সর্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিশ্চিত না হওয়ায় করোনাকালে সংকট বেড়েছে

প্রকাশ | ১৫ মার্চ ২০২২, ২১:৫৩

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

টিকাদান কার্যক্রমে সফলতা থাকলেও দেশে করোনাকালে স্বাস্থ্যখাতে নানা অব্যবস্থাপনা ছিল বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে করোনার ঊর্ধ্বমুখী অবস্থায় ত্রুটিপূর্ণ নীতির কারণে কোভিড আক্রান্তদের অনেকে সমাজচ্যুত হয়েছেন, শিকার হয়েছেন বৈষম্যের।  সর্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিশ্চিত করতে না পারায় এই সংকট বলে মত দিয়েছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা।

মঙ্গলবার রাজধানীর মহাখালীতে ব্র্যাক সেন্টারে ‘বাংলাদেশ কোভিড-১৯: প্রথম দুই বছর ও সামনের দিনগুলো’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বিশেজ্ঞরা।

করোনাকালে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ বলেন, করোনা মহামারির মতো এত বড় যুদ্ধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আরও সম্পৃক্ত করার দরকার ছিল। স্বাস্থ্যে ভালো কিছু করতে হলে সঠিক ব্যবস্থাপনা জরুরি। শুরু থেকে আমাদের পরিকল্পনায় ঘাটতি ছিল, এবং এই কারণে মানুষের কাছে ভুল বার্তা গেছে। করোনা রোগীর কথা শুনলেই বাড়িতে লাল পতাকা টাঙানো হয়েছে। এর দায় আমাদেরও আছে। এটাকে এক ধরনের ফ্লুয়েঞ্জা বলে ধরে নেওয়া হয়েছে।

করোনার সময় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বদলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার কাজ স্থানীয় প্রশাসনকে দেওয়ার সমালোচনা করেন বে-নজির আহমদ। তিনি বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে ব্যবস্থাগুলো নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের না দিয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের হাতে দেওয়া হয়েছে। আর এতে করে করোনা আক্রান্তরা সমাজ থেকে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। জেলা প্রশাসকদের এখানে সব কাজের কাজি বানাতে গিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা ছিল না। ফলে পরিকল্পনা হয়েছে এক, মাঠপর্যায়ে বাস্তবে হয়েছে আরেক। হাসপাতালগুলোতে ইনফেকশন প্রতিরোধী ব্যবস্থা ছিল না। ফলে ডেলটার সময়ে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। এ জন্য জনস্বাস্থ্যে আমাদের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। প্রতিটি জেলায় ৩০ লাখ মানুষের বসবাস হলেও এপিডেমিওলজি নেই।

তবে লকডাউন নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এটি অনেক বড় প্রভাব ফেলেছে বলেও জানান এই রোগ নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ।

সরকারের রোগতত্ত্ব ও রোগ নিয়ন্ত্রণ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ড. মোশতাক হোসেন বলেন, আমাদের প্রধান সংকট প্রাতিষ্ঠানিক হেলথ কাভারেজ নেই। একই সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও ঠিকভাবে সম্পৃক্ত করা যায়নি। ফলে করোনায় এক কোটি মানুষকে খাদ্য বিতরণকালে অনিয়মের খবর এসেছে। কি পরিমাণে হয়েছে সেটি বের করা দরকার। অনেক দেশের আগেই লকডাউন দেওয়া হলেও এর ইতিবাচক ফল এসেছে। আমাদের প্রস্তুতি ও অর্জন মাঝামাঝি। যে দেশের হেলথ কাভারেজ যত ভালো, তারা ততটাই উন্নত। আমাদের গ্রামে কমিউনিটি ক্লিনিক থাকলেও শহরাঞ্চলে নেই। ফলে গ্রামে সংক্রমণ কম ছড়ালেও শহরে বেশি ছড়িয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, করোনা যখন বিশ্বব্যাপী ব্যাপক তাণ্ডব চালায় তখন ইতালির প্রধানমন্ত্রী কোনো  উপায় না দেখে আকাশের পানে চেয়েছিলেন। সেখানে আমাদের সরকার প্রধান প্রতিদিনই মাস্ক পরতে বলেছিলেন। এক কোটি মানুষকে প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। করোনার ঊর্ধ্বমুখী অবস্থায় কেউ বাইরে চিকিৎসা নিতে যায়নি। প্রথমদিকে সামনে থেকে চিকিৎসা দিতে গিয়ে অনেকে মারা গেছেন। ব্যবস্থাপনায় দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ সব থেকে এগিয়ে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক রওনক জাহান বলেন, যেকোনো গবেষণা বা সেমিনারে আলোচনা হলেই অনেকগুলো সুপারিশ করা হয়। তবে আমার দেখা জীবনে এই সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়েছে খুবই কম। সর্বজনীন স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিশ্চিতে ২০১১ সালে আমরা বেশ কিছু সুপারিশ করেছিলাম। পরে এ বিষয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে। তবে ১১ বছর অতিবাহিত হলেও আমাদের দেওয়া সুপারিশ এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। তবে আমরা দেখেছি, যে এলাকায় সর্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা রয়েছে সেই এলাকায় নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

(ঢাকাটাইমস/১৫মার্চ/বিইউ/কেএম)