সূর্যমুখী ফুলের সঙ্গে গম-ভুট্টা চাষে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা

প্রকাশ | ১২ মার্চ ২০২২, ১৪:২০ | আপডেট: ১২ মার্চ ২০২২, ১৫:৫২

আমিনুল হক সাদী, কিশোরগঞ্জ

বর্তমানে দেশে সূর্যমুখী পরিচিত একটি ফুল। এর তেল মানে-গুণে অনন্য। সারাবিশ্বেই এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। দেশেও সূর্যমুখীর চাষ শুরু হয়েছে ব্যাপক হারে। বাণিজ্যিকভাবে সুফল পাচ্ছে চাষিরা। তবে এবারে সুর্যমুখী ফুলের সাথে যোগ হয়েছে গম ও ভুট্টা আবাদেরও। কৃষি বিভাগ বলছে এক সাথে যৌথ ফসল আবাদে সমস্যা না হওয়ায় তারা কৃষকদেরকে এ চাষাবাদে আগ্রহী করে তোলেছেন।

কিশোরগঞ্জ জেলায় সূর্যমুখী ফুলের চাষ দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। ফুলে ফুলে ভরে গেছে ফসলের মাঠ। গত কয়েক বছরে সুর্যমুখী ফুল চাষে সাফল্য পেয়েছে ফুল চাষিরা। ফুলের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন দর্শনার্থীরা।

জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার সদর, হাওর বেষ্টিত উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় ১৫৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ হয়েছে। যেটার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৩৫ হেক্টর।

কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় সম্পূর্ণ বিনামূল্যে কৃষককে বীজ বিতরণ করা হয়েছে। প্রতি গাছে একটি করে ফুল আসে। বীজ বপনের পর ফসল সংগ্রহ করতে প্রায় তিন মাস সময় লাগে। হেক্টর প্রতি ১.৫ টন পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। সূর্যমুখীর তেল অন্যান্য রান্নার তেল হতে ভাল এবং হৃদরোগীদের জন্য বেশ কার্যকর।

সূর্যমুখী চাষ করে শুরু থেকেই সফলতার মুখ দেখছেন কৃষকরা। যদি কোন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয় তাহলে সুর্যমুখী চাষ করে দ্বিগুণ লাভ করতে পারবেন। ফলে একদিকে উপকৃত হবে কৃষক অপর দিকে মিটবে সূর্যমুখী তেলের চাহিদা।

এবারে কৃষি বিভাগের নতুন সংযোজন হয়েছে সুর্যমুখী ফুলের সাথে গম ও ভুট্টা আবাদের। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ৮২৮৫ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। যেটার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৯৪৬৫ হেক্টর। প্রয়োজনীয় পরিমাণ মত গমেরও আবাদ হয়েছে। তবে এক সাথে পাকুন্দিয়া উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে দেখা গেছে সুর্যমুখী ফুলের সাথে গম ও ভুট্টা আবাদের। বাম্পার ফলনের সম্ভাবনায় কৃষকরাও আননন্দিত।

পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্ধুর ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামের আ. মোতালিবের ছেলে কৃষক আলাল উদ্দিন বলেন, এগারসিন্ধুর ব্লকে কৃষি বিভাগের সহায়তায় আমার ৩০ শতাংস জমিতে যৌথভাবে সমন্বিত সুর্যমুখী ফুল ও গম আবাদ করেছি। আমার সূর্যমুখী ক্ষেত ফুলে ফুলে ভরে গেছে। জমিতে এক একটি ফুল যেন হাসিমুখে সুর্যের আলো ছড়াচ্ছে। যদি কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হয় তাহলে ভাল লাভের আশা করছি।

এগারসিন্ধুর ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, আমার ব্লকের চাষি আলাল উদ্দিনের জমিতে গম ও সুর্যমুখী ফুল এবং একই ব্লকের জমশেদ আলীর জমিতে সুর্যমুখী ফুলের সাথে ভুট্টার আবাদ করা হয়েছে। গম ক্ষেতে নির্দিষ্ট দুরত্ব বজায় রেখে এসব চাষাবাদ করা হয়েছে। যৌথ ফসল আবাদে সমস্যা না হওয়ায় তারা কৃষকদেরকে এ চাষাবাদে আগ্রহী করছেন। কৃষি বিভাগের মাধ্যমে বীজ ও সার সহায়তাসহ পরামর্শ প্রদান করছেন। 

পাকুন্দিয়া উপজেলার কৃষি অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, উপজেলার বেশ কিছু ইউনিয়নে পাইলট প্রকল্প হিসেবে এই প্রথমবারের মতো সমন্বিত সুর্যমুখী ফুল ও গম ভুট্টার সংমিশ্রণ চাষাবাদ করা হয়েছে।

কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক শস্য সাইফুল হাসান আলামিন জানান, জেলায় কৃষি জমিতে সূর্যমুখী, গম, ভুট্টা চাষের জন্য উপযোগী, ফলে কৃষকরা ব্যাপকভাবে সুর্যমুখী ফুলের চাষাবাদ করেছেন। তবে পাকুন্দিয়া উপজেলায় সূর্যমুখী ক্ষেতে গম ও ভুট্টার সমন্বিত আবাদ হয়েছে। মাঠের যে অবস্থা তাতে বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখছে কৃষক ও কৃষি বিভাগ।

(ঢাকাটাইমস/১২মার্চ/এসএ)