কবিতা

মুক্তির আকুতি

প্রকাশ | ২৭ মার্চ ২০২২, ১২:৫৫ | আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২২, ১৩:১৮

ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া

আপনি কি আমার স্বাধিকারের কথা জানতে চান?

নাকি বলছেন স্বাধীনতার কথা?

আমার পরাধীনতার কি হয়েছে কাঙ্খিত অবসান?

এখন কি আমার বুকের ছাতি ফুলে উঠেছে

হিমালয় পর্বতের সমান?

 

ইনিয়ে বিনিয়ে ঘুরিয়ে প্যাঁচিয়ে

এ সব বিভ্রান্তিকর প্রশ্ন না করে

সোজা-সাপ্টা বলে ফেলুন,

আসলে আপনি কোন কথাটা জানতে চান?

আপনি কি সব জেনে-শুনেও মতলবি কায়দায়

আমার মুখ থেকে সে সবের ফিরিস্তি শুনতে চান?

 

তবে কান খুলে শুনে রাখুন;

ওসবের কিছুই জানি না আমি; বুঝি না কিছুই।

আমি খাঁচায় আবদ্ধ তোতা পাখি;

জিহ্বায় আমার নিজের কোনো ভাষা নেই,

সদানন্দ সদাগরেরা কৌশলে ভুলিয়ে দিয়েছে

আমার মায়ের মুখের বুলি;

ওদের শেখানো বুলিতেই আমার নিত্যকার ভাব বিনিময়।

কন্ঠে আমার নিজের কোনো গান নেই,

সহজাত নাচের কোনো মুদ্রা নেই।

বসন্ত আসে, বসন্ত যায়,

ফুলের বাহারে,শোভা সৌরভে প্রকৃতি তার বিপণি সাজায়।

বনানীর শাখায় শাখায় পাখিরাও গান গায়;

সে গানে আমার কোনো সংগত নেই।

পাখিরাও জানে, খাঁচার পাখির গানে বসন্ত আসে না।

আমাকে ছোঁ মেরে নিয়ে যেতে পারতো যে বাজপাখি

ওর প্রতিও এখন আমার আর কোনো আক্রোশ নেই।

 

খাঁচার খোঁপের ভেতরে চক্রান্তে সাজানো

যতোটুকু পরিকল্পিত জমিন,

এরি মাঝে সীমাবদ্ধ আমার স্বাধীনতা;

এতেও নাকি আছে ওদের বদান্যতা

যারা দয়াপরবশ হয়ে আমাকে নিধন না করে

প্রাণ ভিক্ষা দিয়েছে অকৃপণ করুণায়।

প্রবাসী এই নিবাসে আমার যাপিত জীবন

ভরে আছে আহার্যের প্রাচুর্যে;

শস্যদানা, গুবরে পোকা কিংবা ঘাস ফড়িংও

যেখানে জুটতো না প্রাণান্ত কসরতে,

আর এখানেতো দুধ-কলাও নিতান্ত নস্যি।

খড় কুটো জড়ো করে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে

গাছের ডালে নিরাপদ নীড় গড়েছিলাম

কতো যত্নে কতোবার; সেই নীড় ভেঙ্গে গেছে

আচমকা ঝড়ের ঝাপটায়।

অথচ এখন আমার বাসা সোনার খাঁচা,

এরি মাঝে আমি মাথা কুটি বটে, তবে ঝড়ের সাধ্যি নেই আমার বাসার টিকির নাগাল পাবে।

 

আমার বাসা আর ভাঙতে পারবে না ঝড়,

যদিও-বা আমি মাথা ভাঙি নিরূপায় খাঁচার ভেতর।

 

এই সীমানায় আমার একচ্ছত্র রাজত্ব,

এখানেই আমার আমৃত্য আমিত্ব।

এখানটায় আমার উড়াউড়ি পাখা ঝাপটায়,

পালকগুলো ছিঁড়েখুঁড়ে ছত্রখান।

আমার কিচিরমিচির কিংবা আর্তনাদের বিষাদ সঙ্গীত

এই গন্ডির মাঝেই মহাকালের গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

পরাধীনতার শেকল ছিঁড়েছে কি-না; তা আমি জানি না,

স্বাধিকার কী; আমি তা জানি না,

স্বাধীনতা কী; আমি তা বুঝি না,

আর আমাকেও আপনি বোঝাতে আসবেন না।

স্বাধিকার, স্বাধীনতা যা আছে সবকিছু

আপনার ঝোলায় ভরে নিয়ে যান,

আমার জন্যে রেখে যান কেবল মুক্তি;

 

গোলক ধাঁধার সোনার খাঁচার রুদ্ধশ্বাস থেকে

আমি মুক্তি চাই, মুক্তি চাই, শুধুই মুক্তি চাই;

এর চেয়ে বেশি আমার আর কোনো প্রত্যশা নাই।