‘নিজেকে সার্থক রাজনীতিবিদ হিসেবে দেখতে চাই’

প্রকাশ | ০৯ মার্চ ২০২২, ১১:১১ | আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২২, ১২:২০

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস

কম্পিউটার বিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রি নেয়ার পর তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে কাজ করার স্বপ্ন ছিল। সেদিকে আর যাওয়া হয়নি বিএনপির সাবেক মহাসচিব কে এম ওবায়দুর রহমানের মেয়ে শামা ওবায়েদ রিংকুর। ২০০৭ সালে বাবার মৃত্যুর পর তার অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করার ইচ্ছা আর বিএনপির প্রতি টান থেকে নিজ এলাকা ফরিদপুরে সক্রিয় হন শামা।

২০১৬ সালের বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিলে সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পাওয়া এই তরুণ রাজনীতিক বর্তমানে ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন।

বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য, ফরেন রিলেশন্স কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসা শামা নেতৃত্ব দিয়েছেন ‘জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম’ নামে একটি সংগঠনের। প্রতিবন্ধী ও সুবিধাবঞ্চিতদের কল্যাণে সমাজসেবামূলক কাজেও সুনাম রয়েছে তার।

নারী দিবসে ঢাকাটাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন শামা ওবায়েদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সিনিয়র রিপোর্টার বোরহান উদ্দিন

রাজনীতিতে কেন, কিভাবে এলেন?

আমার বাবা কে এম ওবায়দুর রহমান ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। তিনি বিএনপির মহাসচিব এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য ছিলেন। বাবা মারা যাওয়ার আগে থেকেই রাজনীতিতে ছিলাম। পরবর্তীতে বাবার নির্বাচনী এলাকায় সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করি।
 
আসলে রাজনীতির মধ্যেই আমার জন্ম। ছোটবেলা থেকে রাজধানীর মধ্যেই বড় হয়েছি। বাবা এলাকার মানুষের জন্য সাধ্যমত কাজ করেছেন। সেগুলো দেখে বড় হয়েছি। লোকে বলে না? ‘রক্তেই মিশে আছে রাজনীতি’। বিশেষ করে বাবা অসুস্থ হওয়ার পর মাঝে মাঝে আমি আমার নির্বাচনী এলাকায় যেতাম। বাবাও চাচ্ছিলেন আমি যেন মানুষের পাশে থাকি।

আমাদের এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রভাব থাকলেও বাবার জনপ্রিয়তা ছিল। তাই উনিও চাচ্ছিলেন তার সন্তান হিসেবে আমি রাজনীতি করি। এলাকার মানুষের সেবায় নিয়োজিত হই। সেখান থেকেই রাজনীতিতে যুক্ত হই। মানুষের বিপদে-আপদে সব সময় থাকার চেষ্টা করতাম। বাবা মারা যাওয়ার পর আমি বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হই।

তথ্য প্রযুক্তি নিয়ে পড়াশোনা। সেখান থেকে রাজনীতিতে এগিয়ে যাচ্ছেন?

প্রথম কথা হচ্ছে আমার পড়াশোনা আইটিতে। আমি একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। বিদেশে চাকরিও করেছি। যখন দেশে ফিরেছি ইচ্ছে ছিল রাজনীতি করার। আর আমাদের রক্তেই মিশে আছে রাজনীতি।

রাজনীতিতে এগিয়ে চলার সুযোগ করে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাব বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে।  তিনি আমাকে ছোটবেলা থেকে চেনেন। উনি চান নারীরা রাজনীতিতে আসবে, রাজনীতি করবে। মানুষের জন্য, দলের জন্য কাজ করবে। এই চিন্তা থেকে বেগম খালেদা জিয়া আমাকে সব সময় সহযোগিতা করেছেন। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও আমাকে সাহস দিয়েছেন। পরিবার থেকে রাজনীতিতে আসলেও এ পথে হাঁটতে সাহস দিয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া। 

বিএনপির কমিটিতে নারীদের অন্তর্ভুক্তি এখনো অনেক কম। এ নিয়ে আপনার ভাবনা কী?

এটা ঠিক বলছেন। নির্বাচন কমিশনের নিয়মও আছে। তবে সারা দেশে নারীদের রাজনীতিতে আসা উচিত। ইতিমধ্যে আমাদের দলের মিটিংয়ে এসব নিয়ে কথা বলেছি। জেলা উপজেলায় নারীদের নিয়ে তালিকা করা হয়েছে। তবে আমরা আরও আশা করছি নারীরা কেন্দ্রীয়সহ সারা দেশের কমিটিতে যুক্ত হবেন। এটা সবার মানতে হবে, পুরুষের চেয়ে নারীরা কোনো অংশে কম নয়। যে কোনো অঙ্গনে নারীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।

নারী হিসেবে রাজনীতি করতে সুবিধা না অসুবিধা বেশি?

নারীদের পুরুষের চেয়ে অনেক বেশি কাজ করতে হয়। নিজেকে প্রমাণ করার জন্য নারীদের একজন পুরুষের চেয়ে বেশি পরিশ্রম করতে হয়। আমার বাবা সারা দেশে পরিচিত একজন মানুষ। তারপরও একজন নারী হয়ে আমাকে অনেক শ্রম দিতে হয়। আমি ছাড়াও অনেক নারী কষ্ট করে সফল হওয়ার চেষ্টা করছেন। প্রায় ৪০ বছর ধরে নারী প্রধানমন্ত্রী আছেন, নারী বিরোধীদলীয় নেত্রী আছেন। উচ্চ পর্যায়ে অনেক নারী আছেন। তারপরও নারীদের টিকে থাকতে অনেক কাজ করতে হয়। এটা একটা বাস্তবতা। 

পরিবার থেকে কেমন সহযোগিতা পেয়েছেন?

পরিবার থেকে অনেক সহযোগিতা পেয়ে আসছি সবসময়। এ ব্যাপারে আমি অনেক ভাগ্যবতী। আমার বাবার বাড়ি থেকে শ্বশুর বাড়ির লোকজন আমাকে সব সময় সহযোগিতা করে। পরিবার থেকে সহযোগিতা না পেলে আসলে আমি মনে হয় অনেক কিছু করা থেকে বঞ্চিত হতাম।

রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি কি?

এক যুগেরও বেশি সময় ধরে আমরা ক্ষমতায় নেই। তবে আমরা মাঠে আছি। আর অনেকদিন ধরে বেগম খালেদা জিয়াও অসুস্থ। তারেক রহমানও সরকারের রোষানলে পড়ে দেশে আসতে পারছেন না। অসংখ্য নেতাকর্মীদের ওপর মামলা চলছে। আমার বিরুদ্ধেও মামলা আছে। নারী দিবসে (৮ মার্চ) এটা বলা দরকার, সারাদেশে অনেক নারীর বিরুদ্ধেও মামলা আছে। তারাও আমাদের সঙ্গে কষ্ট করছেন। এত কষ্টের মধ্যেও একটা মানসিক প্রশান্তি আছে। কারণ হলো দেশের মানুষের জন্য কথা বলতে পারছি। এলাকার মানুষের জন্য আমার সাধ্যের মধ্যে কাজ করার চেষ্টা করছি। দলমত নির্বিশেষে সবার পাশে থাকার চেষ্টা করি। সেটা আমার জন্য বিশাল প্রাপ্তি। বাবা আজীবন মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন, সন্তান হিসেবে আমিও যতটুকু করতে পেরেছি সেটা রাজনীতির কারণে। এটাই বড় প্রাপ্তি আমার কাছে। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, মানুষের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দেয়া বিএনপির বড় দায়িত্ব ও কর্তব্য। সেই জায়গা থেকে আমি একজন কর্মী হিসেবে যতটুকু মানুষের কাছাকাছি যেতে পারি এটাই আমার সর্থকতা। এটাই আমাকে সংঘাতিকভাবে তৃপ্তি দেয়। 

রাজনীতিবিদ না হলে কী হতেন?

অবশ্যই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হতাম। কারণ আমার জানাশোনা তো ওখানে বেশি। তবে এমপি-মন্ত্রী হতে হবে এমন কথা নেই। নিজেকে একজন সার্থক রাজনীতিবিদ হিসেবে দেখতে চাই।

(ঢাকাটাইমস/০৯মার্চ/বিইউ/এফএ)