চাঁদপুরে সূর্যমুখীর হাসিতে ছড়াচ্ছে মুগ্ধতা

প্রকাশ | ২৯ এপ্রিল ২০২২, ০৮:২৬

শওকত আলী, চাঁদপুর

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে সূর্যমুখীর ফুল চাষ করায় হাসিতে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে এ ফুল। এতে করে এ এলাকার চাষিরা এখন ব্যাপক আকারে ও ব্যাপকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে। সূর্যমুখীর ফুলে বীজ বপনের ৯৫ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে ফসল তোলা সম্ভব।

সূর্যমুখীর ফুলের চাষে অন্য ফসলের চেয়ে খরচ কম, অধিক লাভ হওয়ার কারণে এই ফুলের চাষে কৃষক আগ্রহী। সার, ওষুধ কম লাগে, ফলে অধিক লাভবান হওয়া যায়। এ ফুলের তেল কোলেস্টেরলমুক্ত ও প্রচুর পরিমাণে প্রাণশক্তি থাকায় সূর্যমুখী তেল শরীরের দুর্বলতা, কার্যক্ষমতা বাড়াতে অনন্য ভূমিকা রাখে। রান্নার জন্য সয়াবিন তেলের চেয়ে সূর্যমুখী তেল দশগুণ বেশি পুষ্টি সমৃদ্ধ। সূর্যমুখী তেল শরীরের হাড় সুস্থ ও মজবুত করে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

ক্যান্সার ও হৃদরোগ প্রতিরোধী অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন সূর্যমুখী ফুল চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায়। কম খরচ আর স্বল্প সময়ে অধিক লাভ হওয়ায় খুশি চাষিরা। আর সূর্যমুখী ফুল চাষে সহযোগিতা করে চাষিদের উৎপাদিত বীজ স্থানীয় চাহিদা পুরণ করে দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।

সবুজের মধ্যে হলুদ ফুলগুলো অপরূপ সৌন্দর্যের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে সূর্যমুখী ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ও দেখার জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিনই ছুটে আসছেন অসংখ্য দর্শনার্থীরা।  প্রজাপতি যেমন ছুটে আসছে, ফুলের মধু আহরণ করতে। তেমনি প্রকৃতিপ্রেমীরা আসছেন দল বেঁধে এ ফুল চাষ দেখতে। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের পদচারনায় ফরিদগঞ্জ উপজেলাও মুখরিত হয়ে উঠছে সূর্যমুখী চাষে।

বৈচিত্র্যময় এ উপজেলায় আগে ছোট পরিসরে সুর্যমুখীর চাষ হলেও নতুন জাতের সূর্যমুখী ফুলের বড় আকারের চাষে এখন বাম্পার ফলন হয়েছে। এতে সূর্যমুখী ফুলের সঙ্গে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখেও। সূর্যমুখীর চাষ করে সফল হয়েছে ফরিদগঞ্জ কৃষি বিভাগ। সবুজের মাঠজুড়ে সূর্যমুখীর মায়াবী হাসি আর এটি চাষে লাভজনক হওয়ায় এ উপজেলায় সূর্যমুখী চাষের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আগে শুধু কৃষির উপর ফরিদগঞ্জের মানুষ নির্ভরশীল হলেও বর্তমানে প্রায় সবধরনের ফুল-ফল উৎপন্ন হয়। সে কারণেই অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন সূর্যমুখী ফুলের চাষ শুরু হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ক্যান্সার ও হৃদরোগ প্রতিরোধী অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন সূর্যমুখীর তেল অন্যান্য সাধারণ তেলের চাইতে একটু আলাদা। কোলেস্টেরলমুক্ত ও প্রচুর পরিমাণে প্রাণশক্তি থাকায় সূর্যমুখী তেল শরীরের দুর্বলতা, কার্যক্ষমতা বাড়াতে অনন্য ভূমিকা রাখে। রান্নার জন্য সয়াবিন তেলের চেয়ে সূর্যমুখী তেল দশগুণ বেশি পুষ্টি সমৃদ্ধ। সূর্যমুখী তেল শরীরের হাড় সুস্থ ও মজবুত করে। শরীরের ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও কপারের চাহিদা পূরণ করে। ভিটামিন ই সমৃদ্ধ এই তেল শরীরের নানা রকম ব্যথা দূর করতে সহায়তা করে। সূর্যমুখী তেলে থাকা ম্যাগনেসিয়াম মানসিক চাপ দূর করে। এক কথায় সূর্যমুখী তেলে মানব দেহের মহাওষুধ হিসেবে ভূমিকা পালন করছে।

সূর্যমুখীর চাষ দেখতে আসা দর্শনার্থী পৌর এলাকার আবুল কাশেম বলেন, ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছি। একই সাথে হাজারও সূর্যমুখী ফুটে আছে। খুব ভালো লেগেছে।

ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১০নম্বর গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের কৃষক মোশারফ পাটওয়ারী বলেন, কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় সূর্যমুখী চাষ করেছি। অন্য ফসলের চেয়ে খরচ কম, অধিক লাভ হওয়ার কারণে এই ফুলের চাষ করেছি। সার, ওষুধ কম লাগে, ফলে অধিক লাভবান হতে পারি। ফুল দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসছে। আশা করছি, সূর্যমুখী চাষে লাভবান হবো। আমার চাষাবাদ দেখে আশে পাশের কৃষকরাও এ ফুল চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে।

সূর্যমুখী চাষিরা জানায়, বীজ বপনের ৯৫ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে ফসল তোলা যায়। সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার ও দুবার সেচ দিতে হয় এ ফসলে। এক একর জমিতে ৩৫ থেকে ৪০হাজার টাকা খরচ হয়। আর এক একর জমিতে প্রায় এক টন বীজ উৎপাদন হয়। এক টন বীজ ৮৫ থেকে ৯০হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়। সূর্যমুখী গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।

ফরিদগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আশিক জামিল মাহমুদ জানান, ক্যান্সার ও হৃদরোগ প্রতিরোধী অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন সূর্যমুখী ফুল চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এ উপজেলায়। আমরা ইতোমধ্যে ১০ টি স্থানে সুর্যমূখী ফুলের প্রদর্শনী দিয়েছি। এছাড়াও অনেক চাষিরা সুর্যমুখীর চাষ করেছে বলে আমরা জেনেছি। খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় তদারকি করবো। আমরা আশা করছি, এ উপজেলায় উৎপাদিত বীজ স্থানীয় চাহিদা পুরণ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা মাথায় রেখে কাজ করে যাচ্ছি।

(ঢাকাটাইমস/২৯এপ্রিল/এসএ)