গরমে ঘর ঠান্ডা রাখতে এসির বিল কমাবেন যেভাবে

প্রকাশ | ২৮ এপ্রিল ২০২২, ০৯:২৬

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস

তীব্র গরমে অতিষ্ট জনজীবন। প্রচন্ড গরমে প্রশান্তির ছোঁয়া এনে দেয় এসির শীতল হাওয়া। ভ্যাপসা গরম থেকে বাঁচতে এসির প্রয়োজনীয়তা এখনও। গরমে স্বস্তি পেতে এসির জুড়ি নেই। গরম থেকে স্বস্তি পেতে অনেকেই বাসায় এসি ব্যবহার করে থাকেন। অনেকে আবার নতুন করে এসি কেনার জন্য ধারণা নিচ্ছেন। তবে সবার মনে একটাই ভয় থাকে এসি ব্যবহারের কারণে বিদ্যুৎ বিল বেশি আসবে। কিছু নিয়ম মেনে যদি আপনি এসি চালান তবে বিদ্যুৎ বিল কম আসবে। এসি যারা কিনছেন তাদের সচেতন হতে হবে অনেক বিষয়ে। রইল এমন কিছু টোটকা যাতে এসির খরচ থাকবে নাগালের মধ্যেই।

 

এসি অন করার আগে দরজা-জানলা খুলে রাখুন

ঘরের তাপমাত্রা যত বেশি হবে কুলার বা এই ধরনের যন্ত্র ঘর ঠান্ডা করতে তত বেশি সময় নেবে। সে ক্ষেত্রে বেশি সময় ধরে এসি চালানোর প্রয়োজন পড়ে। বিলও বাড়তে থাকে চড়চড় করে। ঘরে মোটা পর্দা লাগালে বাইরের গরম হাওয়া ও আলো কম আসবে। ফলে ঘরও তাড়াতাড়ি ঠান্ডা হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০ মিনিট ধরে ঘরের জানলা-দরজা খুলে, পাখা চালিয়ে রাখুন। পরে যখন দরজা-জানলা বন্ধ করে আবার এসি চালাবেন, তখন ঘরটি ঠান্ডা করতে আপনার এসি মাত্র আধ ঘণ্টা বা তারও কম সময় নেবে।

 

ঘুমনোর সময়ে এসি-তে টাইমার লাগিয়ে রাখুন

রাতে এই যন্ত্রটি চালিয়ে ঘুমিয়ে পড়ার ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে ঘর ঠান্ডা হয়ে যায়। তার পর আর দরকার হয় না। কিন্তু গভীর ঘুমে তা নির্দিষ্ট সময়ে বন্ধ করা হয় না। ফলে সারা রাত এসি চলতে থাকে। সেই জন্য টাইমার দিয়ে রাখলে ভাল। দু থেকে আড়াই ঘণ্টার টাইমার লাগিয়ে রাখলে নির্দিষ্ট সময়ের পর তা নিজেই বন্ধ হয়ে যাবে। বিদ্যুৎ ও অর্থ—দুই-ই সাশ্রয় হবে।

 

ইনভার্টার এসি ব্যবহার করুন

 

এসি কেনার আগে প্রতিটা ব্র্যান্ডে নতুন কি ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার হচ্ছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা নিলে ভালো ব্রান্ড বাছাই করা যাবে সহজেই। বিদ্যুৎ খরচে সাশ্রয় হবে। সেক্ষেত্রে ইনভার্টার কিনুন। ইনভার্টার এসির ব্যবহারে বিল কম আসে। ইনভার্টার এসির বড় সুবিধা হচ্ছে ইনভার্টার এসির কমপ্রেসর মোটরটি প্রয়োজনমতো নিজস্ব চলার গতি পরিবর্তন করতে পারে। ইনভার্টার এসিতে এমন একটি সেন্সর থাকে, যা ঘরের তাপমাত্রার ওপর নির্ভর করে কমপ্রেসর পুরোপুরি বন্ধ না করে, মোটরটির চলার গতি কমিয়ে দেয়। এর কারণেই বিদ্যুৎ খরচ কমে আসে, যা পরিবেশবান্ধব। পিক আওয়ারে (বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টা) বিদ্যুৎ ব্যবহার না করে অফ-পিক আওয়ারে যেকোনো বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার বিল কমানোর একটি কার্যকর কৌশল।

এসি-র সঠিক তাপমাত্রা সেট করুন

এসি অন করে তার তাপমাত্রা অন্তত ২০ মিনিটের জন্য ১৬ ডিগ্রিতে কুইক কুল মোডে রাখুন এবং তারপরে সেটিকে ২৪ ডিগ্রিতে সেট করুন। এমনটা করলেও ইলেকট্রিক বিল কম আসবে। ব্যুরো অফ এনার্জি এফিশিয়েন্সি-র একটি গবেষণা অনুযায়ী, এসি-র তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রিতে রাখা সবথেকে ভাল। কারণ, এই তাপমাত্রা মানব শরীরের জন্য স্বস্তিদায়ক। শুধু তাই নয়। রিসার্চে আরও বলা হচ্ছে, এসি-র তাপমাত্রা যত বাড়ানো হয়, প্রতি ডিগ্রিতে ৬ শতাংশ করে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। তাই আপনার এসি ১৮ ডিগ্রির পরিবর্তে ২৪ ডিগ্রিতে চালিয়ে রাখলে ইলেকট্রিক বিল অনেকটাই বাঁচাতে পারবেন।

 

ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস বন্ধ রাখুন

ঘরে টিভি, ফ্রিজ ও অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস থাকলে তা থেকে তাপ নির্গত হয়। রাতে এসি চালানোর আগে এই ধরনের ডিভাইস বন্ধ করে রাখলে কম বিদ্যুৎ খরচ হবে।

 

ঠিক সময়ে এসি সার্ভিসিং

 

এমন কোনও নিয়ম নেই যে, এয়ার কন্ডিশনার আপনাকে বছরে একবারই সার্ভিসিং করতে হবে। আপনি যদি এমন কোনও এলাকায় বাসবাস করেন, যেখানে ধূলোবালি থেকে সৃষ্ট নোংরার পরিমাণ একটু বেশি, সেরকম জায়গায় দুই থেকে তিন মাস অন্তর এসি সার্ভিসিং করানো অত্যন্ত জরুরি। এমনটা করতে পারলে আপনার এসি যেমন ঠান্ডাও ভাল হবে, তেমনই আবার ইলেকট্রিক বিলও একটু সাশ্রয় করতে পারবেন। এসি খুব বেশি পুরনো হয়ে গেলে তা চালানো ঠিক নয়। কারণ পুরনো এসিগুলো নতুনের মত খুব বেশি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হয় না।

ঘর ঠান্ডা রাখার কৌশল

এসি ছাড়াও ঘর ঠান্ডা রাখার বেশ কয়েকটি উপায় রয়েছে। অন্দরসজ্জায় এখন গাছ লাগান অনেকেই। বেশ কিছু গাছ রয়েছে যেগুলো শুধু অন্দরসজ্জা নয় ঘর ঠান্ডা রাখতেও সহায়তা করতে পারে। অ্যালো ভেরা, বস্টন ফার্ন, স্নেক প্লান্ট, উইপিং ফিগ, অ্যারিকা পাম ইত্যাদি উদ্ভিদ ছোট টবে করে ঘরে রাখলে ঘর ঠান্ডা থাকে। পাশাপাশি ঘরের বাতাসকেও শুদ্ধ করে এই গাছগুলো।

সাধারণ বাল্ব-টিউব না ব্যবহার করে মৃদু আলো ব্যবহার করতে পারেন। ঘরে জোরালো আলো না ব্যবহার করে আধুনিক এলইডি লাইট ব্যবহার করলে গরমে কিছুটা আরাম মিলতে পারে।

দুপুরের সময় ঘরের দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে জানালা থাকলে তা বন্ধ করে দিন। যেখানে সরাসরি সূর্যের আলো পড়ে সেসব জানালার পর্দা টেনে রাখুন।

আপনার ঘরে কোন জানালা দিয়ে সবচেয়ে বেশি হাওয়া-বাতাস খেলে, এমন জানলা বা দরজা থাকলে সেটি খোলা রাখুন, এতে গুমোটভাব বেরিয়ে যাবে।

বিছানার চাদর বদলান। গরমের মসয় আপনার ঘরের বিছানায় মোটা বা কারুকাজ আছে এমন চাদর পাতবেন না। সাদা বা হালকা রঙের কাপড় তাপ শোষণ করে না বরং প্রতিফলিত করে এমন চাদর পাতুন।

সাদা রঙ আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মিকে প্রতিহত করে প্রাকৃতিকভাবে ঘরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে, তাই চেষ্টা করবেন ছাদে সাদা রঙের পেইন্টিং করাতে।

গরম প্রতিরোধ করতে অনেকেই টেবিল ফ্যান ব্যবহার করেন। তবে টেবিল ফ্যান চালানোর সময়ে সামনে একটি পাত্রে কিছু বরফের কুচি রেখে দিলে আরও বেশি ঠান্ডা হবে পাখার হওয়া।

দিনে অন্তত দুই থেকে তিন বার একটু বেশি পানি দিয়ে ঘরের মেঝে মুছতে হবে। এতে ঠান্ডা থাকবে মেঝে। আর মেঝে ঠান্ডা থাকলে কমবে ঘরের সার্বিক তাপমাত্রাও।

রান্নার সময় প্রয়োজনের বেশিক্ষণ চুলা জ্বালিয়ে রাখা চলবে না। রান্না চলাকালীন চালিয়ে রাখতে হবে চিমনি কিংবা বায়ু নির্গমনের পাখা। রান্নার আগুন ও তেল মশলার ঝাঁঝ শুধু রান্নাঘর নয়, আশেপাশের উষ্ণতাও বাড়িয়ে দেয় অনেকটাই।

এখন অনেকেই ছাদের উপর আপতিত রোদ কমাতে ছাদের উপর অতিরিক্ত এক প্রকারের কৃত্রিম ছাদ তৈরি করছেন। লোহার পাইপ ও বিশেষ ভাবে তৈরি এক ধরনের টিনের পাত দিয়ে এই ছাদ তৈরি হয়। এতে সরাসরি রোদ পড়ে না ছাদে, ফলে কম গরম হয় ঘর।

কম্পিউটার, ল্যাপটপ, টিভি প্রচুর তাপ উৎপন্ন করে যা ঘরকে গরম করে ফেলে। তাই খুব প্রয়োজন না হলে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, টিভি বন্ধ রাখুন। বা অন্য ঘরে এগুলো ব্যবহার করুন।

(ঢাকাটাইমস/২৮ এপ্রিল/আরজেড)