হাইমচরে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতিকে ‘হত্যার চেষ্টা’

অনলাইন ডেস্ক
| আপডেট : ০৪ মে ২০২২, ১৫:১৪ | প্রকাশিত : ০৪ মে ২০২২, ১৫:০৪

চাঁদপুর জেলার হাইমচর উপজেলার সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সদস্য ফখরুদ্দিন আলী আহমেদকে কুপিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ৩০ এপ্রিলের এ ঘটনায় ২ মে চাঁদপুর সদর মডেল থানায় মামলা করেছেন ফখরুদ্দিনের ছোট ভাই গিয়াস উদ্দিন।

আসামিরা হলেন- চাঁদপুর সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী বেপারী (৪৮), মো. সাইফুদ্দিন বাবু (৪৮), চাঁদপুর জেলা যুবলীগে যুগ্ম আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান, চাঁদপুর পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রবিন পাটওয়ারী(৩৫), আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জে আর ওয়াদুদ টিপুর অনুসারী, মো. ইউসুফ গাজী মুন্না (২৫), জেলা ছাত্রলীগের নেতা সরোয়ার হোসেন(২০)।

বাকি ৪০ জনকে অজ্ঞাত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

হামলাকারীরা স্থানীয় ভূমিদস্যু বলেও অভিযোগ করেছেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় লোকজন মুখ খুলতে ভয় পায়।

এজাহার থেকে জানা গেছে, চাঁদপুরের ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় জেলা প্রসাশক অঞ্জনা খান মজলিশকে অভিনন্দন জানিয়ে গত ২৮ এপ্রিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন ফখরুদ্দিন আলী আহমেদ। ঐদিন বিকেল সাড়ে ৫টায় চাঁদপুর জোড়পুকুর পাড়ে ফখরুদ্দিন আলী আহমেদকে একা পেয়ে আসামিরা অতর্কিতে হামলা করে ধারালো রানদা দিয়ে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে।

চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন এসে আশংকাজনক অবস্থায় ফখরুদ্দিনকে উদ্ধার করে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। হামলাকারীরা পালিয়ে যাওয়ার সময় অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন এবং হুমকি দিয়ে বলেন, যারা জেলা প্রশাসকের পক্ষ হয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেবে ও অভিনন্দন জানাবে তাদের পরিবারকে নিঃস্ব করে দেয়া হবে।’

হামলার শিকার ফখরুদ্দিন আলী আহমেদের ছোট ভাই মামলার বাদী গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘ভাইকে খুব খারাপ অবস্থায় চাঁদুপর সদর হাসপাতালে ভর্তি করি। সেখানে গিয়েও অভিযুক্তরা চিকিৎসা বন্ধ করতে পাঁয়তারা শুরু করে। পরে নিরাপত্তার জন্য হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ফখরুদ্দিনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন।

গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘১নং আসামি শিক্ষামন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে প্রভাব খাটায়। বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত হচ্ছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে লোকজন মুখ খুলতে ভয় পায়।’

হাইমচরে আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের কর্মী ও ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ফখরুদ্দিন আলী আহমেদের ওপর হামলার ঘটনায় নেতাকর্মীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় নেতাকর্মীরা এ ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছেন। অভিযুক্তদের বিচার চেয়ে মানববন্ধনও করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।

মানববন্ধনে অংশ নেন হাইমচর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান, সদস্য আ. খালেক আখন,বিল্লাল বেপারী,হাইমচর উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো.শাহ আলম পাটোয়ারী,হাইমচর সরকারি ডিগ্রী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেল মিয়া,সাধারণ সম্পাদক মামুন হোসেনসহ স্থানীয়রা।

চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাসির উদ্দীন আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, ‘ফখরুদ্দিন আলী আহমেদ হাইমচর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি ছিলেন। তিনি একজন সৎ,নিষ্ঠাবান ও আওয়ামী লীগের নিবেদিত কর্মী। খাসজমি দখলদারদের বিরুদ্ধে ডিসি মামলা করেছে। ডিসিকে সমর্থন করে একটা পোস্ট দেয়ায় তার ওপরে হামলা হয়েছে। তার প্রাণনাশের চেষ্টা করা হয়েছিল। এখন তিনি ঢাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এবিষয় মামলা করা হয়েছে। রক্তাত অবস্থায় লোকজন এসে তাকে উদ্ধার করেছে। যেভাবে তাকে আঘাত করা হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।’

হামলার নিন্দা জানিয়ে চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটোয়ারী দুলাল বলেন, ‘হামলাকারীদের পেছনের ইতিহাস কি, তাদের বাবা-মা কি করে, দুঃসময়ে তাদের অবদান কি, মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের পরিবারের ভূমিকা কি ছিল- আমরা সবই জানি। আজকে যে ছেলেটা আহত হয়েছে সে জন্মের পর থেকেই আওয়ামী লীগ করে। আওয়ামী লীগের জন্য জেল খেটেছে, জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। দোষীদের অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। দ্রুত এদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নিলে এ অন্যায়ের প্রতিকার না হলে সমাজে অন্যায় দুর্নীতি-ভূমিদস্যুতা, দলের নেতাকর্মীদের উপর হামলা আরও বাড়বে।’

মামলার এক নম্বর আসামি আয়ুব আলী বেপারি বলেন, ‘আমি ঘটনার দিন ছিলাম না। আমাকে এক নম্বর আসামি করেছে।’

জড়িত না থাকলে কেন আপনাকে এক নম্বর আসামি করেছে এর কোনো প্রতিকার চেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না,আমি জড়িত না’।

এই কথা বলে তড়িঘড়ি করে মোবাইল ফোন রেখে দেন।

মামলার বিষয়ে চাঁদপুর সদর উপজেলার ওসি আব্দুর রশীদ বলেন, ‘ফখরুদ্দিন আলী আহমেদের হামলার ঘটনায় ছয় জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমরা আসামিদেরকে গ্রেফতার করার জন্য চেষ্টা করছি।’

হামলাকারীরা ভূমিদস্যু বলে অভিযোগ আছে- এ প্রশ্নের উত্তরে ওসি বলেন, ‘আমাদের কাছে এমন কোনো অভিযোগ নেই। মূলত ফেসবুকে পোস্ট দেয়াকে কেন্দ্র করেই হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে আমরা জানতে পেরেছি।’

জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, ‘ফখরুদ্দিনের ওপর হামলার ঘটনাটি শুনেছি। পুলিশকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/০৪মে/এফএ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :