সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামবে কবে?

যিকরু হাবিবীল ওয়াহেদ
 | প্রকাশিত : ১১ মার্চ ২০২২, ২২:৩৫

সড়ক দুর্ঘটনা বর্তমান সময়ে মহামারি আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে মানুষ মারা যাচ্ছে সড়কে। কোথা কোথাও একই পরিবারের একাধিক সদস্যের প্রাণহানি হতে দেখা যায়। সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামে সপ্তাহ ব্যবধানে সড়ক দুর্ঘটনায় চকরিয়ায় একসাথে পাঁচ ভাই, রাউজান নোয়াপাড়ায় একজন প্রকৌশলী স্পটেই মারা গেলেন। পাঁচ ভাইয়ের আরও এক ভাই মারা যান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়। আর নগরীতে একজন নারী ডাক্তার আইসিউতে মৃত্যুর সাথে লড়ে একদিন পর মারা গেলেন। এ তো কেবল চট্টগ্রামের কথা বললাম। এভাবেই প্রতিনিয়ত সারা দেশে অকালে প্রাণ ঝরছে সড়কে।

সড়ক দুর্ঘটনার ফলে নিহতদের পরিবারে নেমে আসে কালো ছায়া। ধূলিসাৎ হয়ে যায় হাজারো স্বপ্ন। পরিবারগুলো হয়ে পড়ে অসহায়। সন্তান হয় মা-বাবাহারা, মা-বাবা হয় সন্তানহারা। স্ত্রী হন স্বামীহারা।

সড়ক দুর্ঘটনার অনেকগুলো কারণ বিদ্যমান। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভয়াবহ কারণ চালকদের বেপরোয়া মনোবৃত্তি ও অদক্ষতা, গাড়ির অতিরিক্ত গতি, ওভারটেকিং, গাড়ি ওভারলোডিং, অপ্রশস্ত রাস্তা, ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা, আইন অমান্য করা ইত্যাদি প্রণিধানযোগ্য। আর ফুটপাত দখল করে দোকান নির্মাণও সড়কে মৃত্যুর আরেকটি বড় কারণ।

ফুটপাতে দোকান নির্মাণ, মালামাল রাখবার ফলে পথচারীরা বাধ্য হয়ে রাস্তায় হাঁটার কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। একটি দুর্ঘটনা ঘটলে দুয়েক দিন হাঁকডাক করার পর আবার 'যেই লাউ সেই কদু'। ফুটপাত ফিরে যায় আগের অবস্থায়। ফুটপাত দখলমুক্ত রাখার কথা যাদের, তাদের বিরুদ্ধেই বেশির ভাগ অভিযোগ ফুটপাত দখল করে দোকান নির্মাণের। তাই দিন শেষে ফুটপাত আর দখলমুক্ত হয় না, পথচারীরাও হাঁটার জন্য নিরাপদ ফুটপাত পায় না।

গাড়ির অতিরিক্ত গতি ও ওভারটেকিং সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে রাস্তার প্রশস্থতার নিয়মানুযায়ী গাড়ির গতি থাকবার কথা ঘণ্টায় ৩০-৪০ কি.মি., সেখানে গাড়ির গতি থাকে ৭০-৯০ কি.মি.। যার কারণে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। তাছাড়া দ্রুতগতিতে ওভারটেকিং করতে গিয়েও সড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে প্রতিদিন। এসব বিষয়ে ট্রাফিক বিভাগ কঠোর না হলে দুর্ঘটনা রোধ অসম্ভব বিষয় হয়ে থাকবে।

ওভারলোডিং বা অতিরিক্ত মালামাল বহন করার কারণেও দুর্ঘটনা ঘটছে। ব্যবসায়ীরা দুয়েক ট্রিপ কমানোর জন্য অতিরিক্ত মালামাল দিয়ে গাড়ি ওভারলোডিং করার ফলে গাড়ি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে অন্য গাড়ির ওপর কিংবা পথচারীর ওপর ছিটকে পড়ে। যার ফলে স্পটেই মানুষ মারা যাচ্ছে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের জরুরি নজর দেওয়া উচিত।

এমনিতে অপ্রশস্ত রাস্তা। তার ওপর সেখানে ভাসমান দোকান, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং। ফলে রাস্তা আর সংকুচিত হয়ে হওয়ায় বড় গাড়ি চলাচলে অসুবিধার সৃষ্টি হয়। অনেক সময় তা দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা আমাদের সড়কে সবচেয়ে বড় সমস্যা। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে এই ডিজিটাল যুগেও দেশে এখনো হাতের ইশারায় ট্রাফিক ব্যবস্থা পরিচালনা করা হচ্ছে। সড়ক নিরাপদ করবার তাগিদে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা অচিরেই ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তর করা উচিত। নচেৎ মান্ধাতা আমলের ট্রাফিক ব্যবস্থার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলবে।

সড়ক দুর্ঘটনায় উপরের বিভিন্ন কারণগুলো যেমন বিদ্যমান, তেমনি ট্রাফিক আইন অমান্য করাও বিদ্যমান। ট্রাফিক আইন অমান্য করবার ফলে সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েছে বহুগুণ। চালক যাত্রী পথচারী সকলকে ট্রাফিক আইন মানাতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

সাথে চালকদের প্রশিক্ষণ, সড়ক আইন সম্পর্কে বেশি করে প্রচার, আইনের যথাযথ প্রয়োগ, ফুটপাত দখলমুক্ত করা,ট্রাফিক ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশন করা, ট্রাফিকদের ডিউটির ঘণ্টা কমিয়ে ট্রাফিকদের সংখ্যা বাড়ানো, রাস্তায় ভাসমান দোকান বন্ধ, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংমুক্ত করা, গাড়ির গতিরোধ এবং গাড়ির ওভারলোডিং নিয়ন্ত্রণ করা সর্বোপরি আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে পারলেই সড়কে মৃত্যুর মিছিল বন্ধ হবে।

সবচেয়ে বড় ব্যাপার চালকদের প্রশিক্ষিত করা। দক্ষতা বৃদ্ধি করা। লাইসেন্স দেওয়ার সময় অবশ্যই চালকদের দক্ষতা ভালোভাবে যাচাই করে নিতে হবে। বন্ধ করতে হবে অবৈধভাবে লাইসেন্স দেওয়া। সড়কে গাড়ি চালনার সময় করণীয় সম্পর্কে চালকদের সচেতনতা গড়ে তোলাও জরুরি।

লেখক: লেখক, সংগঠক।

সংবাদটি শেয়ার করুন

মুক্তমত বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা