‘হাঁটাবাবা’ শান্ত'র পায়ে হেঁটে ৬৪ জেলা ভ্রমণ

ফিচার ডেস্ক
| আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০২২, ১৯:৫৮ | প্রকাশিত : ২১ এপ্রিল ২০২২, ১৯:১৯

কবিগুরুর ভাষায় বলতে গেলে বলতেই হয়, দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে দুই পা ফেলিয়া, একটি ধানের শিষের ওপরে একটি শিশিরবিন্দু। ক্ষণিকের এই জীবনে কোনো সৎ অহ্লাদ অপূর্ণ রাখতে নেই। সাধ্যের মধ্যেই খুঁজে নিতে হয় জীবনের সবটুকু সুখ। লক্ষ্য যদি থাকে দুনিয়া দেখা, তবে কেন নিজের দু পায়ের ওপর অবহেলা?

৬৪ জেলা হেঁটে ভ্রমণ করা চতুর্থ বাংলাদেশী এবং একইসঙ্গে বাংলাদেশে একদিনে হাঁটার সর্বোচ্চ রেকর্ডধারী একমাত্র বাংলাদেশী। অবাক হচ্ছেন? আপনাকে অবাক করার মতোই দুঃসাধ্য সাধন করেছেন হাঁটাবাবা।

বলছি কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলায় বেড়ে ওঠা সাইফুল ইসলামের (শান্ত) কথা । তিনি ২০১৮ সালে ঢাকার যাত্রাবাড়ীর দনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে স্নাতক পাশ করেন। ২০২২ সালের ১৪ জানুয়ারি ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে হাঁটা শুরু করে তিনি ২৯ মার্চ বিকাল ৫টায় কক্সবাজারের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ করেন। ৭৫ দিনে ৩৮ টি জেলা শহরের ২৬টি উপজেলায় ৩ হাজার কিলোমিটার পদযাত্রা দিয়েই তার ৬৪ জেলা ভ্রমণ সম্পন্ন হয়। তবে অনেক উপজেলা অতিক্রম করলেও হিসাব রাখা হয়নি।

দীর্ঘ এই পথভ্রমণের গল্প শুনিয়েছেন সাইফুল ইসলাম নিজেই।

হেঁটে ঘোরাঘুরির ব্যাপারে তিনি বলেন— ‘নবম শ্রেণি থেকে ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে আশেপাশের এলাকায় পায়ে হেঁটে ঘোরাঘুরি শুরি করি। তখন থেকেই ধীরে ধীরে অনেক বন্ধু যুক্ত হতে শুরু করে আমার সঙ্গে। কলেজ লাইফে ঘোরাঘুরি কম হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে বেশ ভালোই ঘুরে বেড়ানো হয়েছে।

সুস্থ তরুণ সমাজ তৈরির লক্ষ্যে নিজ এলাকায় ২০২০ সালের ৪ই জুন ‘কিপ রানিং, স্টে হেলদি’ স্লোগান সামনে রেখে ‘দেবিদ্বার রানার্স কমিউনিটি’ প্রতিষ্ঠা করেন সাইফুল। এখানে প্রতিদিন ৫ থেকে ২০ কিলোমিটার হাঁটার চর্চা করতেন তিনি। নিশ্চই একাজের জন্য প্রয়োজন ছিল একাগ্রতা, অধ্যবসায় আর অনুপ্রেরণা। এই দুঃসাধ্য কাজে অনুপ্রেরণা পেয়েছেন বাংলাদেশের আয়রনম্যান খ্যাত শামসুজ্জামান আরাফাতকে দেখে।

সব কাজের মতো এ কাজেও পয়েছেন অনেক প্রতিবন্ধকতা। তিনি জানান, আর্থিক সমস্যার মাঝেও ঘুরে বেড়ানো এবং কাছ থেকে মাতৃভূমিকে দেখার উদ্দেশ্যে যখন বের হব ঠিক তখনি ২০১৯ সালে করোনা মহামারী সবকিছু এলোমেলো করে দেয়। এটাই ছিল স্বপ্ন পূরণের পথে বড় প্রতিবন্ধকতা।

সকল প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে ২০২০ সালের ১২ আগস্ট, কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার নিজ গ্রাম থেকে হাঁটা শুরু করে ২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট পৌঁছান। যাত্রাপথে ১৬ টি জেলা অতিক্রম করার মাধ্যমে ১ হাজার কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে পাড়ি দেন তিনি। ‘চ্যালেঞ্জ’ শব্দটা শুনতে যতটা সহজ বাস্তবে করে দেখানো ঠিক ততটাই কঠিন। কিন্তু মুজিববর্ষে (২০২০ সালের ২০ নভেম্বর) একটানা ২২ ঘন্টা ২১ মিনিট হেঁটে ঢাকা থেকে কুমিল্লার ১০০ কিলোমিটার পথ (বাংলাদেশ একদিনে হাঁটার সর্বোচ্চ রেকর্ড) পৌঁছানোর মাধ্যমে চ্যালেঞ্জ প্রমাণ করে দেখিয়েছেন তিনি।

কীভাবে শান্ত হলেন হাঁটাবাবা

তাকে ‘হাঁটাবাবা’ ডাকার কারণ তিনি নিজেই ব্যাখ্যা করেন— ঢাকায় একজন পীর ছিলেন তিনি এত বেশি হাটতেন যে তাকে সবাই হাঁটাবাবা ডাকতেন। তাই আমাকেও ভালোবেসে সবাই হাটাঁবাবা বলে ডাকে।

হাঁটাবাবার পথযাত্রা ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা

‘সিক্সটিফোর ডিস্ট্রিক্ট ওয়াকিং চ্যালেঞ্জ ২০২২’ এই প্রজেক্টে প্রধান স্পনসর ছিলো ষড়জ অ্যাডভেঞ্চার। হাইকার সোসাইটি অব বাংলাদেশ তার এই পদযাত্রা সম্পূর্ণ মনিটরিং করে। ভ্রমণকালে রানিং, হাইকিংসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তাকে সাহায্য করেছে। যাত্রাপথে কারো কারো বাসায় রাত্রি যাপনের সুযোগ হয়েছে। ভ্রমণকালীন সময়ে রক্তদান, বৃক্ষরোপণ ও পরিবেশ সুরক্ষায় প্লাস্টিক ব্যবহারে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা কার্যক্রম তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। সকাল ৭ থেকে ৯টার মধ্যে হাঁটা শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত, আর পরিচিত কেউ থাকলে রাত ৮ থেকে ৯টা পর্যন্ত হেঁটেছেন।

একদিনে সর্বোচ্চ ৭১ কিলোমিটার (পূর্বের অভিজ্ঞতা ১০০ কিলোমিটার) এবং সর্বনিম্ন ৭ কিলোমিটার (শরীর অসুস্থ হবার কারণে থামতে হয়) হাঁটেন। ভ্রমণকালীন তার স্লোগান ছিলো ‘প্রদব্রজে চলো বহুদূর..’। অ্যাডভেঞ্চারে ভরপুর তার এই ভ্রমণ। কুকুরের তাড়া খাওয়ার মতো মজার ঘটনাও ঘটেছে কখনো কখনো। মৌলভীবাজার থেকে ফেঞ্চুগঞ্চে সিএনজিতে যাওয়ার সময় মাঝপথে কিছু অপরিচিত লোক ওঠে যাদের কথা সন্দেহজনক মনে হলে নিরাপত্তার স্বার্থে ‘থানায় জব করি’ এমন পরিচয়ও দিয়েছেন। সাইফুলের সারা বাংলাদেশ ভালো লাগলেও প্রকৃতি ঘেরা পাহাড়ি এলাকা একটু বেশিই ভালো লেগেছে। এক জেলার সঙ্গে অন্য জেলার ভাষাগত পার্থক্য বেশ উপভোগ করেছেন।

তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্ক জানতে চাইলে তিনি বলেন— দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সাইকেল বা গাড়িতে করে বিশ্ব ভ্রমণ করার পাশাপাশি প্রত্নতত্ত্ব, ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করব।

লেখক: মো. আব্দুল্লাহ আল নোমান, শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

(ঢাকাটাইমস/২১এপ্রিল/এসএটি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

ফিচার এর সর্বশেষ

যে পাঁচ সমস্যায় আক্রান্তরা গুড় খাওয়ার আগে একবার ভাবুন, নইলে...

সাজেদুর রহমান শাফায়েতের স্বপ্ন পৃথিবী ঘুরে দেখা

খাওয়ার পরপরই চা পান উপকার না ক্ষতি? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা

জ্বরের মধ্যে যে পাঁচ খাবার খেলেই বিপদ! জানুন, সাবধান হোন

গরমে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে ডায়াবেটিস রোগীদের! সুস্থ থাকবেন যেভাবে

মুখে দুর্গন্ধের কারণে হা করতেও অস্বস্তি লাগে? সমাধান কী জানুন

লিভার ভালো রাখে লাউ! ওজন এবং উচ্চ রক্তচাপও থাকে নিয়ন্ত্রণে

কিডনি ভালো রাখে আমের পাতা! উচ্চ রক্তচাপও থাকে নিয়ন্ত্রণে

ইফতার ও সাহরিতে বাহারি আয়োজন ধানমন্ডির দ্য ফরেস্ট লাউঞ্জে

বারবার ফোটানো চা খেলেই মারাত্মক বিপদ! বাঁচতে হলে জানুন

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :