হাওরের বাঁধে ভাঙন ঠেকানোর বাস্তবায়ন নেই, দুর্ভোগে কৃষক

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৪ এপ্রিল ২০২২, ২১:২২

হাওরে ফসল রক্ষাবাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারে অর্থ বরাদ্দ বেড়েছে কয়েকগুণ। বেড়েছে বাঁধের দৈর্ঘ্য ও উচ্চতাও। কিন্তু বাঁধ সঠিক সময়ে, নিয়ম মেনে হয় না বলেই বারবার বাঁধগুলো ভেঙে ফসলহানি শিকার হচ্ছেন হাওরের কৃষকরা। গত ২০১৭ সালে এপ্রিল মাসে পাহাড়ী ঢলের পানির প্রথম ধাক্কা সামলাতে না পেরে বাঁধ ভেঙে ৯০ভাগ বোরো ধান পানিতে ডুবে যায় সুনামগঞ্জে হাওরাঞ্চলের কৃষকদের। একারণেই এবারও ছোট বড় ১৪টি হাওর বাঁধ ভেঙে ১০ হাজার হেক্টরের অধিক ফসলহানীর ঘটনায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সুনামগঞ্জের হাওরের হাজার হাজার কৃষক। এর পরেও হাওরের বাঁধে ভাঙন ঠেকানোর বাস্তবায়ন নেই,একারনে চরম দুর্ভোগের শিকার হাজার হাজার কৃষক প্রশ্ন তুলেছেন এই দুর্ভোগ থেকে কি মুক্তি মিলবে না।

আর কৃষক ও কৃষির সাথে সম্পর্কিতরা বলছেন,সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বাঁধ নির্মাণ ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ হয় না। বাঁধগুলো থাকে দুর্বল ফলে হাওরাঞ্চলে চৈত্র মাসের শেষের দিকে প্রতিবছর উজানের ঢলের প্রথম ধাক্কাতেই সহজে হাওরের বাঁধ ভেঙে ফসল ডুবে যায়, বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পরে। বছরের পর বছর বর্ষা এলেই শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির সময় পার করেন হাওরপারের কৃষকরা। আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠা থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না তারা। ফসল ডুবে বারবার পুড়ছে কৃষকের কপাল, মিলছে না টেকসই বাঁধ। হাওর নিয়ে কাজ করা সংঘটন গুলোও লোক দেখানো কাজ করছে তাদের সুবিধা মতো নিজেদের পিঠ বাঁচিয়ে। তারা আরও বলছেন, বার বার হাওরে কোন কারণে বাঁধ ভাঙ্গছে সে কারণগুলো চিহ্নিত করা হলেও সে ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ দেখা যায় না বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিভিন্ন বাঁধের পাশে বাসিন্দা ও কৃষকরা বলেন, বছরের পর বছর সুনামগঞ্জের হাওরের একমাত্র ফসল বোরো ধান রক্ষায় বাঁধের জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে সরকার। কিন্তু তার কোনো সুফল পাচ্ছেন না কৃষক। তারা চান টেকসই স্থায়ী বাঁধ। বাঁধ নির্মাণের সময় দেখা যায় বাঁধের অন্তত ৫০মিটার দূর থেকে মাটি আনার নিদের্শন থাকলেও বাঁধের কাছেই গর্ত করে মাটি তোলা হচ্ছে। ফলে গর্তের জায়গায় বাঁধ নরম হয়ে বাঁধ ধসে পড়েছে। যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ তার পুরোটা কাজে লাগে না। অনেক জায়গায় অপ্রয়োজনীয় বাঁধ দেওয়া হয়। এতে করে হাওরের পরিবেশ প্রতিবেশের ক্ষতি হয়। পিআইসির নামে প্রভাবশালীরা প্রকল্প নিয়ে সরকারি টাকা লুটপাট করে বাঁধ দিল আবার ফসলও নষ্ট হলো সব মিলিয়ে সরকারের কোটি কোটি টাকা অথের্র অপচয় হল বাঁধ নির্মাণে।

সুনামগঞ্জ কৃষি বিভাগ জানান, চলতি মৌসুমে সরকার সুনামগঞ্জে ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭২৭ পিআইসির মাধ্যমে ৫৩০ কিলোমিটার ফসলরক্ষা বাঁধ সংস্কার করা হয়। এবছর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে বাঁধ ভেঙে হাওরের চার হাজার ৯০০ হেক্টরের অধিক জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ২৫ হাজার কৃষকের ৬৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও সচেতন মহল বলছে ক্ষতির পরিমাণ দশ হাজার হেক্টের বেশি হবে।

তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিন শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী আহমদ মোরাদ ও হাওরের কৃষকরা বলছেন, প্রতি বছর বাঁধ সংস্কার হয় সরকারি টাকায়। কিন্তু বর্ষায় একের পর এক ভাঙতে থাকে বাঁধ। সেই বাঁধরক্ষায় যুগ যুগ ধরে পাহারা দিচ্ছেন কৃষক। এই ফসলহানী থেকে মুক্তির পথ মিললেও সেটি বাস্তবায়নে কোনও পদক্ষেপ দেখা যায় না সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীদের। হাওরের ব্যাপক ফসলহানির পুনরাবৃত্তি যে কোনো উপায়ে ঠেকাতে দায়িত্বশীলদের গুরুত্ব সহকারে কাজ করতে হবে। বাঁধের সমস্যা টেকনিক্যালি সমাধান করতে হবে।

পানি ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করেন বিশেষজ্ঞরা বলছেন,জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হাওরে বড় পরিবর্তন হচ্ছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে বৃষ্টির সময় বদলে যাওয়া। তাই বাঁধের কাজের সময় এগিয়ে আনতে হবে। এবং কাজটি কৃষি মন্ত্রণালয়কে সাথে নিয়ে প্রশাসনকে কঠোর নজরদারিতে করতে হবে। বাঁধের কাছ থেকে মাটি নিলে সেটি টিকবে না। বাঁধে মাটি ফেলেই দুরমুজ করাসহ সকল নির্দেশনা মানলে বাঁধ ভেঙে যাবে না।

হাবিবুর রহমান খেলুসহ জেলার শনির হাওরের কৃষকগন জানান, বাঁধগুলো সঠিকভাবে শেষ করতে হলে প্রথমত সময়মতো প্রকল্প কমিটিগুলো হতে হবে। যে কমিটি ৩০ নভেম্বরের মধ্যে হওয়ার কথা সেটি শুরু হয়নি ডিসেম্বরেও। দেরিতে কাজ শুরুর কারণে একটা বাঁধও শতভাগ সম্পন্ন হয়না। এমনকি ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও আরও ১০দিন সময় বাড়িয়ে নিলেও তা সম্ভব হয়নি। সেজন্য বাঁধ নির্মাণ-মেরামতের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দুর্নীতি-অনিয়ম-অবহেলা স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে দাবি করেন।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি বছরে তাহিরপুর উপজেলায় ৬৮টি পিআইসি ঘটন করা হয়েছে। এতে ৫৩কিলোমিটার ফসল রক্ষা ডুবন্ত বেড়ী বাঁধ ও ১০টি খাল (ক্লোজার) বন্ধের কাজের প্রকল্পে প্রাক্কলন ধরা হয়েছে ১২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। মে মাসে হাওর সমুদ্র হয়ে যায়। হাওরে জায়গা নির্ধারণ করে বর্ষায় বাঁধ কেটে দিয়ে বোরোর সময় আবার সেসব জায়গা ভরাট করার প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ করছেন তারা। এই ভরাটের ক্ষেত্রেও মাটি সংকট রয়েছে।

জেলা আ.লীগের কৃষি, সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ও তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল জানান, বাঁধ ভাঙার শঙ্কা এখনও কাটছেই না। হাওরের দীর্ঘস্থায়ী সমাধান বাঁধ দিয়ে সম্ভব না হলেও মেঘনা পর্যন্ত নদী খনন করলে হাওরে বাঁধের উপর চাপ কম থাকবে। ফসলহানির আশংকা থাকবে না।

(ঢাকাটাইমস/২৪এপ্রিল/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :