পাঁচ মাস হাসপাতালে সেই নারী সার্জেন্টের বাবা, মামলা কূল পায়নি এখনো

প্রকাশ | ০৯ মে ২০২২, ১১:১৪

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস

এক বিচারপতির ছেলের প্রাইভেটকারের চাপায় রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে গুরুতর আহত হন পুলিশের সার্জেন্ট মহুয়া হাজংয়ের বাবা মনোরঞ্জন হাজং। পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে হাসপাতলে ভর্তি তিনি। বর্তমানে রাজধানীর রাজারবাগে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এখনো একটি পায়ে কোনো শক্তি পাচ্ছেন না এবং কিছু ফ্যাকচার আছে। আগামী সপ্তাহে তার পায়ে অপারেশনের কথা রয়েছে।

এদিকে দুর্ঘটনার দুই সপ্তাহ পর রাজধানীর বনানী থানায় মামলা করতে পেরেছিলেন মহুয়া। মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তদন্তে বেশ অগ্রগতি আছে বলছে সংস্থাটি। একাধিকবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন, ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। মেডিকেল থেকে এখনো ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট পাওয়া যায়নি; সেটি পেলে তদন্ত আরো গুছিয়ে আসবে।

 

মামলা নিয়ে কেন নাটকীয়তা

গত বছরের ২ ডিসেম্বর রাত সোয়া দুইটায় রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের চেয়ারম্যান বাড়ি ইউটার্নে দ্রুতগতির গাড়ির ধাক্কায় গুরুতর আহত হন বিজিবির সাবেক হাবিলদার মনোরঞ্জন হাজং। তিনি ২০০৪ সালে বিজিবি থেকে অবসরে যাওয়ার পর বনানীর একটি বেসরকারি নিরাপত্তা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানে সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

দুর্ঘটনার পরদিন জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে অস্ত্রোপচার হয় মনোরঞ্জনের। এ সময় তার ডান পায়ের গোড়ালির নিচের অংশ কেটে ফেলা হয়। ৮ ডিসেম্বর সংক্রমণের কারণে দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রোপচার করে ডান পায়ের হাঁটুর নিচ থেকেও কেটে ফেলা হয়। পরে ঊরু থেকে পুরো পা কেটে ফেলার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। এ সময় তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ঘটনার পর মামলা করার জন্য কয়েক দফা চেষ্টা করেন মনোরঞ্জনের মেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ ট্রাফিক জোনে কর্মরত নারী সার্জেন্ট মহুয়া হাজং। একাধিক থানায় গেলেও পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করে। পরে দুই সপ্তাহ পর ১৬ ডিসেম্বর অভিযুক্তদের নাম ছাড়াই মামলা নেওয়া হয়। কারণ হিসেবে পুলিশ দাবি করে, তারা (পুলিশ) জানে না কে তার বাবাকে গাড়িচাপা দিয়েছে। তাছাড়া তখন বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই দুর্ঘটনার পর প্রাইভেটকারের চালক যুবককে আটক করেও ছেড়ে দেয় পুলিশ। সেই যুবক একজন বিচারপতির ছেলে। তবে তার নাম প্রকাশ পায়নি।

মামলার এজাহারে মহুয়া হাজং অভিযোগ করেছিলেন, ঢাকা মেট্রো ঘ–১৫–৪৯০৬ নম্বরের ব্যক্তিগত গাড়ির চালক অপর দুই সহযোগীর কথায় বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে তার বাবার মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। এতে বাবার ডান পায়ের হাঁটুর নিচে গুরুতর জখমসহ হাড় ও মাংস থেঁতলে যায়। বাঁ পায়ের ঊরুর হাড় ভেঙে যায়।

ঢাকা টাইমসকে তখন মহুয়া বলেন, ‘চালকসহ দুজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় পুলিশই তার বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করে। অথচ পরে কিছু না জানিয়ে থানা থেকে ব্যক্তিগত গাড়িসহ আটক ব্যক্তিদের ছেড়ে দেওয়া হয়।’

 

এখন কেমন আছেন মনোরঞ্জন

গুরুতর আহত মনোরঞ্জন আগে থেকেই হার্টের ও ডায়াবেটিসের রোগী ছিলেন। হাসপাতালের বিছানায় তিনি দুর্ঘটনার ধকল নিতে পারছেন না। একাধিকবার  আইসিইউতে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। বারডেমে চিকিৎসাধীন ছিলেন বেশ কিছু দিন। পরে তাকে রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

মহুয়া হাজং ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বর্তমানে তার বাবা পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। সামনের সপ্তাহে পায়ে একটা অপারেশন হবে, এজন্য তাকে বারডেমে নিতে হবে। শারীরিক অবস্থা আগের মতোই আছে, তেমন উন্নতি নেই। তবে খাওয়া-দাওয়া করতে পারছেন।’

চিকিৎসার ব্যয় কীভাবে মেটাচ্ছেন জানতে চাইলে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ডিএমপি কমিশনার মহোদয় (মোহা. শফিকুল ইসলাম) চিকিৎসার জন্য আট লাখ ৪২ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। বাবা যেখানে চাকরি করতেন সেখান থেকেও সহযোগিতা করা হয়েছে। তাছাড়া আমার চাকরির সুবাধে পুলিশ হাসপাতাল থেকে অনেক সুবিধা পাচ্ছি।’

মামলার অগ্রগতি কত দূর জানতে চাইলে মহুয়া বলেন, ‘পিবিআইয়ের একজন ইন্সপেক্টর স্যার তা তদন্ত করছেন। তিনি ঈদের আগে হাসপাতালে এসে বাবার সঙ্গে কথা বলে গেছেন।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর নাসির উদ্দিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘তদন্ত চলছে। অনেক কাজ বাকি রয়েছে। তাছাড়া নিটোর (জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান) থেকে কিছু কাগজপত্র চাওয়া হয়েছে, সেগুলো এখনো পাওয়া যায়নি। কাগজ পাওয়া গেলে মামলার অগ্রগতি আরও বাড়বে।’

(ঢাকাটাইমস/৯মে/এসএস/মোআ)