হাওরাঞ্চলের নদীগুলোতে পানি বাড়ছেই, দুর্বল বাঁধে আতঙ্কে ধান চাষিরা

কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকার নদীগুলোতে পানি বাড়ছেই। এতে চাষিরা ধান নিয়ে আতংকিত রয়েছে। জেলার ইটনা, মিঠামইন, নিকলী ও অষ্টগ্রাম উপজেলার ৫৩টি হাওরের ৩০টি ফসলরক্ষা বাঁধে পানি এখন ছুঁইছুঁই করছে। প্রায় ১০টি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধে ফাটল দেখা দেওয়ায় উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয়রা সারাদিন চেষ্টা করে কোনোভাবে রক্ষা করতে পেরেছেন।

হাওরের অবস্থা ভালো নয় এমন খবরে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলমের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি দল হাওরের ফসল ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো পরিদর্শন করে নানা নির্দেশনা দিয়েছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম জানিয়েছেন , হাওর এলাকার নদীগুলোর পানি বিপৎসীমার মধ্যে রয়েছে। পানি বাঁধে ছুঁইছুঁই করছে। সামান্য পানি বেড়ে গেলে হাওরের অর্ধেক ধানি জমি তলিয়ে যাবে। ইতোমধ্যে ১০টি বাঁধ সংস্কার করা হয়েছে। চার উপজেলায় ছোট-বড় আরও প্রায় ৪৩টি ফসলরক্ষা বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। পানি বেড়ে গেলে ফসলরক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই কৃষক পরিবারগুলোকে ৮০ ভাগ পুষ্ট ধান কেটে ফেলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

তিনি জানান, ইতোমধ্যে হাওরাঞ্চলের প্রায় ২৪ শতাংশ জমির ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। অবশিষ্ট ধান কাটার জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে এবং সহযোগিতা করা হচ্ছে।

ইটনা উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রদীপ কুমার দাস জানান, গতকাল দুপুর থেকে ইটনার জিওল হাওরসহ ধনপুরের হাপনিয়া, রামপুরের চর, চরপাড়ার হাওর ও কাটুইল হাওরের বাঁধগুলোতে পানি ছুঁইছুঁই করছে। যদি পানি ৬ ইঞ্চি বেড়ে যায়, তবে নদীসংলগ্ন সব ধানি জমি তলিয়ে যাবে।

কিশোরগঞ্জের কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ছাইফুল আলম জেলা প্রশাসকের সঙ্গে একমত প্রকাশ করে জানান, আগামী ২৪ ঘণ্টায় মেঘালয়, আসামের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া নদীতে পানি বাড়ছে। ফলে আগামী ৪৮ ঘণ্টা হাওরের জন্য ক্রান্তিকাল। এদিকে, কৃষকদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ কৃষক সমিতি ও ক্ষেতমজুর সমিতি।

জেলা কৃষক সমিতির সভাপতি ডা. এনামুল হক ইদ্রিস ও জেলা সিপিবির সভাপতি আবদুর রহমান বলেন, হাওরে বিভিন্ন অব্যবস্থাপনার কারণে ফসলহানি হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে তাদের সারা বছরের খাবার সরবরাহ করার দাবি জানান তারা। অন্যথায় তাদের পক্ষে লাগাতার আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

অপরদিকে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের (ইটনা-মিঠামইন-অষ্ট্রগ্রাম) সংসদ সদস্য রেজোয়ান আহমেদ তৌফিক চাষিদেরকে কাঁচা ধানই কেটে ফেলার জন্য আহবান জানিয়েছেন। চাষিরা দিনরাত বাঁধে পালা করে পাহাড়া দিচ্ছেন এবং কাচা ধান সংগ্রহ করছেন।

(ঢাকাটাইমস/১৮এপ্রিল/এআর)