এবার জেলা পরিষদের প্রশাসক হতে আউয়ালের তোড়জোড়

প্রকাশ | ২৪ এপ্রিল ২০২২, ২১:৩৮

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস

আওয়ামী লীগের মনোনয়নে পিরোজপুর-১ আসন থেকে পরপর দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত। দুর্নীতি আর নানা অপকর্মের অভিযোগে সবশেষ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন মেলেনি। আলোচিত এই সাবেক সাংসদ একেএমএ আউয়াল।

তার বিরুদ্ধে এখন অর্থপাচার, সরকারি জমি দখল, অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ একাধিক মামলার আসামি। নিজের ও স্ত্রীর স্থাবর অস্থাবর সবসম্পত্তি আদালতে নির্দেশে জব্দ করেছে দুদক।

এত অভিযোগ নিয়ে দলীয় রাজনীতিতে কোনঠাসা হয়ে পড়লেও আবার নতুন করে জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগের খবরে নড়েচড়ে বসছেন তিনি। চেষ্টা করছেন প্রশাসক পদে বসতে।

গত ১৮ এপ্রিল দেশের ৬১টি জেলা পরিষদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় পর্ষদগুলো বিলুপ্ত করে সরকার। এসব পরিষদে প্রশাসক নিয়োগের আগ পর্যন্ত প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের।

তবে এই খবরও শোনা যাচ্ছে, প্রশাসক পদে রাজনৈতিক ব্যক্তিরা আসছেন। সরকারের সর্বোচ্চ মহল থেকে দ্রুততম সময়ে প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত হচ্ছে। ভোটার তালিকা তৈরিরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এতে ভোট দেবেন।

এমন খবরে বিলুপ্ত হওয়া জেলা পরিষদের প্রশাসক পদে আগ্রহী রাজনীতিবিদরা নড়েচড়ে বসছেন। কেউ কেউ নিজেদের মতো চেষ্টা তদবীরও শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে দুর্নীতির বিষয়গুলো সামনে চলে আসায় অনেকটা কোনঠাসা হয়ে পড়েন আউয়াল। দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে তার ভাইও প্রকাশ্যে কথা বলেছেন। দুইবারের সাবেক সংসদ সদস্য এবং প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ হলেও এখন সেই অর্থে পিরোজপুরে কিছুটা নড়বড়ে অবস্থায় পড়েছেন আউয়াল। তাই জেলা পরিষদের প্রশাসক পদ পেলে প্রভাব ফিরে পেতে সহায়তা করবে বলে মনে করছেন তার কর্মী-সমর্থকরা।

তবে নিজের আগ্রহ না থাকলেও দল দায়িত্ব দিলে জেলা পরিষদে আসতে আপত্তি নেই বলে ঢাকাটাইমসকে জানিয়েছেন একেএমএ আউয়াল। রবিবার সন্ধ্যায় তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমি আসলে জেলা পরিষদ নিয়ে খুব ইন্টারেস্টেড না। সামনে ইলেকশন আসতেছে সেখানে নির্বাচন করতে চাই। এরপরও যার দল করি সে যদি দায়িত্ব দেয় তাহলে তো কিছু করার নেই।’

এমপি থেকে দুদকের একাধিক মামলার আসামি

তথ্য অনুযায়ী, সাবেক এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দুর্নীতি ও তথ্য গোপনের দায়ে ২০১৯ ও ২০২০ সালে একে একে ৫টি মামলা করে দুদক। যার মধ্যে ২টি মানি লন্ডারিং। বাকি ৩টি অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা। এখন পর্যন্ত জমা দেয়া ৩টি মামলার তদন্তে সাবেক এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা।

এদিকে গত বছরের ২০ জানুয়ারি এ কে এম আউয়াল এবং তার স্ত্রী মিসেস লায়লা পারভীন এর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪২০, ৪০৯ ও ১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সনের ২ নং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় তিনটি মামলায় চার্জশিট অনুমোদন করা হয়।

জানা যায়, ২০১৯ সালে আউয়াল সরকারি খাস জমি দখল করে ওই জমিতে অবৈধভাবে তার স্ত্রী মিসেস লায়লা পারভীনের নামে একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করেন।

দুদকের পৃথক আরও একটি অনুসন্ধান থেকে জানা যায়, এমপি আউয়াল ভিপি ‘ক’ তফসিলভুক্ত রাজার পুকুর নামে পিরোজপুরের একটি পুকুর ভরাট করে অবৈধভাবে দখল ও আউয়াল ফাউন্ডেশন নামে আরও একটি সরকারি তফসিলভুক্ত জমি দখল করে ভবন নির্মাণ করেন। যদিও স্থানীয় প্রশাসন নিজের নামে করা তার ফাউন্ডেশনের জায়গা ২০২০ সালে দখলে নেয়।

অন্যদিকে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ধারায়ও অভিযুক্ত একেএম আউয়াল। বৈধ আয়ের বাইরে তিনি ৩৩ কোটি টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জন করেছেন দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে। বিপরীতে দুদকের কাছে জমা দেয়া তথ্যে তিনি গোপন করেছেন ১৫কোটির বেশি সম্পদের হিসাব। অর্থপাচারের দায়ে আরো একটি মামলা রয়েছে সাবেক এই জনপ্রতিনিধির  বিরুদ্ধে।

অন্যদিকে ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি আউয়াল ও তার স্ত্রীর জ্ঞাত আয়বর্হিভূত স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক, ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেয় আদালত। ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এই আদেশ দেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে তারা উচ্চ আদালতে গেলেও  তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে উচ্চ আদালতও মহানগর আদালতের সম্পদ জব্দের আদেশ বহাল রেখেছেন। তবে বর্তমানে এই দম্পতি জামিনে আছেন।

দুদকের একাধিক মামলা নিয়ে যখন অনেকটা বেকায়দায় আউয়াল তখন ২০২০ সালের মার্চের শুরুতে সস্ত্রীক কারাগারে যেতে হয়েছিল আউয়াল দম্পতিকে। অবশ্য ওই আদেশ দেয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই বিচারক আব্দুল মান্নানকে বদলির আদেশ আসা নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল।

পরে ওইদিন বিকালেই তাদের জামিন দেন পিরোজপুর জেলা আদালত। এরবাইরেও ঘুষ বাণিজ্য, ঠিকাদারিতে কমিশন ও এলাকায় তার বিরুদ্ধে নিজস্ব বাহিনী রাখারও অভিযোগ আছে।

দুদকের প্রধান আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘একেএমএ আউয়াল পরিবারের জামিন কেন বাতিল হবে না তা নিয়ে ইতিমধ্যেই উচ্চ আদালত রুল জারি করেছেন। শিগগিরই জামিন বাতিলের চুড়ান্ত শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। তবে তাদের বিরুদ্ধে দুদক আইনের ৪০৯ ধারাসহ অনেক অভিযোগে মামলা চলছে। মামলায় তার বিরুদ্ধে যথেষ্ট সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে শেষ পর‌্যন্ত অভিযোগ প্রমাণিত হলে রায়ে কী হবে তা এখনই বলা মুশকিল।’

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘জনপ্রতিনিধিরা যারা  দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত, বিশেষ করে দুদকের মামলার যারা আসামী তাদের অন্তত মামলার সুরাহার আগে পুনরায় স্থানীয় সরকারের কোন গুরুত্বপূর্ণ আসনে বসানোর আগে ভাবতে হবে। না হলে মানুষের কাছে নেতিবাচক এক বার্তা যাবে।’

(ঢাকাটাইমস/২৪এপ্রিল/বিইউ/ডিএম)