আদালতে বিচারকের অনুরোধে বিচ্ছেদ হওয়া দম্পতির আবারও বিয়ে

পঞ্চগড় প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৪ এপ্রিল ২০২২, ২২:৩৪

পঞ্চগড়ে তিন শিশু সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে এবং আদালতের বিচারকের কথা শুনে বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়া দম্পত্তি আবার বিয়ে করলেন। রবিবার বিকালে বিচারকের খাস কামরায় মাওলানা ডেকে দুই আইনজীবী ও পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে তাদের আবারো বিয়ে দেওয়া হয়।

জেলার বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের বারপাটিয়া এলাকার কৃষক শাহানুর ইসলাম (৪২)। তিনি দাম্পত্য কলহের জেরে প্রায় ছয় মাস আগে স্ত্রী আকতারা বানুকে (৩৬) তালাক দিয়েছিলেন। এতে ভেঙে যায় ওই দম্পতির ১৭ বছরের সংসার। তবে বিবাহ বিচ্ছেদের পর বাবা-মা দুজনেই বিপাকে পড়েন তাদের দুই মেয়ে এক ছেলে। এদিকে স্বামীর বিরুদ্ধে গত ৩০ মার্চ আদালতে যৌতুকের দাবি ও নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করেন স্ত্রী আকতারা বানু। মামলাটি আমলে নিয়ে অভিযুক্তের নামে সমন জারি করে আদালত। ওই মামলায় রবিবার আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিন আবেদন করেন শাহানুর। তার প্রস্তুতি ছিল আদালতেই দেনমোহরের এক লাখ এক হাজার টাকা পরিশোধ করে দেবেন স্ত্রীকে। কারাগারে গেলেও স্ত্রীর সঙ্গে তিনি আর সংসার করবেন না। তবে আদালতের এজলাসে উপস্থিতির পর ঘটে গেল নাটকীয় ঘটনা। আদালতে অন্যদের সঙ্গে তাদের তিন সন্তানও উপস্থিত হয়েছিলেন। সন্তানদের দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন তাদের বাবা-মা। জামিন আবেদনের শুনানির সময় বিচারক অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মতিউর রহমান তিন সন্তানের দিকে চেয়ে তাদের কলহ ভুলে সংসারে ফেরার অনুরোধ জানান। কিছুক্ষণ চিন্তার এক পর্যায়ে দুজনেই সংসারে ফিরতে সম্মত হন। এরপর বিচারকের খাস কামরায় মাওলানা ডেকে দুই আইনজীবী ও পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে ইসলামী শরিয়া মোতাবেক এক হাজার টাকা নগদ দেনমোহরানায় তাদের আবারো বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ে পড়ান আদালত মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুল খালেক। আপসনামা দাখিল করার পর আইনি প্রক্রিয়া শেষে তিন সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ফিরেন ওই দম্পতি।

গৃহবধূ আকতারা বানু বলেন, আমি আমার সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিলাম। যা হয়েছে আল্লাহর রহমতে ভালোই হয়েছে। এখন আমরা আবারো একসঙ্গে থাকবো এবং কলহ-বিবাদ যাতে না হয় সে চেষ্টা করব।

গৃহবধূর স্বামী শাহানুর রহমান বলেন, ‘আমরা সুখে শান্তিতেই ছিলাম। পারিবারিক কাজ কর্ম নিয়ে একটু তর্ক-বিতর্ক হলেই আমার স্ত্রী তার বাবার বাড়িতে চলে যেত। তাই রাগে ক্ষোভে আমি স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলাম। তালাকের পর আমার দিন খুব কষ্টে গেছে। আমার স্ত্রী আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করায় আমি আরও রেগে যাই। আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিন আবেদন করলে বিচারক আমাকে তিন সন্তানের দিকে চেয়ে আপসের কথা বলেন। তখন সব ভেবে চিন্তে আমি আপস করার সিদ্ধান্ত নেই। বিচারক আবার আমাদের বিয়ে দিয়ে আমার স্ত্রীকে আমার হাতে তুলে দেন। আমি স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বাড়ি ফিরি।

বাদীপক্ষের আইনজীবী মকবুল হোসেন বলেন, আমরাও চেয়েছিলাম তাদের সংসারটি টিকে থাকুক। বিচারক মহোদয় আমাদের সেই সুযোগটি করে দিয়েছেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী হাজিজুর রহমান বলেন, খুব সামান্য বিষয়েই তালাক দিয়েছিলেন শাহানুর। বিচারক মহোদয়ের সঙ্গে আমরাও তাদের সংসারে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ জানাই। এই বিচারে একটি সংসার রক্ষা পেল।

(ঢাকাটাইমস/২৪এপ্রিল/এআর)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :