স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর কৌশল, জেনে নিন

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১২ মার্চ ২০২২, ১২:৪৬ | প্রকাশিত : ১২ মার্চ ২০২২, ১২:৪৪

প্রখর স্মৃতিশক্তি ভবিষ্যতের বড় সম্পদ। জীবনে সাফল্য পাবার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু বয়স বাড়লে বা কাজের চাপে প্রায়ই আমরা অনেক কিছুই ভুলে যেতে থাকি। আস্তে আস্তে করে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। এর পরিণাম হতে পারে ভয়ংকর। স্বাভাবিক জীবনযাপনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, তখন একে ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রম বলে। নানা কারণে স্মৃতিভ্রংশ রোগ হতে পারে। যেমন: অ্যালঝেইমার ডিজিজ, থাইরয়েড ও অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, ভিটামিন ও খনিজের ঘাটতি, মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলে বাধা ইত্যাদি।

গবেষণা বলছে, আমাদের খাদ্যাভ্যাসও এর জন্য কিছুটা দায়ী। স্মৃতিশক্তি বাড়াতে খাদ্যাভ্যাস বেশ ভালো সুফল আনে। দৈনন্দিন খাদ্যাভাসের সঙ্গে স্মৃতিশক্তির দারুণ একটা সম্পর্ক রয়েছে। বিভিন্ন গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জেনে নিন সতর্কতা এবং স্মৃতিশক্তিকে মজবুত করার কিছু উপায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, স্মৃতিশক্তি বাড়াতে কফি বেশ কার্যকর। কফি শুধু মস্তিষ্ককে চাঙ্গা করে তাই নয়, নতুন কোনো ঘটনাকে স্থায়ীভাবে মনে রাখাতেও এর সহায়ক ভূমিকা রয়েছে। কফি ‘সাইকোস্টিমুলেন্ট’ হিসেবে কাজ করে অর্থাৎ নতুন তথ্য সামাল দেওয়ার গতি বাড়ায়। আর এই প্রভাব কফি পান করা শেষ হওয়ার পরও বজায় থাকে। এছাড়াও মস্তিষ্কে তৈরি হওয়া বিষাক্ত উপাদান অপসারণে ‘ক্যাফেইন’য়ের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।

পানি পান করলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে। আমাদের মস্তিষ্কের ৭৫ শতাংশই পানি। শরীরে পানির অভাব থাকলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমাবে সেটাই স্বাভাবিক। পানির অভাবে মনযোগ কমে, সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব হয় এবং স্বল্প সময়ের জন্য স্মৃতিশক্তির কমার লক্ষণ দেখা দেয়।

মস্তিষ্কে বয়সের প্রভাব ও স্মৃতিভ্রংশ কমাতে বা দূর করতে সাহায্য করে পালং শাক। পাতাবহুল এই সবজি নানানভাবে উপকারী। পালংশাকে ভিটামিন ই থাকে। যা মস্তিষ্কে বয়সের প্রভাব ও স্মৃতিভ্রংশ কমাতে বা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়া পালং শাক–জাতীয় সবজিতে আছে ফলেট, ভিটামিন বি ৯ ও লুটেনন নামের উপাদান। এটি আমাদের কগনিশনের পতন রোধে সহায়ক।

ব্রকলি ভিটামিন কে তে ভরপুর। ব্রকলি গ্লুকোসিনোলেটস এর ভালো উৎস। যা নিউরোট্রান্সমিটার, অ্যাসেটাইলকোলাইন ভেঙে শক্তি যোগাতে সাহায্য করে। যা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে সঠিক কার্যকারিতা পরিচালনা করতে ও আমাদের স্মৃতি তীক্ষ্ণ রাখতে সাহায্য করে।

মানসিক চাপ কমানো, অবসাদ দূর করা এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে ডার্ক চকোলেট। ডার্ক চকলেটে আছে ‘ফ্লাভানয়েড’ যা একটি শক্তিশালী ‘অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’ ও প্রদাহরোধী উপাদান। কোনো কিছু শেখা ও স্মৃতিশক্তি বাড়ানো, মস্তিষ্কের রক্তপ্রবাহ বাড়ানো, নিউরন’কে সুরক্ষিত সবকিছুর পেছনেই ডার্ক চকলেটের উপকারী ভূমিকা আছে। ৭০ শতাংশ কোকো আছে এমন ডার্ক চকলেট বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেন যুক্তরাষ্ট্রের পুষ্টিবিদ মেগান ওয়াং, আরডি।

'শর্ট-টার্ম' মেমোরি স্বল্প সময়ের স্মৃতি উন্নয়নে সাহায্য করে ডিম। ডিমের কুসুম কোলিন নামক অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। যা কোষে সংকেত পৌঁছাতে সাহায্য করে।

দীর্ঘকালীন স্মৃতিশক্তি বাড়াতে কফি দারুণ কাজে দেয়। যদিও ক্যাফেইনের প্রভাব শরীরে বিভিন্নভাবে পড়তে পারে, তা হলেও কফির ভাল দিকও প্রচুর রয়েছে। নিয়মিত মেপে কফি খেলে আপনি বিভিন্নভাবে উপকৃত হবেন।

মানব শরীরে অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি অ্যাসিড উৎপন্ন হতে পারে না। তাই খাবারের মাধ্যমে তা গ্রহণ করতে হয়। যেমন- স্যামন, সারডিন-সহ মিঠাপানি ও সামুদ্রিক মাছ থেকে অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি অ্যাসিড গ্রহণ করতে পারেন। এতে স্মৃতিশক্তি বাড়বে।

স্মৃতিভ্রংশ বা স্মৃতির অবক্ষয় হ্রাস করে টমেটো। প্রতিদিন সালাদে টমেটো খেতে পারেন। কারণ টমেটো কোষের রেডিকল ক্ষয়ের বিরুদ্ধে কাজ করে। টমেটোতে লাইকোপেন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। যা কোষের রেডিকল ক্ষয়ের বিরুদ্ধে কাজ করে।

বাদামে ভিটামিন ই থাকায় স্মৃতিশক্তি হ্রাস পেতে সাহায্য করে, বিশেষত বৃদ্ধ বয়সে। যেমন- কাঠবাদাম ও আখরোট ভিটামিন ই এর ভালো উৎস। তাই বিকালের নাস্তার একটি অংশ হিসেবে বাদামকে বেছে নিতে পারেন।

রোগ-প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়াতে ব্লুবেরির মতো আর ফল হয় না। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট রয়েছে। খিদে পেলে উল্টোপাল্টা খাবার খাওয়ার বদলে যদি কিছু স্বাস্থ্যকর বেছে নিতে চান, তা হলে অবশ্যই ব্লুবেরি রাখুন হাতের কাছে।

বয়স বাড়ার সঙ্গে যে ধীরে ধীরে মানুষের স্মৃতিশক্তি লোপ পায়, তা খানিকটা রুখতে পারে আখরোট। তাই এই ড্রাই ফ্রুট থাকলে চিন্তার কোনও কারণ নেই। এটি নিয়মিত খেলে মস্তিষ্ক সচল থাকবে দীর্ঘদিন।

চিন্তাভাবনা এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য পুষ্টিগুণে ভরপুর কুমড়ার বীজ খেতে পারেন। কুমড়ার বীজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং প্রোটিন। খুব বেশি মানসিক চাপ থাকলেও কুমড়ার বীজ নিয়মিত খেলে চাপমুক্ত হতে পারেন।

ডালিমের রস পান করলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে। কারণ ডালিমে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা কোষকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। এছাড়া ডালিম খেলে ব্লাড সার্কুলেশন স্বাভাবিক থাকে, যা মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ করে। দুপুরে খাবারের আগে বা পরে ডালিমের শরবত খেলে মস্তিষ্ক সুস্থও স্বাভাবিক থাকে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়ে।

হাঁটাচলায়ও স্মৃতিশক্তি বাড়ে। বহু গবেষণায় এটা প্রমাণিত। অভিনেতারাও এই কাজটা করে থাকেন। কোন শব্দ বা বাক্য যদি আপনি হেঁটে হেঁটে মুখস্থ করার চেষ্টা করেন, তাহলে সেটা বহুদিন ধরে আপনার মনে থাকবে। কোন বক্তৃতা বা প্রেজেন্টেশন মুখস্থ করতে হলে সেটা হেঁটে হেঁটে মুখস্থ করার চেষ্টা করুন।

রাতে যদি ঘুম কম হয়, তবে তা বার্ধক্য প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে মস্তিষ্কে বাধার সৃষ্টি করে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য পর্যাপ্ত ঘুম খুবই জরুরি। ঘুম না হলে মস্তিষ্ক প্রায় সাত বছর বেশি বুড়িয়ে যেতে পারে।

গরমের চেয়ে ঠাণ্ডায় স্মৃতিশক্তি এবং মনোযোগ তিন গুণ বেশি থাকে। এ ছাড়া ঠাণ্ডা ঘর মাথাকেও ঠাণ্ডা রাখে। তাই ঘরের তাপমাত্রা কখনো ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি রাখা ঠিক নয়।

প্রতিদিন পাঁচ মিনিট করে পায়ের আঙুলে ম্যাসাজ করুন। প্রথমে আঙুলের ওপর থেকে শুরু করে আস্তে আস্তে টিপে টিপে নিচের দিকে যান। এই ম্যাসাজ মস্তিষ্কের কোষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে সহায়তা করবে।

(ঢাকাটাইমস/১২ মার্চ/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :