বন্ধনমুক্তির আনন্দে স্বাগত নতুন বঙ্গাব্দ ১৪২৯

মোহাম্মদ আরিফুর রহমান
 | প্রকাশিত : ১৪ এপ্রিল ২০২২, ০০:২৩

বাঙালির প্রাণের পহেলা বৈশাখের এবার বন্ধনমুক্তি ঘটল। গত দুই বছর বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে বাঙালি তার প্রাণের পহেলা বৈশাখ চিরায়ত রূপে উদযাপন করতে পারেনি। ঘরবন্দি হয়ে পড়েছিল সবাই। গতবার মহামারির মধ্যে খুবই সীমিত পরিসরে উদযাপিত হয় নববর্ষ।

এবার আর করোনা বিধিনিষেধ নেই। অদৃশ্য প্রাণঘাতী ভাইরাসটি ইতিমধ্যে নিয়ন্ত্রণে এসেছে দেশে। টানা ছয় দিন মৃত্যুহীন বাংলাদেশ দেখেছি আমরা। সংক্রমণও নেমে এসেছে পঞ্চাশের নিচে। নতুন স্বাভাবিক এই সময়ে এবার পহেলা বৈশাখ তার স্বরূপ ও মহিমায় সবার মাঝে হাজির হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

আজ পহেলা বৈশাখে বাংলা বর্ষপঞ্জিতে যুক্ত হলো নতুন বছর ১৪২৯ বঙ্গাব্দ। গতকাল বাংলার চিরায়ত উৎসব চৈত্রসংক্রান্তি শেষে আজ নতুন সূর্য উদিত হলো নতুন বছরের পয়গাম নিয়ে। জানাচ্ছে নতুনের আবাহন।

আমাদের সব সংকীর্ণতা, কূপমণ্ডূকতা পরিহার করে উদারনৈতিক জীবনব্যবস্থা গড় তুলতে উদ্বুদ্ধ করে পহেলা বৈশাখ। মনের সব ক্লেদ, কালিমা দূর করে নতুন উদ্যমে বাঁচার অনুপ্রেরণা দেয় আমাদের। পহেলা বৈশাখে বাঙালিয়ানা নতুন করে প্রাণ পায়, উজ্জীবিত হয়।

বাঙালির সর্বজনিন লোকোৎসব পহেলা বৈশাখে আনন্দঘন পরিবেশে বরণ করে নেওয়া হয় নতুন বছরকে। কল্যাণ ও নতুন জীবনের প্রতীক নববর্ষ অতীতের ভুলত্রুটি ও ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে নতুন করে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় উদ্দীপ্ত করে সবাইকে।

যদিও কৃষিকাজ ও খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য বাংলা সন গণনার শুরু মোঘল সম্রাট আকবরের সময়ে। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের সঙ্গে বাংলা বর্ষের ইতিহাস জড়িয়ে থাকলেও এর সঙ্গে রাজনৈতিক ইতিহাসেরও সংযোগ ঘটেছে। পাকিস্তান শাসনামলে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের। আর ষাটের দশকের শেষে তা বিশেষ মাত্রা পায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজনের মাধ্যমে। দেশ স্বাধীনের পর বাঙালির অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীকে পরিণত হয় বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান।

আমরা আশা করি, আজকের নতুন ভোরের প্রথম আলো রাঙিয়ে দেবে নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর সম্ভাবনাকে। গত বছর আমরা করোনাভাইরাসমুক্ত নতুন বাংলাদেশের প্রত্যাশা করেছিলাম। এবার সেই প্রত্যাশার বাংলাদেশে নতুন বছরকে বরণ করে নেবে বাঙালি।

ভুলে গেলে চলবে না, করোনা নিয়ন্ত্রণে এলেও এখনো তা দেশ থেকে দূর হয়ে যায়নি। বিশ্বে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে। মৃত্যুও কয়েক হাজার। তাই আমরা যেন সতর্ক থাকি। অন্তত জনসমাগমে মুখে যেন মাস্ক ব্যবহার করি।

আর একটি কথা। পহেলা বৈশাখ যখন উদযাপন করছি, তখন দেশে চলছে সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র রমজান। ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি রোজা। প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুমিনের ওপর রমজানের এক মাসের রোজা ফরজ। কোরআন-হাদিসে রোজার অনেক ফজিলতের কথা উল্লেখ আছে। ইফতার, তারাবি, সেহেরি, ইতেকাফ- রোজাসংশ্লিষ্ট এসব ইবাদতের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে।

আমরা যেন পহেলা বৈশাখ উদযাপন করতে গিয়ে কোনোভাবে রমজানের পবিত্রতা নষ্ট না করি। অনেকে রোজা রেখে যোগ দেবেন বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে। শামিল হবে রমনার বটমূলে কিংবা চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রায়। তাদের কথা যেন মাথায় রাখি। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সবাইকে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান বেলা দুইটার মধ্যে শেষ করতে বলেছে। আমরা যেন এবারের নববর্ষ উৎসব অনুষ্ঠানমালা এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখি।

স্বাগত নতুন বাংলা বছর ১৪২৯। সবাইকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা।

লেখক: সম্পাদক, দৈনিক ঢাকা টাইমস, ঢাকাটাইমস২৪.কম ও সাপ্তাহিক এই সময়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজপাট বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা