ঠাকুরগাঁও জেলার উন্নয়ন ভাবনা এবং ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর

প্রকাশ | ৩০ মার্চ ২০২২, ১৮:১৫

ঢাকাটাইমস ডেস্ক

উত্তরের সীমান্ত ঘেঁষা জেলা ঠাকুরগাঁও। দেশ স্বাধীনের পর থেকে এ জেলায় তেমন বড় কোন শিল্প কারখানা গড়ে ওঠেনি। এর একমাত্র কারণ যোগাযোগ ব্যবস্থা। সড়ক কিংবা রেলপথে ঢাকা হতে যেতে কিংবা আসতে প্রায় ১০-১৫ ঘন্টা লেগে যায়। অনুরূপভাবে আকাশ পথে সৈয়দপুর হয়ে ঠাকুরগাঁও যাওয়া-আসা করতে সময় লাগে প্রায় ৫-৭ ঘণ্টা। তাই রাজধানী ঢাকার কোনো শিল্প উদ্যোক্তা এ জেলায় ভারি কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন নি।

১৯৪০ সালে ৫৫০ একর জমির ওপর নির্মিত ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটি ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত চালু ছিল। সৈয়দপুর বিমানবন্দর চালু হলে এটি পরিত্যক্ত হয়। প্রায় ৪৫ বছর ধরে বন্দরটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে। অপরদিকে ১৯৮৫ সালে মাত্র ১৬৩ একর জমিতে নির্মিত বরিশাল বিমানবন্দরটিতে নিয়মিত বাণিজ্যিক ফ্লাইট চলাচল করছে।

জেলার আয়ের প্রধান উৎস কৃষি। জেলার ৮৫ ভাগ মানুষ প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। আমদের যা প্রয়োজন তার দ্বিগুন কৃষিপণ্য আমরা উৎপন্ন করি। দেশের এক পঞ্চমাংশ গম আমাদের ঠাকুরগাঁওয়ে উৎপন্ন হয়। কিন্তু এসব কৃষিপণ্যের নায্য দাম আমরা পাচ্ছি না। জেলায় কৃষি খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের কাঁচামালের বিশাল প্রাপ্যতা রয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি এবং যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপন করা হলে আমাদের উৎপাদিত খাদ্য দ্বিগুণ দামে বিক্রি করতে পারব। জেলায় বিশেষ করে দুধ, আম এবং সবজি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনা আছে।

আল্ট্রা হিট ট্রিটমেন্ট(UHT) প্রযুক্তির সাহায্যে যে কোন তরল খাদ্যকে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ছয় মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। UHT প্রযুক্তিতে তরল খাদ্যকে ১৪০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেট তাপমাত্রায় গরম করলে সব ধরণের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ধংস হয়ে যায়। এরপর ঐ তরল খাদ্যকে বায়ুরোধী (Airtight) প্যাকেটে সংরক্ষণ করা হলে এর গুনাগুণ ছয় মাস পর্যন্ত অটুট থাকে।

ঠাকুরগাঁওয়ে গরুর দুধের লিটার ৩০-৫০ টাকা অথচ ঢাকায় ১০০ টাকাতেও ভাল দুধ পাওয়া যায় না। আমাদের উৎপাদিত দুধ UHT করে ঢাকায় বাজারজাত করতে লিটার প্রতি ১০ টাকাও ব্যয় হবে না। আমাদের বিখ্যাত এবং সহজলভ্য সূর্যাপুরি আমের জুস UHT করে বাজারজাত করা হলে দেশ বিদেশে আমাদের সুনাম বৃদ্ধি পাবে। একই সঙ্গে আর্থিক ভাবে আমরা অনেক লাভবানও হবো।

ঠাকুরগাঁওয়ে অনেক শাক-সবজির কেজি ১০-২০ টাকা। অথচ ঢাকায় এর দাম ৬০-১০০টাকা। শাকসবজির স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিমান বজায় রেখে তাজা সবজির খোসা বা ছাল ছাড়িয়ে ব্যবহার উপযোগী টুকরা করে কোনো প্যাকেট বা মোড়কে সুসজ্জিত অবস্থায় ভোক্তার নিকট উপস্থাপনকেই বলা হয় ফ্রেশকাট। আধুনিক প্রযুক্তি এবং যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ফ্রেশকাট শাক-সবজি ঢাকার বাজারে কয়েকগুন বেশী দামে বিক্রি করা সম্ভব। এমনকি এসব ফ্রেশকাট শাকসবজি বিদেশেও রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যায়।

প্রশ্ন হচ্ছে, কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে আধুনিক প্রযুক্তির এসব শিল্প কারা সুদুর ঠাকুরগাঁওয়ে স্থাপন করবে? ঢাকার শিল্পপতি কিংবা বিত্তশালীরা এগিয়ে এলে আধুনিক প্রযুক্তির এসব শিল্প ঠাকুরগাঁওয়ে স্থাপন করা সম্ভব হবে। এসব শিল্পপতিরা বাস কিংবা ট্রেনে কি ঠাকুরগাঁওয়ে যাবেন? অবশ্যই না। প্লেনে করে সৈয়দপুর গেলে সৈয়দপুরের আশেপাশেই এসব শিল্প স্থাপন করবেন। সৈয়দপুর হতে ৬০-৯০ কিঃমিঃ দূরে ঠাকুরগাঁওয়ে গিয়ে করবেন না।

ঠাকুরগাঁওয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হতে যাচ্ছে। প্রকৌশল মহাবিদ্যালয় হচ্ছে। যাতায়াতের জন্য কম সময়ের ব্যবস্থা না থাকলে ভাল মানের কোন শিক্ষক এসব প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করতে আসবেন না।

পরিত্যক্ত ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটির জমি এবং ভবনের মূল্য প্রায় হাজার কোটি টাকা। আমার মনে হয় ২০-৩০ কোটি টাকা ব্যয় করে বিমানবন্দরটি চালু করা সম্ভব। এরপর অনেক বেসরকারী সংস্থা লাভজনকভাবে ফ্লাইট চালু করবে। আমাদের জেলা উন্নয়নের মহাসড়কে প্রবেশ করবে। আসুন, ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর চালু করার জন্য আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়াজ  তুলি।

লেখক: সাধারণ সম্পাদক, ঠাকুরগাঁও জেলা সমিতি, ঢাকা