সৈয়দপুরে ভেজাল সেমাই তৈরির মহোৎসব

প্রকাশ | ২১ এপ্রিল ২০২২, ১২:১৯

মো. জাকির হোসেন, সৈয়দপুর (নীলফামারী)

ঈদুল ফিতর মানে হচ্ছে সেমাইর ঈদ। সেমাই ছাড়া যেন এ উৎসবের পরিপূর্ণতা পায় না। এ উৎসব সামনে রেখে উত্তরের বাণিজ্যিক শহর নীলফামারী সৈয়দপুরে ভেজাল সেমাই তৈরির মহোৎসব লেগেছে। পাড়া-মহল্লা ও অলিগলিতে গড়ে উঠেছে প্রায় দুই শতাধিক লাচ্ছা সেমাই তৈরির কারখানা।

আর এ সব কারখানায় নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নিম্নমানের সব উপকরণ দিয়ে দেদারছে তৈরি হচ্ছে এই সেমাই। এসব সেমাই খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলে মন্তব্য করেছেন চিকিৎসকরা।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ সেমাই তৈরির কারখানা বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউটের (বিএসটিআই) অনুমোদন ছাড়া প্রতিষ্ঠিত। এছাড়া যে সকল কারখানা গড়ে উঠেছে সেগুলোতে মানা হচ্ছে না কোন হাইজিন নিয়মনীতি। নামি-দামি অনেক কোম্পানির লেভেল লাগিয়ে স্থানীয়ভাবে তৈরি এসব সেমাই বাজারজাত করে আসছে মালিকরা।

মানুষের খাওয়ার জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এসব সেমাই সৈয়দপুর শহরের চাহিদা মিটিয়ে স্থানীয় হাট-বাজার ছাড়াও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা শহরে অবাধে পাঠানো হচ্ছে। হাতেগোনা কয়েকটি সেমাই তৈরির বৈধ কারখানা থাকলেও তারা বিপাকে পড়েছেন মৌসুমী ব্যবসায়ীদের দাপটে।

শহরের পাটোয়ারীপাড়া, কাজীরহাট, পুরাতন বাবুপাড়া, বাঁশবাড়ি, মিস্ত্রিপাড়া, হাতিখানা, নিয়ামতপুর, মুন্সিপাড়া, গোলাহাটসহ আনাচে কানাচে মৌসুমী সেমাইয়ের কারখানা চালু করা হয়েছে। এ সব কারখানা থেকে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ বিভিন্ন নামে সেমাই বাজারজাত করা হচ্ছে।

এসব সেমাই প্রতিদিন রিকশাভ্যান ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় শহর ও গ্রামের হাট বাজারে সরবরাহ করা হচ্ছে। উৎপাদনে যাওয়া এসব অস্থায়ী কারখানায় গড়ে দৈনিক ৪০০ থেকে ৫০০ খাঁচি (প্রতি খাঁচিতে ১৮ কেজি) সেমাই উৎপাদন হচ্ছে। যেখানে স্থায়ী কারখানাগুলোতে উৎপাদিত হচ্ছে গড়ে প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ খাঁচি।

শহরের শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়কের একটি দোকানে সেমাই কিনতে আসা ক্রেতা আতাহার হামিদ বলেন,  এতগুলো নামে বেনামে সেমাই পাওয়া যাচ্ছে কোনটা আসল আর কোনটা নকল বুঝাই যাচ্ছে না। বাঁচ্চা সেমাই খাওয়ার আবদার করছে তাই বাধ্য হয়েই কিনছি। প্রশাসনের দুর্বলতার সুযোগে ও নিয়মিত স্যানিটারি ইন্সপেকশনের অভাবে সৈয়দপুরে ভেজাল সেমাই তৈরির প্রবণতা বাড়ছেই।

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সৈয়দপুর জেলা শাখার সভাপতি চিকিৎসক শেখ নজরুল ইসলাম জানান, এসব সেমাই খেয়ে পেটে পীড়া, ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তাই সুস্থ থাকতে হলে এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শামসুল আলম জানান, পঁচা ডিম, এ্যানিমেল ফ্যাট এবং কৃত্রিম ঘি ও সুগন্ধি মিশ্রিত সেমাই তৈরি যাতে না হয়, সেজন্য কারখানাগুলোতে নজরদারি রাখা হয়েছে। এছাড়া অনুমোদনহীন সেমাই কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যস্থা নেওয়া হবে।

সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম হুসাইন জানান, খাদ্যে ভেজালকারীর বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে। দুই একদিনের মধ্যে অভিযান জোরালোভাবে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/২১এপ্রিল/এসএ)