তারা অন্যের সাফল্যে ঈর্ষান্বিত

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৯ মে ২০২২, ২০:৫৫

মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম। ছোটবেলা থেকেই বেড়ে ওঠা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। যখন মানুষের ব্যাট-বল নিয়ে খেলতে যাওয়া কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার কথা, তখন আমি বুঁদ হই ভিন্ন কিছু করার। ৯৬ তে ছাপার হরফে লেখা প্রকাশের পর, ২০০১ সাল থেকে যুক্ত হই সাংবাদিকতায়। এখন ২০২২, চলছে এখনও।

এর ভেতর বাসায় বাসায় টিউশনি থেকে শুরু করে পড়িয়েছি কোচিং সেন্টারেও। শুধুমাত্র টিকে থাকার জন্য। পকেটে ২ টাকা নিয়ে ঘুরেছি। মাইলের পর মাইল হেঁটেছি, তবুও এক গ্লাস পানি কিনে খাইনি। খাওয়ার সাহস হয়নি। কারণ, সব সময় চেয়েছি আমার কষ্টের বিনিময়ে পরিবারের মুখে হাসি ফুটুক। এজন্য বিলাসিতা করে কখনও নিজের জন্য কিছু করিনি। বছরের পর বছর এক স্যান্ডেল পরে কাটিয়েছি। ভেবেছি, পথশিশুদের তো এটাও নেই। বয়স বেড়ে যাওয়া হাতঘড়ি আর হারকিউলিস ক্যাপ্টেন সাইকেলের দিকে তাকিয়ে বলেছি, তোদেরকে ধন্যবাদ এতোদিন আমার সঙ্গে থাকার জন্য। কি ভাবছেন, মনগড়া গল্প লিখছি? মোটেই নয়।

আচ্ছা, আপনার কখনও নারিকেলের আইসক্রিম, কাঠি লজেন্স কিংবা হাওয়াই মিঠে খেতে ইচ্ছে করেছে? ইচ্ছে করেছে নদীর পাড় ধরে হেঁটে বেড়াতে, ঘুড়ি উড়াতে? বাদ দিন, এসব কেন আপনাকে বলছি? কেনই বা বলছি টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে গানের ক্যাসেট কেনার গল্প? সরি সরি, বড্ড নস্টালজিক হয়ে গিয়েছিলাম। এ কারণে গরুর গাড়িতে বসে নায়ক-নায়িকাদের ভিউ কার্ড দেখার কথা বলছিলাম। শুক্রবার এলেই বাঁশের এ্যান্টেনা ঘুরিয়ে বিটিভিতে সাদাকালো সিনেমা দেখা কিংবা রেডিওতে গানের অনুরোধের আসরের কথা বলছিলাম। চলুন বাদ দিই, যা বলছিলাম আর কি।

ক্যারিয়ারের এই স্বল্পদৈর্ঘ্য পথচলায়, আমি পেরিয়েছি নানান চড়াই-উৎরাই। বয়ে গেছে আমার এবং আমার পরিবারের উপর দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রার কালবৈশাখী ঝড়। তবুও হাল ছাড়িনি, দমে যাইনি। জানি আজ নয়তো কাল, কাঙ্খিত গন্তব্যে আমি পৌঁছবোই পৌঁছবো ইনশাআল্লাহ। নিজের অকৃত্রিম চেষ্টা, বাবা-মায়ের দোয়া আর শুভাকাঙ্ক্ষীদের অনুপ্রেরণায় নিন্দুকের মুখে ছাই দিয়ে প্রমাণ করে দেব, চেটে নয় খেটেই বড় হওয়া যায়। মামা-খালু না থাকলেও হওয়া যায়।

আর হ্যাঁ আরেকটা কথা, যারা নিজের থেকে আমাকে নিয়ে বেশি ভাবেন, সমালোচনায় মুখর থাকেন। তাদের জন্য দোয়া ও ভালোবাসা। কারণ, আপনি আমাকে নিয়ে ভাবছেন মানেই আমি এক পা-দু'পা করে লক্ষ্যে পৌঁছে যাচ্ছি। পক্ষান্তরে নিজের চরকায় তেল না দেওয়ায় ক্রমশই পিছিয়ে পড়ছেন আপনি এবং আপনারা।

ফাঁপা প্রজন্মের এই একটাই দোষ জানেন তো? তারা সবকিছুই সহজে পেতে চায়, অর্জন করতে চায় না। পাশাপাশি তারা অন্যের সাফল্যে জোনাকির মতো জ্বলে, লুচির মতো ফোলে। আর ভাবে, ওরা তো কেরোসিনের আলোয় কুপি জ্বালিয়ে বড় হয়েছে, মার্বেল-ডাংগুলির পাশাপাশি সুপারির পাতাকে বাহন হিসেবে খেলেছে, তাহলে ওরা কেন এতো এগিয়ে থাকবে?

আরে বাবা, ষড়যন্ত্র কিংবা শর্টকাট নয়, পরিশ্রমই সাফল্যের চাবিকাঠি। এটা মনে রাখুন। দেখবেন ভুলগুলো সব ফুল হয়ে গেছে।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী ও গীতিকার

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :