আগস্টে খুলছে সুনামগঞ্জের মানুষের স্বপ্নের সেতু

মো. মুন্না মিয়া, সিলেট
 | প্রকাশিত : ১২ মে ২০২২, ০৮:২৬

সুনামগঞ্জের মানুষের স্বপ্নের রাণীগঞ্জ সেতুর কাজ আগামী জুন মাসেই সম্পন্ন হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ৯৬ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। পুরো কাজ শেষ হলেও আগস্টে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে সিলেট বিভাগের সবচেয়ে দীর্ঘ এই সেতু।

আড়াই কিলোমিটারের এ সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫৫ কোটি টাকা। এ সেতু দিয়ে যানচলাচল করলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সুনামগঞ্জের দূরত্ব প্রায় ২ ঘণ্টা কমে আসবে। এতে দুর্ভোগ কমবে সুনামগঞ্জ জেলাবাসীর।

সেতুটি নির্মাণের জন্য পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ঢাকাটাইমসকে বলেন, সুনামগঞ্জে জেলাবাসীর জন্য এটি ‘পদ্মা সেতু’। এই সেতুর উদ্বোধন হলে সমগ্র জেলাবাসীর অর্থ বাঁচবে, সময়, ও দুর্ভোগ কমবে। আমরা দ্রুত রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারব।

মন্ত্রী বলেন, জুনে সেতু কাজ শেষ হবে জেনে আমি আনন্দিত ও উৎপুল্ল। আশাকরি, জেলাবাসী অনেকটাই উপকৃত হবেন। এজন্য আমি প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা না পেলে আমি এতোবড় একটি প্রকল্প কাজ সম্পন্ন হতো না।

পরিকল্পনা মন্ত্রী জানান, সুনামগঞ্জের আরও বেশ কয়েকটি বড় বড় প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। যথাসময়ে এসব প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে।

স্থানীয়রা জানান, বর্তমানে কুশিয়ারা নদী পারাপারের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে নৌযান। সুনামগঞ্জ জেলাবাসীর দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে ২০১৫ সালে রাণীগঞ্জে ফেরির কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন তৎকালীন অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। বর্তমানে ফেরি ও খেয়া নৌকা দিয়ে পারাপার হচ্ছেন জেলার লক্ষাধিক জনগণ। এ দুই মাধ্যমে যানবাহন ও সাধারণ মানুষরা রাজধানী ঢাকার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন। এ সেতুটি চালু হলে দুই পাড়ের মানুষের ভোগান্তি অনেকটাই কমে আসবে এবং ঢাকার সাথে সুনামগঞ্জ, জগন্নাথপুরের কয়েক লাখ মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ হবে। এতে বাঁচবে সময়ও।

জানা যায়, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রয়াত আবদুস সামাদ আজাদ ঢাকার সাথে সুনামগঞ্জের মানুষের যোগাযোগের সময় কমিয়ে আনার জন্য দক্ষিণ সুনামগঞ্জ বর্তমানে শান্তিগঞ্জ উপজেলার ডাবর পয়েন্ট হতে জগন্নাথপুর-রানীগঞ্জ-আউশকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ করেন। কিন্তু মহাসড়ক নির্মাণ করলেও ওই সময়ে কুশিয়ারা নদীর উপর রাণীগঞ্জ সেতু নির্মাণ ও ফেরি কার্যক্রম শুরু সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে ২০০১ সালে চার দলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় গেলে থমকে যায়, এসব উন্নয়ন কাজ। বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন ২০০৫ সালের ২৭ এপ্রিল আবদুস সামাদ আজাদের মৃত্যু হলে ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে সুনামগঞ্জ-৩ আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হয়ে বিপুল ভোটে সাংসদ নির্বাচিত হন সজ্জ্বন রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।

এমএ মান্নান সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর প্রয়াত জাতীয় নেতা আবদুস সামাদ আজাদের অসমাপ্ত কাজ দ্রুত বাস্তবায়নে এগিয়ে আসেন। জগন্নাথপুর-শান্তিগঞ্জ তথা সুনামগঞ্জের মানুষকে আশার আলো দেখাতে থাকেন। এই ধারাবাহিকতায় সজ্জন এ রাজনীতিবিদের প্রাণপন প্রচেষ্টায় ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে ১৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সুনামগঞ্জ জেলাবাসীর স্বপ্নের রাণীগঞ্জ সেতুর নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে। সেতুটির নির্মাণ কাজ পায় মেসার্স এমএম বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড নামে এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

অ্যাপ্রোচ সড়কসহ সেতুটির দৈর্ঘ্য আড়াই কিলোমিটার হলেও মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৭০২.৩২ মিটার ও প্রস্ত ১০.২৫ মিটার। মূল সেতুর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৯১ কোটি টাকা। বাকি ব্যয় ধরা হয়েছে অ্যাপ্রোচ সড়ক, টোলপ্লাজা, কালভার্ট ও স্থানীয় ইটাখলা নদীর উপর আরেকটি ছোট সেতু নির্মাণে। ইতোমধ্যে মূল সেতুর ৯৬ ভাগ কাজ শেষ হয়ে গেছে।

টেকসই উন্নতমানের সেতুর কাজ দ্রুত শেষ করতে কয়েক দফা সেতুটি পরিদর্শনসহ সব সময় খোঁজ খবর রাখছেন স্থানীয় সাংসদ পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। চলতি বছরের জুন নাগাদ সেতুটির কাজ শেষ হবে। ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে জগন্নাথপুর তথা সুনামগঞ্জের দূরত্ব কমানোর লক্ষ্যে ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ডাবর-জগন্নাথপুর-আউশকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কের প্রশস্তকরণ ও ড্রেনেজসহ ২২ কিলোমিটার সড়ক পুননির্মাণের কাজ শেষ হয় এবং ডাবর থেকে জগন্নাথপুর অংশে পুরাতন ৭টি সেতু ভেঙে ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ৭টি সেতু নির্মাণ করা হয়।

সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য মাহতাব উল হাসান সমুজ বলেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান আমাদের জেলায় একাধিক বড় বড় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে আমাদের স্বপ্নের রাণীগঞ্জ সেতুর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী জুনে পুরো কাজ শেষ হবে। এতে হাওরবাসী খুশি ও আনন্দিত।

সুনামগঞ্জের সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম বলেন, সেতুটির ৯৬ ভাগ কাজ হয়ে গেছে। জুন মাসে সেতুটির শতভাগ কাজ সম্পন্ন হবে। তবে আনুষাঙ্গিক আরও কিছু কাজ থাকায় আগস্টে সেতুটি চালু করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/১২মে/এলএ/ডিএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

বাংলাদেশ এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :