ঈদ মোবারক

মোহাম্মদ আরিফুর রহমান
 | প্রকাশিত : ০৩ মে ২০২২, ১৫:১৮

ঈদ মোবারক। দুই বছর পর আবার ঈদ উৎসব তার স্বরূপ ফিরে পেয়েছে। মহামারি করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে গত দুই বছর ঈদ-আনন্দ বন্দি ছিল সরকারের ঘোষিত লকডাউন বা বিধিনিষেধের বেড়াজালে। এবার আর সেই পরিস্থিতি নেই। তাই কদিন ধরে সবার হৃদয়ে অনুরণিত হচ্ছে এল খুশির ঈদ। গতকাল ঈদের চাঁদ দেখার পর চারদিকে সুর ওঠে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সেই অমর গীতি- ‘রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশীর ঈদ’।

দুই বছর তাণ্ডব শেষে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। গত ১২ দিন করোনায় দেশে কোনো মৃত্যু নেই। সংক্রমণও নেমে এসেছে ১০-এর ঘরে। কাজেই এবার সবাই অনেকটা শঙ্কামুক্তভাবে পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ করতে পারছেন।

পবিত্র কোরআন নাজিল ও মাগফিরাতের মাস রমজান। এক মাস সিয়াম সাধনা শেষে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখামাত্র ছোট-বড়, ধনী-গরিব সব মুসলিমের অন্তরে বইয়ে যায় আনন্দের ফল্গুধারা। ঘরে ঘরে শুরু হয় ঈদের দিনের জন্য নানা প্রস্তুতি। ফিরনি-পায়েস, সেমাইমহ নানা সুস্বাদু খাবার তৈরির আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন বাড়ির নারীরা। কিশোরী-তরুণীরা হাত রাঙাতে বসে মেহেদি নিয়ে। প্রায় সবার ঘরে নতুন পোশাকের সুবাস।

আজ ঈদের দিন সকালে ধনী-গরিবনির্বিশেষে সবার গন্তব্য ছিল ঈদ জামাত। ঈদের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় শেষে কোলাকুলি ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যমে ঘোষিত হয় সৌভ্রাতৃত্ব, ঐক্য ও মানবতার জয়গান। এরপর ঘরে ঘরে সেমাই-ফিরনি-পায়েসে আপ্যায়ন। ম-ম চারপাশ। প্রতিবেশী-বন্ধু, আত্মীয় বাড়ি ছুটছে ছোট-বড় সবাই। বড়দের কাছ থেকে ঈদের সেলামি পাওয়ার আনন্দ ছেলেমেয়েদের চোখেমুখে।

প্রিয় নবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর মদিনাতে হিজরতের অব্যবহিত পর সংযম আর আনন্দের প্রতীক পবিত্র মাহে রমজান ও ঈদুল ফিতর উৎসব শুরু হয়। সৃষ্টি হয় সংযম আর সম্প্রীতির বৈষম্যমুক্ত এক নতুন মূল্যবোধের।

বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়া এবং পরে কর্মস্থলে ফেরা সব সময় বিড়ম্বনার। গত দুই বছর করোনার কারণে নানা বিধিনিষেধের মধ্যেও মানুষ বাড়িমুখো হয়েছে। মাইক্রোবাস-ট্রাক-লরি-মোটরসাইকেল যে যেভাবে সম্ভব বাড়ির পানে ছুটেছেন। এবার ট্রেন, বাস, লঞ্চ সবই চলছে করোনার আগের স্বাভাবিক সময়ের মতো। তাই আশঙ্কা ছিল পথে পথে ভোগান্তির। যানবাহন পাওয়া নিয়েও ছিল শঙ্কা। কিন্তু মহাসড়কের কোথাও কোথাও দীর্ঘ যানজট ছাড়া বড় কোনো ভোগান্তির খবর পাওয়া যায়নি। বরং সব আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে এবার স্বস্তির ছিল ঈদযাত্রা। এ জন্য সব কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।

একই সঙ্গে সাধুবাদ জানাই বাড়ি ফেরা সবাইকে, তারা এবার ঈদের ছুটিতে একসঙ্গে বাড়ি ছোটেননি। করোনার আগে স্বাভাবিক সময়ে ঈদযাত্রায় পথে পথে কী ভয়াবহ ভোগান্তি মানুষ পোহায়েছে, তা তারা দেখেছেন এমনকি নিজেরাও এর শিকার হয়েছেন। দুই বছর পর এবার নতুন স্বাভাবিক সময়ে সেই ভোগান্তি ফিরে আসার শঙ্কায় অনেকে পরিবারের সদস্যদের আগেভাগে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। ফলে ঈদযাত্রায় সেই ভয়াবহ ভিড় এবার দেখা যায়নি। এমনকি পর্যাপ্ত যাত্রীর অভাবে অনেক পরিবহন দেরিতে ছেড়েছে।

এবারের ঈদযাত্রা কিছুটা নির্বিঘ্ন হওয়ায় আমরা স্বস্তি বোধ করছি। একই সঙ্গে আশা করি, স্বজন-পরিজনদের সঙ্গে আনন্দময় ঈদ শেষে সবাই নিরাপদে ফিরে যাবেন যার যার কর্মস্থলে।

একটি বিষয় সব সময় খবর হয়। ঈদের ছুটিতে বিভিন্ন স্থানে তালাবদ্ধ বাসাবাড়িতে চুরি সংঘটিত হয়। এ ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সতর্ক থাকতে হবে। যারা ঈদের ছুটিতে বাড়ি গেছেন, আশা করি তারা ঘরের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেেছন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তো আছেই, প্রতিবেশীরা যেন খেয়াল রাখেন বাড়ি যাওয়া লোকজনের তালাবদ্ধ ঘরের দিকে।

পবিত্র ঈদুল ফিতর সবার জন্য আনন্দময় হোক।। আমাদের পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা, এজেন্ট, শুভানুধ্যায়ীসহ সবাইকে জানাই ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।

লেখক: সম্পাদক, দৈনিক ঢাকা টাইমস, ঢাকাটাইমস২৪.কম ও সাপ্তাহিক এই সময়।

(ঢাকাটাইমস/৩মে/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজপাট বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা