের কাজ থেমে থাকেনি। তারা সমান তালে ঘর-বাহির সামাল দিচ্ছে।

তবুও আজ অনেক নারীরাই শিকার হচ্ছে ধর্ষণের, নির্যাতিত হয়ে মারা যাচ্ছে যৌতুকের কারণে। তার কারণ নারীরা এগিয়েছে সত্যি তবে তা নগণ্য পরিসরে। তাই লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করা আজ জরুরি হয়ে পড়েছে। কচ্ছপ গতিতে হলেও আশা করা যায় লিঙ্গ সমতা একদিন হবেই, নারীরাও পাবে তাদের সমঅধিকার, দরকার শুধুই বন্ধুসুলভ সহযোগিতার।

আসুন পক্ষপাতিত্ব ভেঙে ফেলি, লিঙ্গ সমতার মাধ্যমে টেকসই আগামী গড়ে তুলি।

সায়মা সুলতানা (পিএসএস-কমিউনিটি মোবিলাইজার)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :