পিরোজপুরে তরমুজের ভাসমান হাট

মো. ফয়সাল হাসান, পিরোজপুর
 | প্রকাশিত : ২৪ এপ্রিল ২০২২, ১১:৩০

পিরোজপুরের স্বরূপকাঠী উপজেলার মিয়ারহাট বন্দরের কালিবাড়ী খালমুখে জমে ওঠেছে ভাসমান তরমুজের হাট। এ বছর চাহিদার তুলনায় তরমুজের ফলন কম, দাম বেশি হওয়ায় হাসি ফুটেছে ব্যবসায়ী ও চাষিদের মুখে।

তরমুজের হাট ঘুরে এমনটা জানা গেছে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে।

ব্যবসায়ীরা জানায়, হাটে আসা বড় তরমুজ গেল বছরও দাম ছিল ২৫০-২৭০ টাকা। সেই তরমজু এবছর বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩২০ টাকায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন এমনিতে রোজা, তার উপরে ওষ্ঠাগত গরমের কারণে তরমুজের চাহিদা বেশি। যে কারণে চাহিদার তুলনায় কম ফলনে তরমুজের দাম অনেকটা বেশি।

খাল ঘুরে দেখা যায়, ট্রলার ভর্তি ঠাসা তরমুজ। খালের যতদূর চোখ যায় কেবল তরমুজ আর তরমুজ। চৈত্রের মাজামাজি সময় থেকে শুরু করে ভরা জৈষ্ঠ্য মাস পর্যন্ত চলে ভাসমান এ তরমুজের হাট। ব্যস্ততম ওই খালে তরমুজের ট্রলারের কারণে হাটের সময় খাল দিয়ে অন্যকোন ট্রলার বা নৌকা যেতে কষ্টকর হয়ে পড়ে। প্রতি সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার দুদিন বসে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ভাসমান তরমুজের হাট। হাটে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে তরমুজ বেচাকেনা।

স্থানীয়রা জানায়, দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে ব্যবসায়ী ও চাষিরা তরমুজ এনে শতমূল্যে বিক্রি করেন এ হাটে। ব্যবসায়ীরা চাষিদের কাছ থেকে তরমুজের ক্ষেত কিনে এনে আকার ও সাইজ অনুযায়ী বিক্রি করেন শত মূল্যে।

অত্র উপজেলাসহ পাশ্ববর্তী বিভিন্ন উপজেলার লোকেরা ট্রলার ভর্তি করে শত শত তরমুজ কিনে চালান করেন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়। একই সাথে অনেক খুচরা ও পাইক্রারি বিক্রেতারা এখান থেকে তরমুজ কিনে বিক্রি করেন উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে। তরমুজের আকার অনুযায়ী ৬০ টাকা থেকে ৩২০ টাকা পর্যন্ত প্রতি পিস তরমুজ বিক্রি হয় হাটে।

পাশ্ববর্তী নাজিরপুর উপজেলার গাওখালি বাজার থেকে ট্রলার নিয়ে তরমুজ কিনতে আসছিলেন আব্দুল রশিদ। তিনি হাটে এসে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘোরাঘুড়ি করেন তরমুজ কেনার জন্য।

তিনি বলেন, গত বারের তুলনায় এ বছর ফলন কম হওয়ায় তরমুজের দাম বেশি। হাটে বড় সাইজের একশত তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ত্রিশ হাজার টাকায়। তাতে প্রতি পিস তরমুজের দাম পড়ে ৩০০ টাকা।

তিনি আরও বলেন, ৩০০ টাকার একটি তরমুজ কিনে বাজারে নেওয়া পর্যন্ত সেই তরমুজটির প্রতি খরচ পড়ে আরো চল্লিশ টাকা। তারপর সেই তরমুজ কয় টাকায় বিক্রি করতে হয়?

উপজেলার জগৎপট্টি গ্রামের তরমুজ ব্যবসায়ী মোস্তফা জামাল জানান, তিনিসহ তারা পাঁচজনে হাট থেকে তরমুজ কিনে কুমিল্লার দাউদকান্দিতে পাঠান। এখান থেকে শত হিসাবে প্রতিটি বড় তরমুজ ৩২০ টাকায় শত হিসেবে কিনে প্রতি ট্রলারে ৭-৮ হাজার তরমুজ পাঠান কুমিল্লায়। প্রতি ট্রলারে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা তার খরচ হয়। খরচপাতি বাদ দিয়ে প্রতিট্রিপে কিছুটা লাভ হয়। তবে এবছর তরমুজের ফলন একটু কম হওয়ায় চাষিরা বেশি লাভবান হচ্ছেন।

পটুয়াখালীর মুনসিরহাট থেকে হাটে ট্রলার ভর্তি তরমুজ নিয়ে আসা মো. আলমগীর জানান, তারা ক্ষেত হিসাবে চাষিদের কাছ থেকে তরমুজ কিনেন কানি হিসাবে। এক কানি (তিন বিঘা) জমির তরমুজ কিনেন সাড়ে ছয় লাখ থেকে সাত লাখ টাকায়।

তিনি আরোও বলেন, এক কানি জমিতে দুই হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার ৫০০ তরমুজ পাওয়া যায়।

হাটে আসা মলুহার গ্রামের আড়ৎদার আবুল কালাম জানান, হাটে ট্রলারভর্তি তরমুজ নিয়ে আসা ব্যবসায়ীরা দক্ষিণাঞ্চলের জেলা পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, কলাপাড়া, মহিপুর, মুনসিরহাট, রাঙাবালি, তালতলি,গলাচিপা, কালাইয়া প্রভৃতি এলাকা থেকে তরমুজের ক্ষেত কিনে ট্রলার ভরে তরমুজ নিয়ে আসেন এখানে। তারা মৌসুমের শুরুতে ক্ষেতে তরমুজের গুটি দেখে ক্ষেতমুলে তরমুজ কিনেন। তরমুজ বড় হলে মৌসুমে শুরু থেকেই তারা ট্রলার ভরে তরমুজ এনে বিক্রি করেন অত্র উপজেলা সহ বিভিন্ন উপজেলার হাটে।

সোহাগদল গ্রামের তরমুজ ব্যবসায়ী আব্দুল মন্নান বলেন, শত বছর ধরে মিয়ারহাটের কালিবাড়ি খালে ভাসমান তরমুজের হাট বসছে। প্রতি হাটে ৬০ লাখ টাকা থেকে কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি হয় এখানে।

ব্যবসায়ীরা জানায়, তরমুজের হাটে চাষি ও বেপারিরা ইচ্ছানুযায়ী মাল কিনতে বা বেচতে পারেন। এখানে কোন সিন্ডিকেট নেই। হাটের পরিবেশ সুষ্ঠ রাখতে বন্দর কমিটি তাদের সর্বাত্মক নিরাপত্তা দিচ্ছেন।

(ঢাকাটাইমস/২৪এপ্রিল/এসএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :