'ইতিহাসের মহানায়ক শেখ মুজিব’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন

প্রকাশ | ০২ এপ্রিল ২০২২, ১৯:৪৫

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বর্ণাঢ্য জীবন নিয়ে লেখা 'ইতিহাসের মহানায়ক শেখ মুজিব’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে। বইটির লেখক বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) মফিজুল হক সরকার। বইটিতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও বঙ্গবন্ধুর ত্যাগ-তিতিক্ষার কথা  তুলে ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে বইটিতে  জাতির  পিতার জন্ম, ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, স্বাধীনতা, পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ড  উঠে এসেছে।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটর পদ্মা লাইফ টাওয়ারস্থ বিবার্তা২৪ ডটনেট ও জাগরণ আইপি টিভির কার্যালয়ে বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

বাংলা জার্নালের প্রকাশক ও সম্পাদক হাবিবুর রহমান রোমেলের সভাপতিত্বে এবং বিবার্তার সাহিত্য সম্পাদক সামিনা বিপাশার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি অসীম সাহা।

তিনি বলেন, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বলা হয় শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুকে।  ইতিহাসে বাংলাকে শাসন করেছে এমন বহু শাসক আছেন। বল্লাল সেন,  লক্ষণ সেন উনারাও তো বাঙালি ছিলেন। কিন্তু উনারা কেউ মহানায়কের উপাধি পাননি। ইতিহাসের প্রথম বাঙালির মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমরা যদি ইতিহাসের আরো পেছনে ফিরে যাই, তবে আমরা সুভাস চন্দ্র বোসকে দেখতে পাই। তিনি বলেছিলেন, ‘তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দিবো।’ তিনি তার জনগণের কাছে রক্ত চেয়েছেন। কিন্তু  আমাদের বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেবো’। তিনি নিজেও তাঁর বাঙালির সাথে রক্ত দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এখানেই বঙ্গবন্ধু সবার চেয়ে আলাদা ছিলেন।

অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবীত এই কবি বলেন, সম্প্রতি আমি হিসেব করে দেখেছি, ৩৬১ জন এমন কবি আছেন, যারা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এখনো সংশয়ে আছেন। তারা বঙ্গবন্ধুকে ইতিহাস থেকে মুছে দিতে চান। কিন্তু সহস্র বাঙালির এই গল্প, গান, কবিতা থেকে বঙ্গবন্ধুকে কীভাবে মুছবেন? এমন অসংখ্য মানুষ আছেন যাদের কোনো ধরনের লোভ দেখিয়েই স্বাধীনতাবিরোধীদের দলে ভিড়ানো যাবে না। এই অকুতোভয় মানুষগুলোই আমাদের মূল শক্তি।

'ইতিহাসের মহানায়ক শেখ মুজিব' বইটির লেখক বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) মফিজুল হক সরকার বলেন, বাঙালি বীরের জাতি। আর শেখ বংশ হচ্ছে তেজস্বী বীর। এই বংশেই শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম। বাংলার আকাশ, বাতাস, নদী-নালা, পাহাড়-পর্বত সবকিছুতে আমরা বঙ্গবন্ধুকে দেখতে পাই। তবে বঙ্গবন্ধুকে শুধু দেখলে হবে না। তাঁকে মানতে হবে, জানতে হবে। আর কেউ যদি বঙ্গবন্ধুকে না মানে, তার বাংলাদেশে থাকার অধিকার নাই, নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার নাই।

মেজর (অব.) মফিজুল হক সরকার আরও বলেন, আমাদের কাজ হচ্ছে স্বাধীনতার স্বপক্ষে কথা বলা, মুক্তিযুদ্ধের কথা বলা, দেশের প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরা। সেই কাজটি আমি করছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ বাস্তবায়নসহ তাঁরই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন পূরণে আমরণ কাজ করে যাবো। 

‘ইতিহাসের মহানায়ক শেখ মুজিব’ বই নিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে লিখতে পারার জন্য, বলতে পারার জন্য আমি নিজেকে ধন্য মনে করি। এটা আমার বিশাল প্রাপ্তি।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সানজিদা খানম বলেন, বঙ্গবন্ধু জন্ম না নিলে বাংলাদেশের জন্ম হতো না।  জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। আজ বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে। বঙ্গবন্ধুকন্যাকে ২১ হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। সব ষড়যন্ত্রকে উপেক্ষা করে শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কিশোরগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. জেড এম পারভেজ সাজ্জাদ বলেন, মেজর (অব.) মফিজুল হক সরকার লিখিত 'ইতিহাসের মহানায়ক শেখ মুজিব’ বইয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম সমৃদ্ধ হবে।

অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুকে দেখার অনুভূতি ব্যক্ত করে বীরবিক্রম (পিএসসি) মেজর (অব.) হামিদুল হোসেন তারেক বলেন, আমি জীবনে কোনোদিন কোনো রাজনৈতিক নেতাকে দেখিনি।  মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধুর সাথে যখন আমার দেখা হয়েছিল তখন বঙ্গবন্ধু আমার হাত উঁচু করে বলছিলেন, এই দেখো আমার সোনার ছেলে। মাত্র উনিশ বছর বয়সে বীর বিক্রম উপাধি পেয়েছে। এই সোনার ছেলেরাই সোনার বাংলাদেশ গড়বে।

শেখ রাসেল ফাউন্ডেশনের সভাপতি ডা. ফেরদৌস খন্দকার বলেন, বাংলাদেশ যতদিন থাকবে, পৃথিবীর ইতিহাস যতদিন থাকবে- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একইভাবে প্রজ্জ্বলিত হবেন প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে, প্রতিটি মুক্তিকামী, শান্তিকামী, মানবতাবাদীর হৃদয়ে। বঙ্গবন্ধুর জীবন দর্শন চিরকাল বাঙালি জাতিকে অনুপ্রাণিত করবে, পথ দেখাবে। বাঙালি জাতি শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতাও ভালোবাসায় বাংলাদেশের ইতিহাস বিনির্মাণের কালজয়ী এ মহাপুরুষকে চিরকাল স্মরণ করবে।

মেজর মো. আহসান উল্লাহ বলেন, ইতিহাসের মহানায়ক শেখ মুজিব' নামক গ্রন্থটি ইনফরমেটিভ। এরকম বই বাজারে পাওয়াই যায় না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীধর্মী এই বই আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে স্মরণ করবে।

জয়পুরহাট পাঁচবিবির মেয়র হাবিবুর রহমান বলেন, ইতিহাসের মহানায়ক শেখ মুজিব' নামক গ্রন্থের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মসহ জাতি বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বিবার্তা২৪ ডটনেটের সম্পাদক বাণী ইয়াসমিন হাসি।

বক্তারা জানান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনীধর্মী বই 'ইতিহাসের মহানায়ক শেখ মুজিব'। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম থেকে শৈশব-কৈশোর, যৌবনের উত্তাল আন্দোলনমুখর দিন, ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধ বাংলার ইতিহাসের প্রতিটি সংগ্রাম-আন্দোলনে তাঁর সাহসী পদক্ষেপ, বলিষ্ঠ অবস্থান, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দান, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে দেশ পুনর্গঠন, তাঁর দর্শন, চিন্তা-চেতনাসহ তার সম্মানে রচিত গান, কবিতা, চলচ্চিত্র, তাকে নৃশংসভাবে  হত্যা করার নির্মম ইতিহাস পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে উপস্থাপিত হয়েছে এই গ্রন্থে।

ঢাকাটাইমস/২এপ্রিল/এসআর/ইএস