অনলাইন প্লাটফর্মে উদ্যোগী তরুণীদের ‘স্বনির্ভর জীবন’

আমীম ইহসান, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ০৯ মার্চ ২০২২, ১২:০১ | প্রকাশিত : ০৯ মার্চ ২০২২, ১১:৫৭

করোনাভাইরাস মহামারিকালে পড়াশোনার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে উপার্জনে সফল হয়েছেন অনেক নারী উদ্যোক্তা। এদের বেশিরভাগই বয়সে তরুণ আর ব্যবসায় ঝুঁকি নেওয়ার সাহস দেখিয়েছেন।

ফেসবুকের মাধ্যমে পোশাক, প্রসাধন সামগ্রী, রূপচর্চাসেবাসহ বিভিন্ন খাতে সফল তিন তরুণীর সঙ্গে কথা বলেছে ঢাকা টাইমস। প্রতিবেদককে তারা শুনিয়েছেন স্বনির্ভর হয়ে এগিয়ে যাওয়ার গল্প।

প্যাশন থেকে ফ্যাশনেবল পোশাক নিয়ে মালিহা কবির

মুবাশশিরা মালিহা কবির। উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর তিনি অপেক্ষায় ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির। এরইমধ্যে ২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হলে ঘরে তার অলস সময় কাটছিল।

‘এক দিন মা বলল— বসে না থেকে অনলাইনে ব্যবসার উদ্যোগ নেওয়া যায় কি-না ভেবে দেখতে। পরে ফেসবুকে পেইজ খুলে ছোট পরিসরে মেয়েদের পোশাক বিক্রি শুরু করি। ভালো রেসপন্স পাচ্ছিলাম, তাই আরও বড় পরিসরে ব্যবসা শুরুর প্ল্যান করলাম’—বলছিলেন এই তরুণী।

বর্তমানে ঢাকার একটি কলেজে স্নাতক পড়ুয়া মালিহা জানান, তিনি চট্টগ্রাম থেকে ভালো মানের কাপড় সংগ্রহ করে সময়ের আবহ ফুটে ওঠে এমন ডিজাইনের টপস তৈরি করেন। পরে পেইজে পোশাকের ছবি দেওয়ার পর অল্প সময়ের মধ্যেই অর্ডার পেয়ে যান। দ্রুত বিক্রি হয়ে যাওয়ায় তার উপার্জনও বেশ ভালো।

মালিহা কবীর ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ব্যবসা শুরুর জন্য নিজের জমানো কিছু টাকা ছিলো, তা দিয়েই শুরু করি। পরে মা বেশ কিছু অর্থের জোগান দেন। এখন নিজের টাকা দিয়েই পুরো ব্যবসাটা চালাচ্ছি। ভালো মানের পণ্য দিতে পারায় ক্রেতারা নতুন নতুন পোশাকের জন্য অর্ডার করেন। এভাবেই এগিয়ে যেতে চাই।’

মালিহার প্রতিষ্ঠানের নাম ‘ওয়েস্টার্নটয’ (westernotZ)। এই নামেই রয়েছে ফেসবুক পেইজ। ক্রেতাদের ভালো সাড়া পাওয়ায় ঢাকা ও চট্টগ্রামে শোরুম খুলে ব্যবসা বাড়ানোর পকিল্পনা রয়েছে তার।

এখন পুরোদমে ব্যবসায়ী লাবনি নাজনীন

ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতক শেষ করে সংসারে সময় দিচ্ছিলেন কুষ্টিয়ার মেয়ে লাবনি নাজনীন। ইডেন কলেজ থেকে পড়াশুনা শেষ করার পর শিক্ষক স্বামীর কর্মসূত্রে এখন তিনি গাজীপুরের বাসিন্দা।

অনেকটা শখের বশে ২০১৯ সালে ফেসবুকে পেইজ খুলে প্রসাধন সমাগ্রী বিক্রি শুরু করেন লাবনি। এক বছরের মাথায় এসে ফি মাসে ব্যবসা ছাড়িয়ে যায় লাখ টাকার বেশি। বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নানা রকম প্রসাধনী বিক্রি করে অল্প সময়ে সামাজিক প্লাটফর্মে পরিচিতি পেয়ে যান দুই সন্তানের জননী লাবনি।

ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘পকিলল্পনা করে শুরু করিনি। কিন্তু ক্রেতাদের এত ভালো সাড়া পাচ্ছিলাম যে, ব্যবসা বাড়ানোর পরিকল্পনা শুরু করি। আমার প্রতিষ্ঠানের নাম ‘ফালিহাস ড্রিম ওয়ার্ল্ড’। এই নামে রয়েছে ফেসবুক পেইজ (Faliha’s Dream World)। বর্তমানে প্রসাধন সামগ্রীর পাশাপাশি মেয়েদের থ্রি-পিস, ইন্টেরিয়র ডেকরেশন, লাইট ইত্যাদি নিয়ে কাজ করছি।’

লাবনি বলছিলেন, নিজের জমানো টাকা দিয়ে শুরু করা তার ব্যবসা দাঁড়িয়েছে মূলত পরিবারের সহযোগিতায়। বেড়ে যাওয়া সেই ব্যবসাকে আরও বাড়িয়ে নারীদের কর্মসংস্থান তৈরির স্বপ্ন লাবনির চোখে।

আলিফনুরের এগিয়ে যাওয়ার গল্পটি ভিন্ন

নিজে স্বনির্ভর হওয়ার চিন্তা থেকেই অনলাইন মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে সাফল্যের দেখা পেয়েছেন আলিফনুর আলিফ। চাঁপাইনবাবগঞ্জের মেয়ে আলিফ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় সামান্য কিছু নম্বর কম আসায় চিকিৎসাবিদ্যায় পড়ার স্বপ্ন পূরণ হয়নি তার। মফস্বল থেকে ঢাকায় পড়তে এসে আলিফ আর্থিক সমস্যার মুখে পড়েন। পরিবারের অমতে ঢাকায় আসায় সহযোগিতাও পাচ্ছিলেন না।

সেই কঠিন পথচলার মধ্যে আলোর দিশা হয়ে আসে ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস-ইউআইটিএস। ২০১৭ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন আলিফ। এক পর্যায়ে তার আর্থিক সংকটের কথা জানতে পেরে পাশে দাঁড়ান বিভাগের শিক্ষকরা।

আলিফ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘শিক্ষকদের সহযোগিতায় পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছিলাম। আর্থিক সংকটের কথা জানতে পেরে বিভাগের শিক্ষকরা সহায়তা করেন। বিশেষ করে সৈয়দা আফসানা ফেরদৌসী, নাইমা আফরিন ম্যামের সহায়তা পাই। বিভাগের অন্য শিক্ষকরাও আমার পাশে দাঁড়ান।’

‘আফসানা ম্যামের পরামর্শে অনলাইনে ব্যবসা শুরুর পরিকল্পনা করি। ম্যাডামের দেওয়া ৫ হাজার টাকা দিয়ে প্রথমে ইভেন্ট ও প্রতিষ্ঠানভিত্তিক মগ প্রিন্ট করে সাপ্লাই করতাম। মাত্র পাঁচ মাসের ব্যবধানে লাখ টাকা লাভের মুখ দেখি। পরে আস্তে আস্তে মেকাপ আর্টিস্ট ও লাইভ প্রেজেন্টার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করি’—যোগ করেন আলিফ।

বর্তমানে তার নিজের প্রতিষ্ঠান ‘আলিফ ফ্যাশন হাউজ অ্যান্ড অনলাইন শপ’ (Alif's Fashion House & Online Shop) চালানোর পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হয়ে ব্র্যান্ড প্রমোটার হিসেবে কাজ করছেন এই তরুণী। এসব কাজে সামাজিক পরিচিতির সঙ্গে আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হওয়া আলিফ এখন একটি পূর্নাঙ্গ মেকাপ স্টুডিও তৈরির স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন।

নারীর এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি সবচেয়ে টেকসই পথ বলে মনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষক আফসানা আফরোজ মুন। এইক্ষেত্রে নারী যেন সামাজিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রেও তার যথার্থ মর্যাদা পান সেই বিষয়ে সমাজকে যত্নশীল হতে হবে বলে তার মত।

ঢাকা টাইমসকে আফসানা আফরোজ মুন বলেন, ‘এগিয়ে থাকার সূচকের কথা বললে, প্রথমেই সমাজে ক্ষমতায়নের বিষয়টার দিকে নজর দিতে হবে। আমাদের সামাজিক বাস্তবতায় ব্যবসা-বাণিজ্যে নারীর অংশগ্রহণ তাদের ক্ষমতায়নের পথ সুগম করে।’

(ঢাকাটাইমস/০৯মার্চ/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

সংরক্ষিত আসনের এমপিদের মধ্যেও সংখ্যায় এগিয়ে ব্যবসায়ীরা: সুজন

মানবাধিকার ও ভোক্তা অধিকার রক্ষায় গণমাধ্যমের ভূমিকা জরুরি: ড. কামাল উদ্দিন

বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে রেলকে গড়ে তুলতে হবে: রেলমন্ত্রী

ইভ্যালির রাসেল-শামিমার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর আশ্বাসে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার

জিম্মি নাবিকদের মুক্তির আলোচনা অনেকদূর এগিয়েছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ডিএনসিসি কার্যালয় সরানোর মধ্য দিয়ে কারওয়ান বাজার স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু 

বিএসএমএমইউ উপাচার্যের দায়িত্ব নিলেন দীন মোহাম্মদ, বললেন ‘কোনো অন্যায় আবদার শুনব না’

সাত বিভাগে ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে

বাংলাদেশে মুক্ত গণতন্ত্র বাস্তবায়নে সমর্থন অব্যাহত থাকবে: যুক্তরাষ্ট্র

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :