(চতুর্দশ পর্ব)
ড. নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া’র অণুকাব্য
প্রকাশ | ০৭ এপ্রিল ২০২২, ১৩:৫৯
০১. পাথরের বুকে ফুল
অন্তর দেয় যদি সায়, প্রেমে আর নেই কোনো ভুল,
অনুরাগ রসে হয়ে চূর মিলনেই থাকো মশগুল।
হৃদয়ের বাগিচার শাখাতে গান গায় দুটি বুলবুল,
দুর্যোগ নামে যদি সেক্ষণে দুজনেই করে তা কবুল।
প্রাণে যদি থাকে ভালোবাসা, পাথরও ফোটাতে পারে ফুল,
বিশ্বাসে থাকে যদি দৃঢ়তা, অকূলেরও মিলে যায় কূল।
০২. আলোর শুভ সংবর্ধনা
আভা ফুটছে ; আলো আসবে
ঘুচে যাবে সব কালোর বিড়ম্বনা,
দিক দিগন্তে শুরু হোক তবে
সে আলোর শুভ সংবর্ধনা।
০৩. কথার ঘোড়া
কথায় কথায় কথা বাড়ে;
কথার নানান দোষ,
কথার ঘোড়া বশে রেখো;
মানিয়ে রাখো পোষ।
০৪. অপূর্ণতার আরাধনা
আমাকে তুমি পূর্ণ করো না সকল মহান দানে,
তাহলে তো আমি চলে যাবো তোমার
নিত্য বিস্মরণে।
পূর্ণতা দিলে ভাববে আমার আর
নেই যে তোমার প্রয়োজন,
অপূর্ণতার মাঝে তাই চাই
তোমার অটুট বন্ধন।
০৫. ঘায়েলি-নজর
এমন ঘায়েল-নজরে দেখো না;
কাজল কালিতে চোখের পাতায় পাতায়,
প্রেমের কাহিনী লেখো না;
না না না নাগো না-
এমন বাঁকা নজরে দেখো না।
এমন ঘায়েল-নজরে দেখো না;
চোখের তারায় তারায় মিটি মিটি
মায়ার ছায়া মেখো না;
এমন ঘায়েল-নজরে দেখো না।
কথার রঙের প্রেমের ছবি
দৃষ্টিরেখায় এঁকো না-
না না না নাগো না-
এমন ঘায়েল-নজরে দেখো না।
০৬. মিলনানন্দ
আঘাতে আঘাতে আমার হৃদয়
যখনই হয়েছে চূর্ণ,
তোমার মিলনে আমার সকল
চাওয়াই হয়েছে পূর্ণ।
০৭. অবুঝ মন
হায় রে অবুঝ মন,
এ কী দশা তোর এখন!
যা পাবিনা তাই নিয়ে তোর কতো হুতাশন!
পেয়েছিস যতো ধন,
ভরলো না তাতে মন,
চাইবার বৃত্তটা বাড়ে তোর প্রতিক্ষণ।
ধনের কণায় কণায়,
মিশে থাকে কতো দায়,
জানলে তা করতি না আর ধন অর্জন।
মনকে বোঝা রে মন,
নেই তোর অনটন,
তুষ্টির উল্লাসে ভরে নে রে এ জীবন।
০৮. লাভ-ক্ষতি
তোমার ঘরে দীপ জ্বালাতে আমার ঘরের নিভাই বাতি,
তোমার আলোর জীবন দিতে আমার দীপের আত্মাহূতি।
তোমার ঘরের ভরতে গোলা,
শূন্য হলো আমার ঝোলা;
তোমার ঘরে আশিস বিলায় লক্ষ্মী এবং সরস্বতী;
লাভের খাতে রাখতে তোমায়,আমি নিলাম সকল ক্ষতি।
০৯.
কেবলমাত্র একটা মানুষকেই আমি যখন খুঁজে মরি
লাখো মানুষের ভিড়ে,
তখনো কি বুঝতে থাকে বাকি
আমার জীবনের স্বপ্ন বুনেছি সেই লোকটাকে ঘিরে!
১০. শিশুর নির্মল হাসি
শিশুর ঠোঁটের নির্মল হাসি চির দিন যেনো অটুট রয়,
অবিরত তোমার আশিস বিলাও,হে খোদা করুণাময়।
বিষাদের কোনো কালো ছায়া যেনো এ হাসি কেড়ে না নেয়,
আনন্দ যেনো তাদের জীবনের পূর্ণতা এনে দেয়।
১১. খাঁটি উম্মাত
তিন বেলা তুমি পেট ভরে খেয়ে;
প্রতিবেশিদের খবর না লয়ে-
আখেরাতে তুমি কোন পরিচয়ে
নবীর সামনে দাঁড়াবে?
তাঁর করুণার শাফায়াত পেতে,
কাওসার-এর পেয়ালাটা নিতে
কোন অধিকারে বলো হে মুমিন,
লজ্জিত হাত বাড়াবে?
তুমিতো জানোই, দুনিয়ার ভোগ
আল্লাহ-রাসূলের নয় প্রিয়,
পরের জন্যে সুখ ত্যাগ করে
জান্নাতি হবার সুখ নিও।
নইলে তোমার কোটি এবাদত সবি হবে নিস্ফল,
আখেরাতে তোমার পাল্লায় রবে শূন্যের ফলাফল।
১২. সাফল্যের সোপান
চলার পথের কাঁটার ঘায়ে
পায়ে যখন রক্ত ঝরে,
সে রক্তেরই প্রতি ফোঁটা
সফলতার সোপান গড়ে।
১৩. মমতাময়ী মা
মমতাময়ী মায়ের কথা যতো ভাবি ততো মনে হয়,
পরিকল্পিত লক্ষ্য নিয়ে,দিলে দরদের দরিয়াকে দিয়ে-
গড়েছেন মা-কে পরম করুণাময়।
বিধাতা জানেন, সুবিশাল তাঁর মহাজগতের পরিধি,
সন্তানদের হিতার্থে তাই পাঠালেন এই প্রতিনিধি।
প্রতিনিধি হয়ে মায়েরা সকলে বিধাতার ইচ্ছা করে পালন,
মায়া-মমতায় আদরে সোহাগে সন্তানদের করে লালন।
১৪.
যেদিন বন্ধু স্বজন সবে হবে পর,
খবর নিবে না কোনো পীর পয়গম্বর,
আজাবের ভয়ে সবে
নাজাতের পথ খুঁজে রইবে বিভোর,
সেদিন যে নবী হবে অকূলের কূল-
খোদার পেয়ারা হাবীব মোহাম্মাদ রাসূল।