মুজিবুল ও সুজনের যেখানে হুবহু মিল

প্রকাশ | ০৮ মে ২০২২, ১৫:০২ | আপডেট: ০৮ মে ২০২২, ১৮:১৫

হাবিবুল্লাহ ফাহাদ, ঢাকাটাইমস

বিরল, কিন্তু মিল আছে ঘটনায়। নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হয়েছেন তাঁরা। দুজনই হয়েছেন রেলমন্ত্রী। বিয়েও করেছেন তাঁরা মন্ত্রী থাকাকালে। চড়েছেন নতুন জীবনের রেলগাড়িতে। একজনের প্রথমবার। অন্যজনের দ্বিতীয়বার। দুজনই বিয়ে করেছেন তাঁদের বয়স পয়ষট্টি পার হলে। আরও বিস্ময়কর হচ্ছে, দুজনেরই সহধর্মিণী আইনজীবী। বলছিলাম সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক এবং হালফিলের রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের কথা। 

প্রায় সাত দশকের কৌমার্য ধরে রাখা মুজিবুল হক প্রথমবারের মতো বিয়ের পিঁড়িতে বসেন, বয়স যখন তাঁর সাতষট্টি। তখন তিনি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। দিনটি ছিল ২০১৪ সালের ৩১ অক্টোবর। কনে নিজ জেলা কুমিল্লার চান্দিনার হনুফা আক্তার। পেশায় আইনজীবী। বেশ ঘটা করেই হয়েছিল তাদের বিয়ের আয়োজন। গায়ে হলুদ, বিয়ে, বৌভাত, বর-বধূ বরণ-কোনো কিছুরই কমতি ছিল না। কুমিল্লা ও ঢাকা দুই জায়গাতেই হয়েছিল অনুষ্ঠান। বর-কনের রঙিন ছবি এখনো অম্লান।   

নূরুল ইসলাম সুজন দ্বিতীয়বার বিয়ে করেছেন খুব বেশিদিন হয়নি। প্রায় এক বছর হতে চলল। তার প্রথম স্ত্রী নিলুফার জাহান মারা যান ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে। ঠিক একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ মুহূর্তে। কার্যত নিঃসঙ্গ সুজন নতুন করে গাঁটছড়া বাঁধেন ২০২১ সালের ৫ জুন। তখন তাঁর বয়স পয়ষট্টি কনে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার মেয়ে শাম্মী আকতার মনি। তিনিও পেশায় আইনজীবী। তবে তাদের বিয়ের আয়োজন খুব ঘটা করে হয়নি। অনেকটা ঘরোয়া পরিবেশেই হয়েছে বিয়ে। অবশ্য নতুন বরকে বরণ করতে দিনাজপুরে প্রস্তুতি ছিল কনে পক্ষের।    

সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের বিয়ের বিষয়টি আলোচিত হয়েছিল বেশ।  গণমাধ্যমেও বিয়ের পূর্বাপর খবর ছিল যথারীতি। বার্ধ্যকের দুয়ারে পা ফেলা মন্ত্রী হঠাৎ বিয়ের পিড়িতে বসছেন, তাও প্রথমবারের মতো বিষয়টি নজর কেড়েছিল সবার। বিয়ের পর সন্তানেরও মুখ দেখেছেন মুজিবুল-হনুফা দম্পতি। ২০১৬ সালের ২৮ মে মুজিবুল-হনুফা দম্পতির প্রথম কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। প্রথম সন্তান জন্মের বছর দুই পর আবার বাবা হন মুজিবুল হক। এবার যমজ পুত্র তাদের ঘর আলো করে। দিনটি ছিল ২০১৮ সালের ১৪ মে। তখনো তিনি রেলমন্ত্রী। 

নূরুল ইসলাম সুজন-নিলুফার জাহান দম্পতির আছে এক ছেলে ও দুই মেয়ে। তিন সন্তানেরই বিয়ে হয়েছে। অন্যদিকে শাম্মী আকতার মনির ইতোপূর্বে বিয়ে হলেও ২০১১ সালে তাদের বিচ্ছেদ হয়। তার প্রথম পক্ষের একটি মেয়ে রয়েছে। শাম্মীর বাবা আব্দুর রহিম বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে (পিডিবি) চাকরির সুবাদে ১৯৮২ সাল থেকে সপরিবারে দিনাজপুরের বিরামপুরে বসবাস করছিলেন। এর আগে পাবনায় বসবাস করতেন তারা

হঠাৎ ‘বিব্রত’ রেলমন্ত্রী:

বিনা টিকিটে তিন আত্মীয়র রেল ভ্রমণ নিয়ে দুদিন ধরে বেশ বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। প্রথমে ওই তিনজন তার ‘আত্মীয় নয়’ দাবি করলেও শেষরক্ষা হয়নি। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, ওই তিন যাত্রীকে জরিমানা করায় মন্ত্রীর সহধর্মিণীর চাপে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনের এক টিটিইকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। এনিয়ে যে তিনি এতটা বিব্রত হবেন, তা ভাবতেও পারেননি হয়তো। শেষে বরাখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করেছেন রবিবার দুপুরে। 

মুজিবুল বললেন, ‘আমি চুপ’:

হালফিল রেলমন্ত্রীর এমন বিপদ। কী ভাবছেন সাবেক রেলমন্ত্রী? শনিবার কথা হয় মুজিবুল হকের সঙ্গে। ফোন ধরতেই বোঝা গেল বেশ ব্যস্ত আছেন সন্তানদের নিয়ে। ব্যস্ত গলায় বললেন, ‘কী বলবেন, বলেন।’

রেলমন্ত্রীর আত্মীয়দের কাণ্ডের বিষয়টি তুলতেই কুমিল্লার (চৌদ্দগ্রাম) এই সংসদ সদস্য বললেন, ‘আমি এ ব্যাপারে চুপি আছি। কিছু বলব না।’

রেলে বিনা টিকিটে ভ্রমণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ায় টিটিইকে সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন? জবাবে সোজাসাপ্টা, ‘যা বলার আপনারা বলেন। আমি কিছু বলব না।’

কেমন আছেন পরিবারের সদস্যরা? এবার একটু হেসে বললেন, ‘আছে, সবাই ভালো আছে। দোয়া করবেন।’

চারবারের সাংসদ মুজিবুল হক:

১৯৪৭ সালের ৩১ মে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের বসুয়ারা গ্রামে মো. মুজিবুল হক জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯৬, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে তিনি চৌদ্দগ্রাম থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে তিনি রেলপথমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

তিনবারের সাংসদ সুজন :

নূরুল ইসলাম সুজন ১৯৫৬ সালের ৫ জানুয়ারি পঞ্চগড়ে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি পঞ্চগড়-২ (বোদা-দেবীগঞ্জ) আসন থেকে নবম, দশম এবং একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে তৃতীয়বার সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর রেলমন্ত্রী হিসেবে সরকারের মন্ত্রিসভায় আসেন তিনি।

(ঢাকাটাইমস/ ৮ মে/ এইচএফ/আরকেএইচ)