জলবায়ু পরিবর্তনে বিপন্নপ্রায় প্রাণী

সাইখ আল তমাল, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২২, ১১:২৯ | প্রকাশিত : ০৯ মার্চ ২০২২, ০৯:২৫

মানুষের পাশাপাশি প্রকৃতিতে নানা প্রজাতির প্রাণির সৃষ্টি করা হয়েছে বাস্তুসংস্থান বজায় রাখার জন্য। কিন্তু অধিকাংশ প্রাণি দিন দিন বিপন্নতা, বিলপ্তির দিকে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বেশিরভাগ প্রাণিই অভিযোজনের ক্ষমতা হারাচ্ছে। প্রাণিকূলের ধ্বংস আজ বৈশ্বিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে।

‘বাস্তুসংস্থান পুনরুদ্ধারের জন্য মূল প্রজাতি পুনরুদ্ধার করা’ ২০২২ সালের বিশ্ব বন্যপ্রাণি দিবসে জাতিসংঘের এই থিমটির কঠোর বাস্তবতা প্রতিধ্বনিত হয়েছে। বিপন্ন বন্যপ্রাণির দুর্দশার বিষয়ে বৃহত্তর সচেতনতার পাশাপাশি সংরক্ষণ প্রচেষ্টার লক্ষ্য নিয়েই বন্যপ্রাণি ও উদ্ভিদের বিপন্ন প্রজাতির আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কনভেনশন (CITES) থিমটি নির্বাচন করেছে।

বিশ্ব জুড়ে সমগ্র মানবজাতিই খাদ্য থেকে শুরু করে অন্ন, বস্ত্র এমনকি সবকিছুর জন্যই প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। প্রকৃতিকে ঘিরেই জীববৈচিত্র্য। তাই জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি মানেই মানবজাতির ক্ষতি এ ব্যাপারে নতুন করে বোঝানোর প্রয়োজন নেই। সিআইটিইএস (CITES)-এর মহাসচিব ইভন হিগুয়েরো অবশ্য এখনো আশার আলো দেখিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেছেন, আমরা সচেতন হলেই বিপন্ন প্রজাতি এবং তাদের আবাস্থল পুনরুদ্ধার করতে পারি। ২০২১ সালে ইউএস ফিশ অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ সার্ভিস বিলুপ্তির কারণে বিপন্ন প্রজাতি আইন (ইএসএ) থেকে ২৩টি প্রজাতিকে তালিকাভুক্ত করেছে যার মধ্যে ২২টি প্রাণি এবং একটি উদ্ভিদ। ১৯৭৩ সালে আইনটি পাস করার পর থেকে এখন পর্যন্ত ইএসএ-তে ১১টি প্রজাতি বিলুপ্ত হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে।

সমালোচনামূলকভাবে এ বছর বিশ্ব বন্যপ্রাণি তহবিলের বিপন্ন তালিকার শীর্ষে ১৭টি প্রজাতির সাথে প্রায় ২৫ শতাংশ উদ্ভিদ এবং প্রাণিগোষ্ঠী ঝুঁকিপূর্ণ। সেই তালিকায় দুটি বড় প্রজাতির বিড়াল, দুটি হাতি, ছয়টি প্রাইমেট এবং তিনটি গন্ডার রয়েছে।

এমন হবার কারণ কী?

জলবায়ু পরিবর্তন এ সমস্যার প্রধান একটি কারণ। সেন্টার ফর বায়োলজিক্যাল ডাইভারসিটির মতে, যদি বর্তমান গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের গতিপথ অব্যাহত থাকে তাহলে বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি প্রাণি ও উদ্ভিদের প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

বিশ্বব্যাপী গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের জন্য আনুমানিক ১৮.৪ শতাংশ দায়ী পশু কৃষি।

কারখানা

কারখানার কারণে জলবায়ু পরিবর্তন অনেকাংশে দায়ি। কাখানার জন্যে বন উজার, পরিবেশ দূষণ এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়ন হচ্ছে, যার প্রভাবে সম্পূর্ণ বাস্তু সংস্থান ধ্বংস করছে। কারখানার ব্যবহারে পরিবেশ বান্ধব নীতিমালা গ্রহণ এখন সময়ের গুরুত্বপূর্ণ দাবি। গবেষণা বলছে, যদি আমরা জলবায়ু সঙ্কট মোকাবেলা এবং পরিবেশের ক্ষতিকারক কারণগুলোকে প্রশমিত না করি, তবে গ্রহের ছয়টি প্রজাতির মধ্য থেকে একটি চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে।

কী সেই বিপন্ন প্রজাতি?

জাতীয় বন্যপ্রাণি ফেডারেশনের মতে, বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকা প্রাণি, গাছপালা, মাছ বা বন্যপ্রাণিকে বিপন্ন প্রজাতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকা প্রজাতিগুলো আন্তর্জাতিক বিপন্ন তালিকায় রেকর্ড করা যেতে পারে। যখন একটি প্রজাতি বিলুপ্ত হয় সেটা তখন চিরতরে হারিয়ে যায় এবং তা সমগ্র বাস্তুতন্ত্রকে প্রভাবিত করতে পারে।

বিপন্ন প্রজাতির সংখ্যা কত?

ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার (আইসিইউএন) এর লাল তালিকা অনুসারে, ৪০ হাজারেরও বেশি প্রজাতি বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে, যদিও এই সংখ্যাটি অবিশ্বাস্যভাবে উচ্চ মনে হতে পারে। কেননা আইসিইউএন এর লাল তালিকা প্রাণি, ছত্রাক এবং উদ্ভিদের প্রজাতিকে বিবেচনায় নেয়। সেই সাথে প্রজাতির সংখ্যার আকার, বাসস্থান এবং বাস্তুবিদ্যা, পরিসর এবং আরও অনেক কিছুর তথ্য ট্র্যাক করে, যা হুমকির মধ্যে থাকা প্রজাতিগুলো সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে।

২০২২ সালে ডব্লিউডব্লিউএফ এর বিপন্ন তালিকায় ১৭টি প্রাণি রয়েছে। এর মধ্যে হুমকিতে থাকা ১০টি বিপন্নপ্রায় প্রজাতি হলো-

আফ্রিকান বন্য হাতি

আফ্রিকান সাভানা হাতির একটি প্রজাতি আফ্রিকান বন্য হাতি। এই প্রজাতিটি পশ্চিম এবং মধ্য আফ্রিকার রেইনফরেস্টে দেখা যায়। আফ্রিকান বন্য হাতিরা সাধারণত গাছের ছাল, পাতা, ঘাস, বীজ এবং ফল খায়। এ প্রজাতির হাতিরা সাধারণত ২০টি করে দলবদ্ধ হয়ে চলাফেরা করে।

আমুর চিতাবাঘ

এরা পূর্বের চিতাবাঘ নামেও পরিচিত। আমুর চিতা একটি বিরল উপপ্রজাতি যা উত্তর-পূর্ব এশিয়ার বনাঞ্চলে বাস করে। নির্জন এবং শক্তিশালী এই আমুর চিতাবাঘের জীবনকাল সাধারণত ১০ থেকে ১৫ বছর। তাদের দৌড়ের গতি প্রতি ঘণ্টায় ৩৭ মাইল পর্যন্ত এবং তাদের উল্লম্ব লাফ ১০ ফুট উচ্চতা পর্যন্ত।

কালো গন্ডার

দুটি আফ্রিকান গণ্ডার প্রজাতির মধ্যে ছোট কালো গন্ডার। এদের ওপরের ঠোঁটটি সূক্ষ্ণ থাকে যার সাহায্যে গাছ এবং ঝোপের পাতা খায়। এদের দুটি শিং। কালো গন্ডার প্রায়শই শিকারের লক্ষ্যবস্তু হয়।

পূর্ব নিম্নভূমির গরিলা

গরিলার চারটি উপ-প্রজাতির মধ্যে বৃহত্তম পূর্ব নিম্নভূমির গরিলা। পূর্ব নিম্নভূমির গরিলাদের কঙ্গোতে পাওয়া যায়। এরা তৃণভোজী হলেও প্রাথমিকভাবে ফল জাতীয় খাবার খেয়ে বেঁচে থাকে।

হকসবিল কচ্ছপ

হকসবিল কচ্ছপ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় মহাসাগর বিশেষ করে প্রবাল প্রাচীরের মধ্যে এবং আশেপাশে থাকে। এদের সুন্দর গঠনশৈলি এবং রঙিন খোলস শিকারিদের আকৃষ্ট করে। শিকারিরা এদের ব্যবসায়িক স্বার্থে নিধন করে।

ওরাংওটান

ওরাংওটানদের সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়ার বন-জঙ্গলে বিশাল বাহু দ্বারা ঝুলে থাকতে দেখা যায়। ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ডের তথ্য অনুযায়ী, বোর্নিয়ান ওরাংওটানের সংখ্যা দুই লাখ ৩০ হাজার থেকে কমে এক লাখ চার হাজার ৭০০ এবং সুমাত্রান ওরাংওটানের সংখ্যা সাত হাজার ৫০০তে নেমে এসেছে।

সুন্দা বাঘ

সুন্দর কমলা ডোরাকাটা সুন্দা বাঘের প্রজাতি বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছে। ইন্দোনেশিয়ার সুন্দা দ্বীপপুঞ্জ জুড়ে তাদের পাওয়া গেলেও বর্তমানে সুমাত্রায় ৪০০টিরও কম সুন্দা দ্বীপের বাঘ রয়েছে।

সাওলা

১৯৯২ সালের পর থেকে ৫০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে আবিষ্কৃত প্রথম নতুন বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণি হয়ে ওঠে সাওলা। মাত্র ৩০ বছরেরও কম সময়ে সূক্ষ্ম হরিণের মতো সাওলা বিপন্নপ্রায় প্রজাতিতে পরিণত হয়েছে।

ভাকুইটা

ডলফিন এবং পোর্পোইসের মতো একই পরিবারে ভাকুইটা এখন একটি বিরল সামুদ্রিক প্রাণি। দুঃখজনকভাবে এরা এখন বিলুপ্তির পথে।

ইয়াংজি ফিনলেস পোরপোইস

এই প্রজাতির প্রাণি মূলত এদের বুদ্ধিমত্তা এবং দুষ্টু হাসির জন্য পরিচিত। ইয়াংজি ফিনলেস পোরপোইস একসময় ইয়াংজি নদীতে বাইজি ডলফিনের সাথে মিলে বাস করত। বাইজি ডলফিন ২০০৬ সালে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল এবং বর্তমানে ইয়াংজি ফিনলেস পোরপোইসগুলোও বিপন্নপ্রায়।

(ঢাকটাইমস/০৭মার্চ/এসএটি/এফএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :