গ্রেপ্তারের ২০ ঘণ্টা পর জামিন পেলেন সেই ছাত্রলীগ নেতা

সাতক্ষীরার তালার মেধাবী কলেজছাত্রকে অপহরণের পর বিবস্ত্র করে তার চুল কেটে ন্যাড়া করে দিয়ে শারীরিক নির্যাতনের ভিডিও চিত্র ধারণের রোমহর্ষক ঘটনায় জড়িত প্রধান আসামি উপজেলা ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ আকিব গ্রেপ্তারের ২০ ঘণ্টা পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

বুধবার সন্ধ্যায় সৈয়দ আকিবকে তালা থানা পুলিশ খুলনার ডুমুরিয়া বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। তাকে বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে সাতক্ষীরার বিচারিক হাকিম তৃতীয় আদালতের বিচারক মহিদুল ইসলাম তাকে দুই হাজার টাকা বণ্ডে জামিনে মুক্তির আদেশ দেন।

সৈয়দ আকিব তালা উপজেলার মাঝিয়াড়া গ্রামের সৈয়দ ইদ্রিসের ছেলে।

তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু জিহাদ ফকরুল ইসলাম খান বলেন, এসএসসি পরীক্ষার্থী প্রেমিকাকে ভাগিয়ে নিয়ে সম্পর্ক গড়ে তোলার অভিযোগে মেধাবী ছাত্র শোয়েব আজিজ তন্ময়কে অমানুষিক নির্যাতন করার ঘটনায় প্রধান আসামি সৈয়দ আকিবকে ডুমুরিয়া থেকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও তালা সদর ইউনিয়নের সাবেক আহবায়ক। এ ঘটনায় জড়িত অপর চার আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

সাতক্ষীরার বিচারিক হাকিম তৃতীয় আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোর্ট উপপরিদর্শক (সিএসআই) হাবিবুর রহমান জানান, সৈয়দ আকিবের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগেরভিত্তিতে তিনি তার জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে বিচারক মহিদুল ইসলাম তাকে দুই হাজার টাকার বণ্ডে জামিন মঞ্জুর করেন। জামিননামার কাগজ জমা দিয়েই কোর্ট গারদ থেকে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। আসামিপক্ষের আইনজীবী ছিলেন রাজীব রায় চৌধুরী সঞ্জয়।

উল্লেখ্য, জাতপুর টেকনিকেল কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে সদ্য এইচএসসি পাস করা জাতপুর গ্রামের শোয়েব আজিজ তন্ময়কে তার এক বন্ধু রবিবার দুপুরে মোবাইল ফোনে তালা বাজারে ডেকে নেয়। পরে তাকে তালা সরকারি কলেজ হোস্টেলের একটি কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে উপস্থিত ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ আকিব, শ্রমিকলীগ নেতা সৌমিত্র চক্রবর্তী এবং ছাত্রলীগের নাহিদ হাসান উৎস্য, সজীব ও জয় তার ওপর নির্যাতন শুরু করে। সৈয়দ আকিব ও তার সহযোগীরা তাকে বিবস্ত্র করে মাথার চুল কেটে ন্যাড়া করে দেয় এবং দৈহিকভাবে নির্যাতন চালিয়ে জখম করে। এ অবস্থায় ভিডিও চিত্র ধারণ করা হয়। তার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে তন্ময়ের বাড়িতে ফোন করে তার মা নার্গিস সুলতানার কাছে ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। মোবাইল ফোনে তন্ময়ের মারপিটের শব্দ ও আহাজারি শোনানো হয়। খবর পেয়ে তন্ময়ের দুই চাচাত ভাই কলেজ হোস্টেলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করেন। পরে তাকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় তালা হাসপাতালে। সেখানেও আকিব ও তার সহযোগীরা আবারও তাকে মারপিট করার হুমকি দেয়।

এ ঘটনায় তন্ময়ের বাবা তালা থানায় সৈয়দ আকিবসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ ঘটনায় জেলা ছাত্রলীগ সৈয়দ আকিবকে সংগঠন থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে। পুলিশ সৈয়দ আকিবকে খুঁজতে থাকে। অবশেষে বুধবার বিকালে সে পুলিশের খাচায় বন্দী হয়। বৃহস্পতিবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে তাকে থানা থেকে আদালতে পাঠানো হয়।

(ঢাকাটাইমস/২৮এপ্রিল/এলএ)